শিরোনাম দেখে আপনার চোখ শিউরে উঠতে পারে। ভারতীয় ক্রিকেটে নতুন অধিনায়কের বড় আকাল কথাটা হাস্যকর মনে হতে পারে। এত এত তারকা ক্রিকেটারদের ভীড়ে অধিনায়কের আকাল কথাটা ঠিক মেনে নেওয়ার মত না। তবে আইপিএল তো সেটাই বলে! সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ যেন অধিনায়ক খুঁজে পাচ্ছেন না। কারণ টানা ব্যর্থতার পরেও অধিনায়ক কোটায় দলের ওপেনিং পজিশন আকড়ে ধরে আছেন কেন উইলিয়ামসন।
অধিনায়ক হিসেবে নিউজিল্যান্ডের জার্সি গায়ে উইলিয়ামসন নিঃসন্দেহে বেশ সফল একজন। বিপরীতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) অধিনায়ক হিসেবে তিনি চরম ব্যর্থ।
আনকোরা হার্দিক পান্ডিয়া প্রথমবার নেতৃত্ব দিয়ে দলকে উঠিয়ে আনেন শীর্ষে। রবীন্দ্র জাদেজা, মায়াঙ্ক আগারওয়ালরাও অধিনায়কত্ব করেছেন নিজ নিজ ফ্র্যাঞ্চাইজির হয়ে। তবে ভিন্ন পথে হায়দ্রাবাদ। টানা ব্যর্থতার পরেও উইলিয়ামসনেই আস্থা রাখছে দল। এর মাশুলটাও দিচ্ছে দল।
গেল আসরে ৪৪ গড়ে রান করলেও স্ট্রাইক রেট মাত্র ১১৩! এই স্ট্রাইক রেট নিশ্চয়ই টি-টোয়েন্টি সুলভ নয়? এমন ব্যাটিংয়ের পরেও পঞ্চদশ আসরের মেগা নিলামের আগে ড্রাফট থেকে ১৪ কোটি রুপিতে উইলিয়ামসনকে রিটেইন করে হায়দ্রাবাদ। মূলত অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব দিতেই এত খরচা হায়দ্রাবাদের। কিন্তু তিনি ব্যর্থ, চরম ব্যর্থ। অধিনায়ক হিসেবে যেমন দলকে সেরাটা দিতে পারেননি – তেমনি ব্যাট হাতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন এই ব্ল্যাকক্যাপস তারকা।
পঞ্চদশ আসরের প্রথম বারো ম্যাচে তিনি খেলেছেন ওপেনিংয়ে। কিন্তু এক ফিফটি বাদে আর কোনো ম্যাচেই প্রতিপক্ষের সামনে দাঁড়াতে পারেননি তিনি। প্রতি ম্যাচেই শুরুতেই আউট হয়ে ব্যর্থতার বোঝা ভারী করেছেন। গুজরাট টাইটান্সের বিপক্ষে ৪৬ বলে ৫৭ আর চেন্নাই সুপার কিংসের বিপক্ষে ৩৭ বলে ৪৭ রান ছাড়া বাকি দশ ম্যাচে করেছেন মাত্র ১০৪ রান।
ব্যাট হাতে রানের দেখা নেই, ডট বল দিয়ে দলের উপরও চাপ বাড়াচ্ছেন। তবে নিজের পজিশনে বহাল তবিয়তে আছেন তিনি। টানা হারে একাদশে বেশ পরিবর্তন আসলেও উইলিয়ামসনের জায়গা নড়চড় হয়নি।
কচ্ছপগতির ইনিংস দিয়ে আইপিএলের মঞ্চে গেল দুই আসর ধরে নিয়মিত মুখ উইলিয়ামসন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে উইলিয়ামসনের সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বেশ কয়েকবার। চলতি আসরে সেটার মাত্রা কয়েকগুন বেশি। এই ব্ল্যাকক্যাপস তারকা ধীর গতির ইনিংস আর রান খরায় সমালোচনার কেন্দ্রে আছেন তিনি। তবে তিনি এও বিশ্বাস করেন ব্যর্থতা কাটিয়ে ফিরে আসবেন দ্রুতই।
তবে সেই সম্ভাবনা কতটা সেটা নিয়েও আছে সংশয়। গেল এক বছরে জাতীয় দলের জার্সি গায়েও উইলিয়ামসনের ব্যাটিং গ্রাফটা একই। ১২ ম্যাচে ২৯.৮০ গড়ে মাত্র ১১৭ স্ট্রাইক রেটে ২৯৮ রান করেছেন। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে সেই ব্যর্থতা টেনে এনে এনেছেন আইপিএলের মঞ্চেও। গেল আসরের ব্যর্থতা, গেল বছরের জাতীয় দলে পারফরম্যান্স – উইলিয়ামসন ব্যর্থতার পূর্ণ নথি থাকলেও চলতি আসরে তাঁর কাঁধেই গুরু দায়িত্ব তুলে দেয় হায়দ্রাবাদ।
আইপিএল ইতিহাসে এক মৌসুমে কমপক্ষে ২০০ বল খেলা ওপেনারদের মধ্যে উইলিয়ামসনের ব্যাটিং স্ট্রাইক রেট সবচেয়ে কম! আইপিএলের মঞ্চে যেখানে অনেকেই তারকা বনে যান, অনেক তারকাই নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করেন – উইলিয়ামসন এই যাত্রায় বিপরীত। আইপিএলের মঞ্চে লজ্জাজনক রেকর্ডে নাম লেখাচ্ছেন এই ভদ্রলোক।
চলতি আসরে ২০৮ রান করতে উইলিয়ামসন বল খেলেছেন ২২৪টি! একশোর নিচে স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করেছেন তিনি। ওপেনিংয়ে নামছেন, ডট বল দিয়ে আউটও হচ্ছে দ্রুত; দলকে চাপের মুখেও ফেলছেন। সুযোগ থাকলেও উড়ন্ত ফর্মে থাকা ডেভিড ওয়ার্নারকে দলে ভেড়ায়নি হায়দ্রাবাদ। হায়দ্রাবাদের পরিকল্পনার ঘাটতিটাও দলের অবস্থানে স্পষ্ট।
টুর্নামেন্টের এখনও দুই ম্যাচ বাকি। আপাতত বলতেই হচ্ছে ব্যর্থতা দিয়েই এবারের আসর শেষ হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের অধিনায়কের। তবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে গেল এক বছরে উইলিয়ামসনের পরিসংখ্যান কিংবা ফর্ম মোটেও পক্ষে কথা বলছে না।
টেস্ট ও ওয়ানডেতে তিনি সময়ের সেরাদের একজন হলেও টি-টোয়েন্টিতে তাঁর ধীরগতির ইনিংস বার বারই সমালোচনার জন্ম দিচ্ছে। চলতি আসরের ভরাডুবিতে হয়ত আগামি আসরে উইলিয়ামসনের মাথায় নাও থাকতে পারে অধিনায়কত্বের ক্যাপ। তবে হায়দ্রাবাদ নিশ্চয়ই চাইবে নিজেদের ভুল শুধরে নিতে। এতে জ্বলন্ত উদাহরণ হতে পারেন হার্দিক পান্ডিয়া, রবীন্দ্র জাদেজারা।