ইউরোর গন্তব্য তাহলে রোমই!

ফুটবলের জন্ম তাঁদের পায়েই। ওয়েম্বলির ৯০ হাজার দর্শক প্রস্তুত ছিলেন ফুটবলকে আবার তাদের দেশে ফিরিয়ে আনতে, ইটস কামিং হোম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে বদলে গেল ঠিকানা, ইংল্যান্ডের বদলে ফুটবলের ঠিকানা এখন ইতালি। ওয়েম্বলিতে স্বাগতিক দর্শকদের সামনে টাইব্রেকারে ইংল্যান্ডকে ৩-২ গোলে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো শিরোপা জিতলো ইতালি।

বার বছর পরপর বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে ইতালি। ১৯৭০, ১৯৮২, ১৯৯৪, ২০০৬ সংখ্যাগুলো তাই বলে। সেই অনুসারে ২০১৮ বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার কথা থাকলেও তাঁরা মূলপর্বেই উঠতে পারেনি। হতভম্ভ ইতালির মানুষ, কিংকর্তব্যবিমূঢ় দলকে এগিয়ে নিতে আসলেন ইতালিরই এক অভিমানি সন্তান রবার্তো মানচিনি।

তাঁর ছোঁয়াতেই বদলে গেল দল, ফাইনালে না উঠার আক্ষেপ সুদে-আসলে মিটিয়ে দিলেন এবারের ইউরো জিতে। ইতালি অপরাজিত টানা ৩৪ ম্যাচ ধরে, বিশ্বরেকর্ড হতে কেবল এক ম্যাচ ধরে। তবে পরিসংখ্যান নিয়ে ভাবতে এখন ইতালির বয়েই গেছে, এখন সময় শিরোপা উল্লাসের।

বুকায়ো সাকার পেনাল্টি ঠেকিয়েও কোনো উল্লাস নেই তার, কি নির্বিকারভাবেই না হেঁটে যাচ্ছিলেন। অথচ তার এক সেভে স্তব্ধ হয়ে গেছে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ। এবারের ইউরোতে খেলতে এসেছিলেন ক্লাববিহীন অবস্থায়, দারুণ পারফরম্যান্স দিলেও বেতন বাড়াতে চায়নি তার ক্লাব এসি মিলান।

তাঁর প্রতিটি সেভে যেন ফুটে উঠেছিল সেই অবজ্ঞার জবাব। চোয়ালবদ্ধ রেখে একে একে ফিরিয়েছেন টানা তিন পেনাল্টি। কেবল আজকে নয়, সেমিফাইনালে স্পেনের বিপক্ষেও জয়ের নায়ক ছিলেন তিনিই, ফিরিয়েছিলেন দুটি পেনাল্টি। তিনি জিয়ানলুইজি ডোনারুম্মা, ইতালির ৫৩ বছরের আক্ষেপ মেটানোর নায়ক।

ফেডেরিকো চিয়েসা আর ওয়েম্বলির মাঝে রয়েছে এক মধুর সম্পর্ক। এই মাঠ কখনো হতাশ করেনি তাকে, যতবার খেলতে এসেছেন দুহাত ভরে তাকে দিয়েছে এই মাঠ। আজকে অবশ্য গোল পাননি, কিন্তু যতক্ষণ মাঠে ছিলেন ততক্ষণ তিনিই ছিলেন সবার সেরা। ভুলে গেলে চলবে না দুই বর্ষীয়ান ডিফেন্ডার কিয়েল্লিনি-বনুচ্চি জুটির কথা। পিছিয়ে পড়া ইতালিকে গোল করে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন বনুচ্চিই।

পুরো ম্যাচ তো বটেই টুর্নামেন্ট জুড়েই অনবদ্য খেলেছেন এই দুই ডিফেন্ডার। কোনো ম্যাচেই ইতালির জালে বল ঢুকতে পারেনি একাধিকবার। মনে রাখতে হবে ইতালির বাম পাশের দুই ভরসা স্পিনাৎজোলা কিংবা ইনসিগনের কথাও।

ইনজুরির কারণে ম্যাচের আগেই ছিটকে যাওয়া স্পিনাৎজোলা ম্যাচ না খেলেও যেন ছিলেন সবার মাঝে, তাকে হৃদয়ে ধারণ করেই ম্যাচ খেলেছে সবাই। অন্যদিকে এবারের ইউরোতে ইতালির প্রাণভোমরা ছিলেন লরেঞ্জো ইনসিগনে। ছোটখাটো গড়নের এই জাদুকরের পায়েই দানা বেঁধেছে ইতালির সব আক্রমণ।

‘সকালের সূর্য নাকি দিনের আভাস দেয়’ এই প্রবাদ মানলে আজকের দিনের জয়ী দলের নাম হওয়ার কথা ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় মিনিটেই ইউরোর ইতিহাসে ফাইনালে দ্রুততম গোল করে নিজের জন্মদিন রাঙিয়ে দিয়েছিলেন লুক শ। ওয়েম্বলিতে উপস্থিত ৯০ হাজার দর্শকের চিৎকারে তখন কান পাতা দায়।

কিন্তু, ম্যাচ শেষে সেই উল্লাস হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। ১৯৯৬ ইউরোতে ওয়েম্বলিতেই পেনাল্টি মিস করে দলকে ডুবিয়েছিলেন খেলোয়াড় গ্যারেথ সাউথগেট। এবার কারা পেনাল্টি নিবে সেটা ঠিক করতে গড়মিল করে হাতছোঁয়া দূরত্বে থেকে শিরোপা হারালেন কোচ সাউথগেট।

তিন বছর আগে সবাই ধরে নিয়েছিল ধ্বংস হয়ে গেছে ইতালির ফুটবল। সেই ধ্বংসস্তুপ থেকে ফিনিক্স পাখির ন্যায় ঘুরে দাঁড়ানোর রূপকথা লিখলেন মানচিনি এবং তার শিষ্যরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link