বিরাট কোহলির গেছে যে দিন তা কি একেবারেই গেছে! কিছুই কি নেই বাকি? ২০২৪ সালটা কোহলির জন্য যেন এক দুঃস্বপ্ন। টেস্ট, ওয়ানডে, কিংবা টি-টোয়েন্টি কোথাও যেন তিনি নিজেকে খুঁজেই পাচ্ছেন না। পারফরম্যান্সের সাথে পাল্লা দিয়ে কমেছে ধৈর্য্যশক্তিটাও। প্রায়ই জড়িয়ে যাচ্ছেন বিভিন্ন বাগবিতণ্ডায়। কখনো প্রতিপক্ষকে ধাক্কা দেওয়া, কিংবা নিজ দলের খেলোয়াড়কে রান আউট করানো, সবশেষে তো জড়িয়ে পড়লেন অজি দর্শকদের সাথে কথার লড়াইয়েও।
বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির চর্তুথ টেস্ট হচ্ছে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। এমসিজি বরাবরই কোহলির অন্যতম পছন্দের মাঠ। এমসিজিতে এর আগে টেস্টে ৫ ইনিংসে ৫০ এর উপরে গড়ে রান করেছিলেন ৩১৬। দুই ফিফটির সাথে ছিল একটা সেঞ্চুরিও।
এছাড়াও ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অফফর্মে থাকা কোহলি, এখান থেকেই তো শুরু করেছিলেন আরেক প্রত্যাবর্তনের গল্প। হারিস রউফের বুকের দিয়ে ধেয়ে আসা বাউন্সারটা, বোলারের মাথার উপর দিয়ে সীমানা ছাড়া করে অবিশ্বাস্য জয়ের সেই গল্পটাতো আজও ক্রিকেট পাড়ায় আলোচিত।
সেই মেলবোর্নেও কিনা কোহলি পাড়ছেন না, নতুন শুরুর গল্প লিখতে! প্রথম ইনিংসেই ১৯ বছর বয়সী অভিষিক্ত স্যাম কন্সটাসের সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন। সেখানেই শেষ নয়, কথার লড়াইটাকে নিয়ে গেলেন রীতিমতো ফিজিক্যাল অ্যার্টাকের পর্যায়েও। এত অভিজ্ঞ একজন খেলোয়াড় হিসেবে যা বড্ড দৃষ্টিকটু। এর জের ধরে ম্যাচ ফির ২০ শতাংশ জরিমানাও দিতে হয় তাকে।
ব্যাট হাতেও সময়টা বড্ড বাজে যাচ্ছে তার। অফসাইডের হালকা সুইং করা বলটা ড্রাইভ করতে গিয়ে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পিছে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফেরার ব্যাপারটা রীতিমতো শিল্পই বানিয়ে ফেলেছেন তিনি। শুক্রবার অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে পাহাড়সম রানের বিপরীতে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দুই উইকেট হারায় ভারত। এরপর কোহলি এসে বেশ দেখেশুনেই শুরু করেন।
স্কট বোল্যান্ড, প্যাট কামিন্স, মিশেল স্টার্কদের লোভনীয় ফিফথ স্ট্যাম্পের বলগুলো দক্ষতার সাথেই ছাড়ছিলেন তিনি। তবে শেষ রক্ষা হল আর কোথায়? আবারও সেই ফাঁদেই পা দিলেন তিনি। বোল্যান্ডের অফস্ট্যাম্পের বেশ বাইরের বলটাতে কাভার ড্রাইভ খেলতে গেলেন বোধহয়। ফলাফল আরও একবার নিজের ‘ট্রেডমার্ক’ স্টাইলে ব্যাটার কানায় লেগে এলেক্স ক্যারির বিশ্বস্ত দস্তানায় তালুবন্দী হয়ে ফিরলেন সাজঘরে।
এর ঠিক এক ওভার আগেই ঘটিয়েছেন আরেক কান্ড। ফর্মে থাকাযশস্বী জয়সওয়ালকে রান আউট করে ভারতের বিপদ আরও বাড়িয়েছেন তিনি। ১১৮ বলে ১১ চার আর এক ছক্কায় ৮২ করা যশওয়াল বেশ ওয়ানডে মেজাজেই ব্যাট করছিলেন। দলকে নিয়ে যাচ্ছিলেন বড় সংগ্রহের দিকে। তবে কোহলির ‘সেলফিশ অ্যাক্টের’ জন্য সাজঘরে ফিরতে হয় তাকে।
ঘটনা এখানেও শেষ হলে পারত। শেষ বেলা আরও এক দফা ঝামেলায় জড়ালেন কোহলি। সাজঘরে ফেরার পথে অস্ট্রেলিয়া সর্মথকদের দুয়ো ধ্বনিতে মেজাজ হারান কোহলি। তাদের সাথেও বেধে যায় তার কথার লড়াই। এত বড় কিংবদন্তি ক্রিকেটার হিসেবে যা বেশ শিশুসুলভ আচারণই বটে! স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, অফফর্মটা মাঠ ও মাঠের বাইরে বেশ ভোগাচ্ছে তাকে।
একসময়ের নির্ভরতার প্রতীক বিরাট কোহলি আজ যেন হারিয়ে ফেলেছেন নিজের চিরচেনা ছন্দ। মাঠের পারফরম্যান্স থেকে শুরু করে মাঠের বাইরের আচরণ, সবই তার ক্যারিয়ারের ম্লান দশার প্রতিচ্ছবি হয়ে দাঁড়িয়েছে। পারবেন কি তিনি ঘুরে দাঁড়াতে! নাকি এই দেখাই শেষ দেখা?