একই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে দুইটি ভিন্ন ম্যাচ। তবে রান এক, ১০৩। আবার অপরাজিত থাকাটাও ছিল ধ্রুব। ম্যাচ সেরার পুরষ্কার অন্য কেউ বাগিয়ে নিয়ে যাবে তা কি করে হয় কিংবা হতে পারে? তবে পার্থক্য শুধু একটা জায়গায়। প্রথম ম্যাচের চাইতে দ্বিতীয় ম্যাচে বল খরচ করেছেন মাত্র দুইটি বেশি।
এখন পর্যন্ত দেওয়া বৃত্তান্ত লোকেশ রাহুলের খেলা দুইটি ইনিংসের। এবারের ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে নতুন দল লখনৌ সুপার জায়ান্টের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করা লোকেশ রাহুল ব্যাট হাতেও রয়েছেন দারুণ ফর্মে। আইপিএলের আর বাকি পাঁচটা ব্যাটারের মত করেই তিনি সুযোগের সদ্ব্যবহার করার চেষ্টা করে যাচ্ছেন আপ্রাণ। সেখানে সফলতা এসেও ধরা দিয়েছে। তাঁর নামের পাশে যুক্ত হয়েছে দুইটি সেঞ্চুরি।
তাছাড়া তিনি রয়েছেন রান সংগ্রাহকদের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে। তবে এবারের আসরে তাঁর করা দুইটি সেঞ্চুরিই এসেছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে। এই পুরো মৌসুম জুড়েই মুম্বাই একটা বাজে সময় পার করছে। তাঁদের ইতিহাসেও হয়ত কখনো তাঁরা এতটা বাজে সময় পার করেনি রোহিত শর্মার দল। তাঁদেরকেই নিজের পছন্দের প্রতিপক্ষ বানিয়ে নিয়েছেন লোকেশ রাহুল।
গ্রুপ পর্বের দুই ম্যাচেই ভঙ্গুর একটা বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে ইনিংসের শেষ অবধি খেলে গিয়েছেন লোকেশ রাহুল। দুই ম্যাচেই তাঁর রান কাকতালীয়ভাবে ১০৩। তবে দুই ম্যাচে প্রেক্ষাপটে তাঁর করা এই রান গুলোর মাহাত্ম্য আলাদা। একটু পরিসংখ্যান ঘেটে দেখা গেলে বিষয়টা আরেকটু বেশি স্পষ্ট হবে। প্রথম ম্যাচটা বেশ বড় রানের ম্যাচ হয়েছিল। ২০০ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে মুম্বাই মাত্র ১৮ রানে হেরেছিল ম্যাচটি।
সে ম্যাচে রাহুলের ব্যাট থেকে রান এসেছিল ১০৩, ৬০ বলে। তাঁর স্ট্রাইকরেটটা ছিল ১৭১.৭। অন্যদিকে রাহুলের সতীর্থরা বাকি থাকা ৬০ বলে রান তুলেছিল ৮৮। তাঁদের সম্মিলিত স্ট্রাইকরেট ছিল ১৪৬.৭। তাছাড়া রাহুল ছাড়া দুই দলের ব্যাটাররা সম্মিলিতভাবে রান করেছেন ১৪১.১ স্ট্রাইকরেটে ২৫৪। এতে তাঁদের বল খরচ হয়েছে ১৮০টি। এখানটায় বোঝা যায় লোকেশের রান তোলার গতি বাকি সবার থেকে প্রায় ১.২গুণ বেশি।
তবে সে ম্যাচে রাহুলের পারফরমেন্সের উপর ভর করে ম্যাচ জিতেছে লখনৌ সে কথা ঠিক। তবে সে ম্যাচে দুই দলের ব্যাটাররাই রান পেয়েছেন মোটামুটি। অর্থাৎ উইকেট এবং কন্ডিশন দু’টোই ব্যাটারদের পক্ষে ছিল। তবে দ্বিতীয় ম্যাচের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। ৬২ বল খেলে সেদিন লোকেশ ১০৩ করেছেন বটে। তবে তাঁর দলের বাকি ব্যাটাররা আর সুবিধা করতে পারেনন। বাকিদের ব্যাট থেকে এসেছে কেবলমাত্র ৫৭ রান,বাকি থাকা ৫৮ বলে। এক্সট্রা রান উভয়ক্ষেত্রেই বাদ দিয়েই গননা করা।
৯৮.৩ স্ট্রাইকরেটে রান তুলেছে লখনৌয়ের বাকি ব্যাটাররা। যেখানে দ্বিতীয় ম্যাচে রাহুল রান করেছেন ১৬৬.১২ স্ট্রাইকরেটে। অন্যদিকে মুম্বাইয়ের ব্যাটাররা আরও একটি দিনের মত এদিনও ফ্লপ। হারের বৃত্ত থেকে বের হতে না পারা মুম্বাইয়ের রান ও লখনৌ ব্যাটারদের মোট রান ১৭৫। এখানটায় স্ট্রাইকরেট সেই ৯৮.৩। অর্থ্যাৎ ম্যাচের পরিস্থিতি ব্যাটারদের অনুকূলে ছিল না।
প্রথমত টি-টোয়েন্টি, তাছাড়া আইপিএলের মত মঞ্চে ১০০ এর নিচে স্ট্রাইকরেটে রান তুলেছে ব্যাটাররা। এত তো ভিন্ন এক অভিজ্ঞতা। আর এমন প্রতিকূলতার মাঝেও লোকেশ রাহুল ছিলেন অনড়, অবিচল। তিনি যেন তাঁর লক্ষ্যে স্থির। পছন্দের প্রতিপক্ষের বিপক্ষে তিনি জ্বলে ওঠেন আরও একটিবার। আর এবারও ম্যাচের ফলাফল থেকে শুরু করে ম্যাচ সেরা পুরষ্কারও বাগিয়ে নিয়ে গেছেন রাহুল।
রাহুলের করা দুইটি সেঞ্চুরির ম্যাচ পর্যালোচনায় স্পষ্ট একটা ধারণা পাওয়া যায় যে ঠিক কোন ইনিংসটা মাহাত্ম্য লখনৌয়ের সার্বিক জয়ের প্রেক্ষাপটে বেশি। তবে এসব কিছু ছাপিয়ে রাহুলের এমন ফর্ম নিশ্চয়ই স্বস্তি জোগাচ্ছে ভারত জাতীয় দলের নির্বাচকদের। তিনি হয়ত তাঁর এই মারকুটে ফর্ম বজায় রাখবেন আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ অবধি, এমনটাই হয়ত প্রত্যাশা সকলের।