স্পেশাল ওয়ানের পেছনে ছুটছে ব্রাজিল

হতাশা, হতাশা আর হতাশা। ২০০২ সালের পর থেকে হতাশাই সঙ্গী হয়েছে ব্রাজিল ফুটবলের। নিজেদের পঞ্চম বিশ্বকাপ জেতার পর কেবল একবার ব্রাজিল পেরেছে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল অবধি পৌঁছাতে। তবে সেখানেও সাথী হয়েছে দৃষ্টিকটু এক স্মৃতি। এছাড়া বিশ্বমঞ্চে বলার মত তেমন কিছুই নেই ব্রাজিলের, গত প্রায় দুই দশক ধরে।

প্রতিবারের মত ২২তম বিশ্বকাপ আসরে চ্যাম্পিয়ন হবার সম্ভাবনা নিয়েই হাজির হয়েছিল সেলেসাওরা। তবে যথারীতি ইউরোপের দলের কাছে হেরেই বিদায় ঘটে নেইমারদের। এর পেছনে কোচ তিতের দায় রয়েছে বলেও মনে করেন অনেক ফুটবল বোদ্ধা। তাইতো কোয়ার্টার ফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার কাছে হারার ঘন্টা দুয়েকের মাথায় কোচের দায়িত্ব থেকে ইস্তফা দেন সদ্য সাবেক কোচ তিতে। যদিও এর পূর্বাভাস তিনি আগেই দিয়ে রেখেছিলেন।

স্বাভাবিকভাবেই এখন ব্রাজিল জাতীয় ফুটবল দল কোচ শূন্য অবস্থানে রয়েছে। এমন এক পরিস্থিতি অবশ্য খুব বেশি দিন স্থায়ী হতে দিতে চাইবে না ব্রাজিলের ফুটবল ফেডারেশন। তেমনটা হবারও কথা নয়। ইতোমধ্যেই ব্রাজিলের পরবর্তী কোচের পদের জন্যে বেশকিছু গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। নতুন করে পর্তুগীজ কোচ হোসে মরিনহোকে ঘিরে দানা বেঁধেছে গুঞ্জন। হোসে মরিনহো ইউরোপীয় ক্লাব ফুটবলে বেশ প্রসিদ্ধ একজন কোচ। তাঁর সুনাম বা চর্চা কম হয়নি ইউরোপে।

ইউরোপ ছাপিয়ে গোটা বিশ্বেই তিনি সুপরিচিত। তাঁকে অধিকাংশ ফুটবল ভক্তরা ‘দ্য স্পেশাল ওয়ান’ বলে অভিহিত করে থাকেন। ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলানকে নিয়ে ট্রেবল জয়ের সুখস্মৃতিও রয়েছে হোসে মরিনহোর। তাছাড়া রিয়াল মাদ্রিদের মত ক্লাবেও কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। এছাড়া আরেক স্প্যানিশ জায়েন্ট বার্সেলোনার ডাগআউটে থাকার সুযোগও মিলেছে। টটেহ্যাম হটস্পার্স, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডসহ প্রসিদ্ধ সব ক্লাবে কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর।

মূলত ইতালিয়ান কোচ কার্লো আনচেলত্তিকে ব্রাজিলের পরবর্তী কোচ হিসেবে দেখা যেতে পারে, এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পরে চারিপাশে। তবে আনচেলত্তি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, রিয়াল মাদ্রিদ তাঁকে বরখাস্ত না করা অবধি তিনি মাদ্রিদেই থেকে যেতে চান। স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদের সাথে ২০২৪ পর্যন্ত চুক্তিবদ্ধ আছেন আনচেলত্তি। সেক্ষেত্রে তাঁকে ব্রাজিলের কোচের দায়িত্ব অর্পণ করবার সুযোগ নেই বললেই চলে। অগ্যতা ব্রাজিলকে অন্য বিকল্পের দিকে নজর দিতে হচ্ছে।

এদিকে ব্রাজিল তাদের চিরায়ত স্বদেশী কোচ নিয়োগের রীতি থেকে বেড়িয়ে আসতে চাইছে খুব করে। তাইতো ভিনদেশী কোচের দিকে তাঁরা বাড়িয়েছে নজর। সেদিক থেকে মরিনহো এখন পছন্দ তালিকায় সবার উপরেই রয়েছেন। তবে ব্রাজিল ছাড়াও পর্তুগালের কোচ হওয়ার একটা সুযোগ রয়েছে মরিনহোর সামনে। কেননা পর্তুগালও বর্তমানে কোচ শূন্য অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু মরিনহো এখনও ইতালিয়ান ক্লাব এএস রোমার সাথে চুক্তিবদ্ধ। ২০২৪ অবধি তাঁকে থাকতে হবে ক্লাবটির ডাগ আউটে।

এর আগে অবশ্য তিনি তাঁর দায়িত্ব থেকে সরে আসতে পারবেন না। তবে তিনি যদি চান রোমা তাঁকে বাঁধা দেবে না এমনটাও জানিয়েছেন দ্য স্পেশাল ওয়ান। তেমনটা হলে ব্রাজিলের কোচের দায়িত্ব মরিনহোকে নিয়োগ দিতে পারে সিবিএফ। কেননা বহু আগেই মরিনহো ব্রাজিলের কোচের দায়িত্ব পালনের ইচ্ছে ব্যক্ত করেছিলেন। ২০১৭ সালে তিনি যখন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের কোচ ছিলেন তখন এমনটাই মত দিয়েছিলেন তিনি।

তিনি বলেছিলেন, ‘ম্যানচেস্টার ইউনাটেডের পর আমার একটি সহজ চাকরি দরকার। ব্রাজিলকে কোচিং করানো তো আরও মুশকিল কাজ। অবশ্যই এটা দারুণ এক্সাইটিং কাজ হবে। যেকোন কোচই চায় ভাল দল ও ভাল খেলোয়াড়দের সাথে কাজ করতে। নি:সন্দেহে ব্রাজিল দল সাফল্যের পথিকৃৎ এবং প্রতিভায় পরিপূর্ণ। প্রতিটা যুগেই ব্রাজিল থেকে প্রতিভারা বেড়িয়ে আসে।’

মরিনহো তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারের গোধূলী লগ্নে রয়েছেন। এই সময় হয়ত তিনি চাইবেন তাঁর কোচিং ক্যারিয়ারে একটা আন্তর্জাতিক অর্জনের পালক যুক্ত করতে। আর সে ইচ্ছে পূরণে ব্রাজিলই হতে পারে একটা মাধ্যম। এখন সময়ই বলে দেবে, স্পেশাল ওয়ান কোথায় গিয়ে থামবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link