ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে তখন। খুব স্বাভাবিকভাবেই সেই সময় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ইমরান খানের পছন্দের কেউই হবেন। আর সেই পছন্দের ব্যক্তি হিসেবে ইমরান খান বেঁছে নিলেন রমিজ রাজাকে। ফলে ক্রিকেট দুনিয়ায় সেই সময় একটা তোলপাড় হয়ে গিয়েছিল। ঠিক কেন রমিজ রাজাকেই বেঁছে নিলেন ইমরান খান?
কেননা ইমরান খানের দলে তো আর নেতৃত্ব দেয়ার মত লোকের অভাব ছিল না। সর্বকালের অন্যতম সেরা অধিনায়ক ইমরানের দলে ওয়াসিম আকরাম খেলেছেন, ইনজামাম উল হক খেলেছেন, ওয়াকার ইউনুস খেলেছেন; মুশতাক আহমেদ বা সাকলায়েন মুশতাকও তো ছিলেন। এদের বাদ দিয়ে ইমরান খান কেন রমিজকে বেছে নিলেন?
কেননা সেই সময় রমিজ রাজাকে ঠিক পিসিবি চেয়ারম্যান সুলভ মনে হচ্ছিল না। অন্তত তাঁর ভাবমূর্তিটা এমন ছিল না। তবুও ইমরান খান রমিজ রাজাকে বেঁছে নিয়েছিলেন তাঁর কিছু গুনের জন্য। এরমধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি হলো রমিজ রাজার আপোষহীন ক্যারিয়ার এবং তাঁর অসাধারণ কূটনৈতিক দক্ষতা।
শিক্ষার দিক থেকেও অনেক বেশি এগিয়ে ছিলেন এই ক্রিকেট। তাঁর সমসাময়িক ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পড়াশোনা বোধহয় তাঁরই। সেই সময়েই পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ করেছিলেন। ইমরান খান যে সবচেয়ে যোগ্য লোকের হাতেই পাকিস্তানের ক্রিকেটকে তুলে দিয়েছিলেন তা আমরা বুঝতে পেরেছি খুব দ্রুতই।
কেননা দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই শুরু হয় রমিজ রাজার ক্যারিশমা। বছরখানেকের মধ্যেই পাকিস্তান ক্রিকেটে বড় কিছু পরিবর্তন আনেন। বলা ভালো রমিজ রাজা উদ্ভাবনীয় কিছু আইডিয়া নিয়ে আসেন। এই মুহূর্তে ক্রিকেট দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি সম্পৃক্ত থাকা মানুষটা বোধহয় তিনিই।
দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই পাকিস্তান এমনকি বিশ্ব ক্রিকেটের উন্নয়নের জন্য নতুন নতুন সব আইডিয়া নিয়ে এসেছেন তিনি। তাঁর কিছু কিছু পরিকল্পনা পুরো ক্রিকেট দুনিয়ারই নজর কেড়েছে। সবমিলিয়ে এই একবছরে পাকিস্তান ক্রিকেটের চেহারাই বদলে দিয়েছেন রমিজ রাজা এবং তিনি হয়ে উঠেছেন ক্রিকেটের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লোকগুলোর একজন।
তিনি দায়িত্ব নেয়ার পর পাকিস্তান ক্রিকেট বেশ কয়েকবার ক্রিকেট বিশ্বের শিরোনাম হয়েছে। মাঠের ক্রিকেট তো আছেই, মাঠের বাইরের অনেক পদক্ষেপও তাঁর কারণ ছিল। যেমন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড বেশ বড় অংক খরচ করে পাকিস্তানে ড্রপ ইন পিচ আনার সিদ্ধান্ত নিল। সেটাও ক্রিকেট দুনিয়ায় একটা হৈচৈ ফেলে দিয়েছিল।
তিনি কখনো থেমে থাকেননি। একটার পর একটা পরিকল্পনা নিয়ে এসেছেন। কিছু হয়তো প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, আবার কিছু পরিকল্পনা ক্রিকেট দুনিয়াকে নড়ে চড়ে বসতে বাধ্য করেছে। যেমন গতকালই শোনা গেল পিএসএলের আদলে পিজেএল করবে পাকিস্তান। অর্থাৎ দেশটির জুনিয়র ক্রিকেটারদের জন্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ। এত আরো ভালো মানের টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার পাবে দেশটি।
এছাড়া তিনি দায়িত্ব নিয়ে মোটামুটি একটা সাধারণ মানের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ পিএসএলের চেহারাও বদলে দিয়েছেন। বিশ্বের সেরা ক্রিকেটারদের কাছেও এই লিগ এখন আকর্ষনীয় হয়ে উঠেছে। এছাড়া ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলোও দেখেছে লাভের চেহারা। ক্রিকেটে মানও হয়েছে উন্নত। পিএসএলকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি গুলোর একটিতে পরিণত করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। এমনকি আইপিএলের সময়ই পিএসএল করার চ্যালেঞ্জও জানিয়েছিলেন তিনি।
এরমাঝেই ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে চার জাতির টুর্নামেন্ট করার আইডিয়াও এসেছিল তাঁর মাথা থেকেই। ফলে রমিজ রাজার এই পদক্ষেপ গুলো শুধু পাকিস্তানের ক্রিকেটে না বরং বিশ্বক্রিকেটেও প্রভাব ফেলছিল। অথচ ইমরান খান প্রধানমন্ত্রীত্ব হারানোর পর তাঁর বোর্ড সভাপতি হেসেবে থাকাটাই এখন অনিশ্চিত। ক্রিকেট নিয়ে সবচেয়ে বেশি ভাবতে পারা লোকটাই হয়তো আর খুব বেশিক্ষণ দায়িত্বে নেই।