ইনজুরিতেও জাকিরের ভরসা কোচ সালাউদ্দিন

‘জাকির ফিট থাকলে, জাকির ওপেন করতো’ – আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট জয়ের পর ঠিক এমন কথাই বলেছিলেন টেস্ট অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। এতটাই মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন জাকির। এতটাই আস্থা জুগিয়েছেন তিনি। তরুণ এই ব্যাটারের বন্দনা যেন সর্বত্র। তাইতো তাকে কাছে টেনে নিয়েছেন দেশ সেরা কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিনও।

জাকির হাসান বাংলাদেশ ক্রিকেটে সম্ভাবনার দুয়ার খুলে উঁকি দিচ্ছেন। একদিন টাইগার ক্রিকেটের কাণ্ডারি হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করছেন। ব্যাট হাতে সামর্থ্য, সম্ভাবনা আর প্রতিভার প্রতিফলন দেখানোর প্রচেষ্টা করে যাচ্ছেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করেই তবে প্রাপ্ত স্থানটুকু তিনি অর্জন করেছেন।

শুরুটা সেই ২০১৮ সালে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট দিয়ে। তবে শুরুতেই ছিটকে যাওয়া। একটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেই খানিকটা বিরতি তাঁর ক্যারিয়ারে। এরপর তিনি ফিরলেন। ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রাচীনতম ফরম্যাটে অভিষেক হয় তাঁর।

আর সাদা পোশাকে শীতল শুভ্রতা ছড়িয়ে দিয়েছেন। ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টেই শতক। সেখানেই ঠিক তাঁর ক্যালিবার ফুটে ওঠে। সেবার পূর্ণ শক্তির ভারত দলের বিপক্ষেই শতক হাঁকিয়েছেন প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে।

ধারাবাহিকতা তিনি বজায় রেখেছেন দ্বিতীয় টেস্টেও। সেখানেও দ্বিতীয় ইনিংসে করেছিলেন ফিফটি। তবে এর আগে সিলেট স্ট্রাইকার্সের হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে। নিজের উত্থানের পথেই খানিকটা হোঁচট খেয়ে পিছিয়ে গেছেন জাকির। জাতীয় দলের হয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটেও খেলার হাতছানি ছিল তাঁর সামনে। তবে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সে সিরিজের আগেই চোটের কারণে ছিটকে যান তিনি।

বাঁ-হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলির ইনজুরির কারণে আয়ারল্যান্ড সিরিজে তিনি ছিলেন অনুপস্থিত। রিহ্যাবের মধ্য দিয়ে যাওয়া জাকির মিরপুর হোম অব ক্রিকেটে অল্প-স্বল্প অনুশীলনে নিজের জড়তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা শুরু করেছেন। ঠিক সে সময়ে তাঁর সাথে দেখা হয়ে যায় কোচ সালাউদ্দিনের। কাছে ডেকে নিলেন তাঁকে।

প্রাইম ব্যাংকের অনুশীলন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন সালাউদ্দিন। সে ব্যস্ততা রেখেই তিনি গল্পে মেতে ওঠেন জাকিরের। কাঁধে হাত রেখে খানিকক্ষণ আলাপ সেরে নিলেন। বোধহয় দেশসেরা কোচ এই কঠিন সময়টা পার করবার টোটকাই দিচ্ছিলেন উদীয়মান তারকাকে। হয়ত ভরসার হাতটাই বাড়িয়ে দিয়েছেন। বোঝানোর চেষ্টা করলেন, ইনজুরি নিত্যদিনের ঘটনা। ক্রিকেট ক্যারিয়ারে খুব কাছের বন্ধু ইনজুরি। চারিপাশটা ভাল করে চিনতে শেখায়।

দেশসেরা কোচ হিসেবে সালাউদ্দিন বেশ প্রসিদ্ধ। জাতীয় দল কিংবা এর আশেপাশে থাকা প্রতিটা খেলোয়াড় ছুটে যান সালাউদ্দিনের কাছে। অফফর্ম হোক কিংবা টেকনিকাল পরিবর্তন, সবকিছুর সমাধান যেন সালাউদ্দিন। এমনকি খোদ সাকিব আল হাসানও মাঝেমধ্যে নিজের পরিচর্যার দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন সালাউদ্দিনের কাঁধে। সে কথা নিশ্চয়ই জাকিরের অজানা নয়। তিনিও তাই বেশ খানিকক্ষণ আলাপ করলেন সালাউদ্দিনের সাথে। স্মিত এক হাসি লেগেছিল সারাক্ষণ, জাকিরের চিবুক জুড়ে।

আগামী মাসের শুরুতে ইংল্যান্ডগামী টাইগার দলে থাকছেন না জাকির। এই যে সুবর্ণ সুযোগগুলো কিন্তু হাতছাড়া হয়ে গেল। তবে জাকিরকে হতাশ না হওয়ার পরামর্শই হয়ত দিয়েছেন সালাউদ্দিন। সেই পরামর্শেই জাকির হয়ত খুঁজে নেবে নতুন সূর্যের আলো। সেই আলো প্রতিফলিত হয়ে রান ফোয়ারা হবে তাঁর উইলো, সেটাই তো প্রত্যাশিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link