ব্রিটিশ বুড়ো ও ৮৬’র বাংলাদেশ ক্রিকেট

সে এক অন্যরকম সময় ছিল। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল তখনও আজকের মত পেশাদার রূপ নেয়নি। ১৯৮৬ সালে উস্টারশায়ারের এক স্কুল মাঠে খেলতে নেমেছিল, সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নেতৃত্বে।

বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল একটা ছোট্ট গ্রামের কিছু সৌখিন ক্রিকেটার – ল্যাম্ব অ্যান্ড ফ্ল্যাগ পাব ক্রিকেট দল। ম্যাচটায় সফরকারী বাংলাদেশ পাঁচ উইকেটে জিতে যায়। তবে, প্রতিপক্ষের ক্রিকেটাররা অপেশাদার হলেও দারুণ প্রতিদ্বন্দ্বীতা গড়ে তুলেছিল সেই ম্যাচে।

সেই ম্যাচে ছিলেন নেভিল সোয়ানসন। এখন বয়স হয়ে গেছে ৭৯। দ্য টেলিগ্রাফকে স্মৃতিচারণা করলেন সেই ম্যাচের, ‘এখনকার ইংল্যান্ড প্যাথেটিক। ওই সময় আমরা যখন বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলেছিলাম, তখন আমাদের পারফরম্যান্স এর চেয়েও অনেক ভাল ছিল। ওই রকম ভাল ক্রিকেট এখন ইংল্যান্ডও বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলতে পারে না। অথচ, আমরা ছিলাম খুবই অপেশাদার। অথচ, আশেপাশের গ্রামের দলগুলোর সাথেই কেবল খেলার অভিজ্ঞতা ছিল আমাদের।’

এখনকার নেভিল সোয়ানসন

বাংলাদেশ তখন নবীন দল বলেই কী না, স্থানীয় গণমাধ্যমের আশা ছিল স্বাগতিকরা অপেশাদার হওয়া সত্ত্বেও ম্যাচটা জিতে যাবে। কিন্তু, সেটা হয়নি। সম্ভবত সেবারই প্রথমবারের মত কোনো ব্রিটিশ দলকে হারায় বাংলাদেশ।

সেই শুরু। এরপর বাংলাদেশ দল ইংল্যান্ডের মাটিতে গিয়ে হারিয়ে এসেছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলকে। সেটা ২০১০ সালের কথা। ইংল্যান্ডের ব্রিস্টলে বাংলাদেশ জিতেছিল পাঁচ রানে। এরপর ২০১১ সালের বিশ্বকাপে চট্টগ্রামে, ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে অ্যাডিলেডে জিতে যায় বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে এই ইংল্যান্ডকে হারিয়েই শেষ আট নিশ্চিত করে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। ২০১৬ সালে দেশের মাটিতে ওয়ানডের পাশাপাশি টেস্টেও জিতে বাংলাদেশ। এরপর ২০১৭ সালে এই ইংল্যান্ডের মাঠেই আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মত কোনো আইসিসি ইভেন্টের শেষ চারে পৌঁছে লিখে নতুন ইতিহাস!

সে যাই হোক, আবারো ফিরে যাই ১৯৮৬ সালের সেই ম্যাচের প্রসঙ্গে। সেবার আইসিস ট্রফির আগে প্রস্তুতি হিসেবে উস্টারশায়ারে গিয়েছিল বাংলাদেশ। ১৬ দলের সেই লড়াইয়ে ম্যাচগুলো হত ৬০ ওভারের।

সেই ম্যাচ শুরুর আগে এক ফ্রেমে বাংলাদেশ দল।

মিস্টার সোয়ানসন বলেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল, প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ওরা স্থানীয় দলগুলোর সাথে খেলবে। আমরা সেই নোটিশটাকে স্রেফ কৌতুক মনে করেছিলাম। ভেবেছিলাম, মাল্টার মত কোনো দল আসবে, পরে বুঝলাম আসছে বাংলাদেশ।’

ল্যাম্ব অ্যান্ড ফ্ল্যাগ ক্রিকেট ক্লাবের নিজস্ব কোনো মাঠ ছিল না। তারা স্থানীয় কিংস স্কুলের মাঠ ও তাদের অবকাঠামো ব্যবহার করতো। ওই মাঠেই হয়েছিল ম্যাচটি।

টসে জিতে বাংলাদেশের অধিনায়ক লিপু স্বাগতিকদের ব্যাটিংয়ে পাঠায়। দলটা ২৩৪ রান করতে পেরেছিল ৫০ ওভারে। বাংলাদেশ কিছু বল বাকি থাকতে পাঁচ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।

ল্যাম্ব অ্যান্ড ফ্ল্যাগ ক্রিকেট দল।

সোয়ানসন বলেন, ‘ওই সময়ে ৬০ ওভারের ম্যাচ হত। আমরা প্রায় পুরোটা ওভার ব্যাট করি। বাংলাদেশ পাঁচ কী ছয় উইকে হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। দারুণ একটা দিন ছিল। স্বর্ণালী রোদ ছিল। প্রচুর মানুষ এসেছিল খেলা দেখতে। ওরা প্রস্তুতি নিতে চেয়েছিল, সেটার সুযোগ করে দিয়েছিলাম আমরা, নিজেরাও উপভোগ করেছিলাম। ওদের ম্যানেজার বলেছিল, যদি আমরা কখনো বাংলাদেশ যাই, তাহলে ওদের মাটিতে পা রাখার সাথে সাথে আমাদের সমস্ত ব্যয়ভার ওরাই বহন করবে।’

এই প্রস্তুতির পরও অবশ্য সেই বছর আইসিসি ট্রফিতে সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। সাত দলের গ্রুপে ষষ্ঠ হয়ে শেষ করতে হয়েছিল। দ্বিতীয় রাউন্ডেও পৌঁছাতে পারেনি দলটি। টুর্নামেন্টটা জিতে যায় জিম্বাবুয়ে, সেই জিম্বাবুয়ে যাদের এখন বাংলাদেশ বলে-কয়ে হারায়।

পরবর্তী ম্যাচে উস্টারশায়ারেরই আরেকটি গ্রামের বিপক্ষে খেলতে নেমেছিল ল্যাম্ব অ্যান্ড ফ্ল্যাগ দল। সেই ম্যাচে মোটে ৭৭ রান করতেই তারা অলআউট হয়ে যায়!

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link