কোহলি, শেষ কল শুনতে পাচ্ছেন!

অধিনায়কত্ব বড় অদ্ভুত জিনিস, বিশেষ করে উপমহাদেশীয় প্রেক্ষাপটে ৷ ছোট্ট একটা উদাহরণ দিই ৷ ঢাকায় ইন্ডিপেনডেন্ট কাপের ফাইনালে অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দীন পাকিস্তানের বিশাল টার্গেট চেজ করতে গিয়ে ছয়-সাত নম্বরে  ব্যাট করতে নামা মিনি অলরাউন্ডার রবিন সিংকে তিন নম্বর পজিশনে পাঠিয়ে বাজিমাত করলেন ৷

একই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ক্যাপ্টেন শচীন টেন্ডুলকার, শারজায় সেই রবিন সিং কে তিনে নামালেন চেজ করতে গিয়ে ৷ ভারত পারলো না ৷ শচীন নিশ্চয় সেদিন বুঝেছিলেন, ক্যাপ্টেনসি শিখে করার জিনিস না, ওটা ভিতর থেকে আসে ৷

এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যখন কোহলি কিছু টি-টোয়েন্টি ম্যাচে শেষ বারের মত কয়েন ফেলতে গেলেন, তখন কি তার শচীনের মতই অনুভূতি হবে যে, ক্যাপ্টেন বানানো যায় না, ক্যাপ্টেন জন্ম নেয় ৷

আজহারউদ্দীন হঠাৎ প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল, ‘মিয়া, ক্যাপ্টেন বানোগি?’ তেমন কোনো পর্যায়েই আজহারের অধিনায়কত্ব করার তেমন অভিজ্ঞতাই ছিল না ৷ কিন্তু কোহলিকে কিন্তু কারিগরদের ছাঁচে ফেলে তৈরি করা হয়েছিল ৷ অনেকের কাছেই ইতিহাসের সবচেয়ে ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্কের (মহেন্দ্র সিং ধোনি) ছায়াতলে থেকে কোহলি নিজেকে প্রস্তত করেছিলেন ৷

তারপরও কেন কোহলি ক্রিকেট কাপ্তানির ইতিহাসে বড় কোন রেখাপাত না রেখেই বিদায়ের ডাক শুনতে পাচ্ছেন?

সফলতা যে একেবারেই নেই তা না ৷ দ্বিপক্ষীয় সিরিজের সেসব সফলতা সমালোচকরা অনেকটাই তৈরি করা টিম সাকসেস হিসেবেই দেখেছেন ৷ সেখানে কাপ্তানির মশলার স্বাদ তেমন পান নি তারা ৷ কিন্তু এতো সম্ভাবনা নিয়েও, ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা দল নিয়েও কোহলি কেন আইসিসি ইভেন্ট সহ বেশ অনেক ক্ষেত্রেই নিজের ক্যাপ্টেনসি প্রতিভা দেখাতে ব্যর্থ হলেন?

অনেকগুলো কারণের মধ্যে যেটি বড় বলে মনে হয়, তা হলো রবি শাস্ত্রীর ছায়ার নিজেকে সমর্পিত করা ৷ ইতিহাসের বড় বড় ক্যাপ্টেনরা কখনো নিজের থেকে কোচের ছায়া বড় হতে দেন নি ৷ কিন্তু শাস্ত্রীয় সংগীতের সাথে কোহলির আধুনিক র‌্যাপ সংগীতের খাপ মেলেনি ৷

যতই দাবি করা হোক, তাঁদের রসায়ন খুব ভালো ছিল, বাস্তবে দুই জন দুই মেরুর লোক ৷ শাস্ত্রী কখনই আক্রমণাত্বক ক্রিকেটার ও মানুষ ছিলেন না ৷ কোহলি আবার অতি এগ্রেসিভ ৷ দুই জনের কেমিস্ট্রির মিল তাই কেবল পেপার ওয়ালাদের পাতাতেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছিল ৷

দ্বিতীয়ত যেটা, তা হলো ধোনির মহান অধিনায়কত্বের উত্তরাধিকার তাঁর জন্য বোঝা হয়ে গেছিল ৷ বিশেষ করে ধোনি দলে থাকায় সেটা অনেক কষ্টকর হয়ে গেছিল আইসিসির ইভেন্ট গুলোতে ৷ আমি মনে করি, মাথার উপর এই দুই মহারথীদের সুদীর্ঘ ছায়ায় ক্যাপ্টেন কোহলি চাপা পড়ে গিয়েছে ৷ এছাড়াও আরো কিছু বিষয় আছে যা স্বল্প পরিসরে লেখা বা ব্যাখ্যা করা যায় না ৷

যা হোক,  ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটের মাধ্যমে অধিনায়কত্বকে বিদায় বলা শুরু হলো ৷ আমি মনে করি, বাকি দুই ফরমাটেও তার দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে ৷ কেননা, অধিনায়কত্বের অসহ্য জ্বালা, তার জ্বালাময়ী ব্যাটিংকে অনেকটাই নিষ্প্রভ করেছে ৷ অধিনায়কত্বের চাপ ছাড়া সেই ব্যাটসম্যান কোহলিকে দেখার অপেক্ষায় আছে বিশুদ্ধ ক্রিকেট প্রেমীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link