হোম অ্যাডভান্টেজ; বেশ কিছু বছর ধরে ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত শব্দগুলোর একটি। স্বাগতিক দেশ নিজেদের চাহিদামত পিচ তৈরি করে প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করার জন্য। হোম এডভান্টেজের প্রসঙ্গটা বেশিই আলোচনায় আসে যখন উপমহাদেশের বাইরের কোনো দেশ উপমহাদেশে খেলতে আসে। এমনিতেই উপমহাদেশের কন্ডিশন স্পিনারদের সহায়তা করে।
তার ওপর বাংলাদেশ, ভারতের মত দল গুলো প্রতিপক্ষকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত করে র্যাংক টার্নার বা প্রবল স্পিন সহায়ক পিচ। একটা দেশ কতটুকু পর্যন্ত হোম অ্যাডভান্টেজ নিতে পারে, এই বিতর্কটা চিরকালীন। উপমহাদেশের দেশগুলো ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে খেলতে গেলে তারাও আতিথিয়তা পায় পেসস্বর্গ উইকেটে। এমনিতেই সেই দেশগুলোর আবহাওয়া পেস বোলারদের জন্য সহায়ক।
অন্যদিকে, পিচে বড় বড় ঘাস রেখে উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানদের জন্য মরণ ফাঁদ তৈরি করে রাখা হয়। তবুও হোম অ্যাডভান্টেজের প্রসঙ্গটা বেশি উঠে আসে বোধহয় উপমহাদেশের স্পিন সহায়ক উইকেটের সমালোচনার ক্ষেত্রেই।
অনেকটা সেই পথেই হাঁটলেন অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক ইয়ান চ্যাপেল। বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতে প্রথম দুই টেস্টে ভারতের স্পিন আক্রমণের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি অজিরা। ইন্দোরে তৃতীয় টেস্টের প্রথম দিনেও পড়েছে ১৪ উইকেট। নিজেদের পাতা ফাঁদে পড়েছে ভারতীয়রাই। মাত্র ১০৯ রানে গুটিয়ে গেছে তারা।
টেস্টের প্রথম দিনেই পিচে এমন টার্ন আর ব্যাটারদের বেহাল দশা দেখে নিজের রাগটা সামাল দিতে পারেননি চ্যাপেল। ক্রিকেট বিষয়ক গণমাধ্যম ইএসপিএন ক্রিকইনফোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে চ্যাপেল বলেন, ‘আসলেই কি খেলোয়াড় আর কর্মকর্তাদের উচিত কিউরেটরকে গিয়ে বলা যে কিভাবে পিচ প্রস্তুত করতে হবে বা কেমন পিচ তারা চায়? আমার মতে, এই জিনিসটা একটা রাবিশ।’
মাঠের ২২ গজে কিউরেটরকে নিজের মত করে কাজ করতে দেয়া উচিত বলেও মনে করেন চ্যাপেল। কেউ গিয়ে কিউরেটরের কাজে নাক গলাবে অথবা নিজেদের চাওয়া গুলো তাকে বলবে, এই বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না সাবেক এই অজি অধিনায়ক।
চ্যাপেল আরো বলেন, ‘পিচটাকে কিউরেটরের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত। কিউরেটর এমন পিচই প্রস্তুত করে যেটা সে মনে করে ভালো পিচ হবে। যখন প্রশাসনিক লোকজন এবং ক্রিকেটাররা কিউরেটরের কাছে গিয়ে জানায় যে তারা কেমন পিচ চায়, তখন সেখানে আসলে বিপদ ডেকে আনা হয়।’
কিউরেটরের জন্য র্যাংক টার্নার পিচ প্রস্তুত করা এক ধরণের ঝুঁকি বলে মনে করেন চ্যাপেল। কারণ কেউ আগে থেকে অনুমাণ করতে পারে না এই পিচে বল কতটুকু টার্ন করবে। ব্যাটসম্যানদের জন্য সেই পিচে খেলা তখন হয়ে যায় ভয়াবহ রকমের চ্যালেঞ্জ। স্বাগতিক দেশও ভুগতে পারে এমন ‘আনপ্রেডিক্টেবল’ পিচ বানানো হলে। ইন্দোর টেস্টের প্রথম দিনেও এমনটাই হয়েছে বলে মনে করেন চ্যাপেল।
চ্যাপেল বলেন, ‘যদি কেউ এসে কিউরেটরকে বলে আমরা একটি র্যাংক টার্নার পিচ চাই তাহলে সেখানে প্রবল সম্ভাবনা আছে বিষয়টি উল্টো দিকে কাজ করার। কারণ আমি যেটা বললাম, কেউ আগে থেকে অনুমান করতে পারে না। যতক্ষন না পর্যন্ত আপনি সবার জন্য ভালো হয় এমন পিচ না বানাবেন তখন আপনি অনেক বেশি ঝুঁকি নিয়ে নিচ্ছেন।’
যারা কিউরেটরকে র্যাংক টার্নার বানানোর পরামর্শ দেয় তাদেরকে লেকের পানিতে ঝাঁপ দেয়া উচিত বলে মনে করেন চ্যাপেল। ইয়ানের ভাইয়ের গ্রেগ চ্যাপেলের ভারতের কোচিং অধ্যায়টা বেশ বিতর্কিত ছিল। এবার ভারতের উইকেট নিয়ে মন্তব্য করে নতুন বিতর্কেই জড়ালেন ইয়ান চ্যাপেল। যদিও, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড বরাবরই বাউন্সি উইকেট বানায়, উইকেটে বড় বড় ঘাস থাকে – সেই ইস্যুতে অবশ্য তিনি কিছুই বলেননি।