একটা সময় ছিল যখন বিরাট কোহলি ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেটের সর্বেসর্বা। দল সাজানো হতো তাঁকে কেন্দ্র করেই। তাঁর ব্যাট হাসলেই জয়ের হাসি হাসতো ভারত। কিন্তু গত বছর তিনেক ধরেই সে দৃশ্য খানিকটা হলেও পাল্টেছে, অন্তত টি টোয়েন্টিতে তো বটেই। ক্রিকেটের ক্ষুদ্র এই সংস্করণে ভারত আর তাঁকে ঘিরে দল সাজায় না, নায়কের ভূমিকাটা বদলে কোহলি এখন তাই পার্শ্বনায়ক।
গত কয়েক বছরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ব্যাটের ধারটাও পূর্বের তুলনায় কমেছে কোহলির। তাঁর মতো ধ্রুপদী ঘরানার ব্যাটসম্যানরা সাধারণত রানের জন্য পেশিশক্তির চাইতে টাইমিং এবং রিফ্লেক্সের উপর নির্ভর করেন।
বয়স বেড়ে যাওয়াতে রিফ্লেক্স খানিকটা কমে যাওয়ায় কোহলিকে মাঝেমাঝেই বেগ পোহাতে হয়, শুরুতে সময় লাগে সেট হতে। অন্যদিকে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের (আইপিএল) সুবাদে গত কয়েক বছরে ভারত থেকে উঠে এসেছেন ডাইনামিক কয়েকজন ব্যাটার।
লোকেশ রাহুল, ঈশান কিষাণ, সুরিয়াকুমার যাদব, ঋষাভ পান্তরা ম্যাচের যেকোনো মূহুর্তে নেমে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম। তবে সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন সুরিয়াকুমার যাদব, বাকিদের চাইতে দেরিতে অভিষেক হলেও পারফরম্যান্স দিয়ে ছাড়িয়ে গেছেন সবাইকে। ফলে শেষ বয়সের কোহলিকে ছাড়িয়ে মাঝেমাঝেই ভারতের নায়ক হয়ে উঠছেন অন্যরা।
বিগত কয়েক সিরিজ কিংবা এশিয়া কাপেই তাঁর প্রতিফলন দেখা গেছে। গত রাতে গোয়াহাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় টি টোয়েন্টির কথাই ধরুন না। কোহলি খেলেছেন ২৮ বলে অপরাজিত ৪৯ রানের ইনিংস।
যেকোনো কন্ডিশন, প্রতিপক্ষ বিবেচনাতেই কোহলির ইনিংসটি ভালো ইনিংস বলেই গণ্য করা হবে। কিন্তু তাঁকে ছাপিয়ে গেছেন লোকেশ রাহুল আর সুরিয়াকুমার। রাহুল খেলেছেন ২৮ বলে ৫৭ রানের ইনিংস। অন্যদিকে সুরিয়া ছিলেন আরো বিধ্বংসী ,মাত্র ২২ বলে খেলেছেন ৬১ রানের অতিমানবীয় এক ইনিংস।
টি টোয়েন্টিতে ইম্প্যাক্ট জিনিসটা খুবই জরুরি। উইকেটে বেশি সময় কাটানোর চাইতে কম সময়ে ইম্প্যাক্টফুল ইনিংস খেললেই দল বেশি লাভবান হয়। সুরিয়া ঠিক এটাই করেছেন, কম সময় থাকলেও কাজের কাজ করে দিয়েছেন দলের জন্য। দলের রানটাকে নিয়ে গেছেন প্রতিপক্ষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। ফলশ্রতিতে ভালো ইনিংস সত্ত্বেও কোহলি বনে গেছেন পার্শ্বনায়ক।
একই দৃশ্য দেখা গেছে এশিয়া কাপ এবং সদ্যসমাপ্ত অস্ট্রেলিয়ায় বিপক্ষে টি টোয়েন্টি। একমাত্র এশিয়া কাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে কোহলি ছিলেন স্বমহিমায় উজ্জ্বল, সে ম্যাচে সেঞ্চুরি করে তিনিই ছিলের ভারতের জয়ের নায়ক। কিন্তু বাকি ম্যাচগুলোতে কোনোভাবেই তাঁকে ভারতের জয়ের নায়ক বলা যাবে না।
গ্রুপপর্বে চিরপ্রতিদ্বন্দী পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচেই দেখুন না, বোলিং নির্ভর পিচে ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে একপাশ আগলে রেখে কোহলি খেলেন ৩৫ রানের ইনিংস। কন্ডিশন, প্রতিপক্ষজ, পরিস্থিতি বিবেচনায় কোহলির সেই ইনিংস লেটার মার্ক নিয়েই উতরে যাওয়ার কথা।
তবুও, ম্যাচের নায়ক তিনি নন, শেষদিকে নেমে ১৭ বলে ৩৩ রান করে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়া হার্দিক পান্ডিয়াই ছিলেন সেদিন ভারতের জয়ের নায়ক। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজেও বদলায়নি সেই দৃশ্য, সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় টোয়েন্টিতে বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে খেলেছেন ৪৮ বলে ৬৩ রানের ইনিংস।
কিন্তু, সেদিনও তাঁকে ছাপিয়ে গেছেন সুরিয়া। ৩৬ বলে ৬৯ রানের ধবংসাত্নক এক ইনিংস খেলে দলকে পৌঁছে দিয়েছেন জয়ের বন্দরে। ফলশ্রুতিতে সেদিনের ভারতের আসল নায়ক ছিলেন সুরিয়াই।
আসলে কোহলি খারাপ খেলছেন না, টি টোয়েন্টিতে তিনি নিয়মিতই ভালো সব ইনিংস খেলছেন। আইপিএলের সুবাদে ভারতীয় দলে এখন ম্যাচ উইনারের ছড়াছড়ি, ফলে দেখা যাচ্ছে ভালো খেললেও কেউ না কেউ ছাড়িয়ে যাচ্ছে তাঁকে। ফলশ্রতিতে নায়ক থেকে পরিচয়টা বদলে কোহলি এখন বনে গেছেন ভারতের পার্শ্বনায়ক।