সময়ের স্রোত সবকিছু ভাসিয়ে নেয়। ঐতিহাসিক সব স্মৃতিও হারিয়ে যায় মহাকালের ভেলায় কিন্তু কিছু কিছু অধ্যায় থেকে যায় হৃদয়ের গভীরে, ইতিহাসের পাতায় কিংবা চিরকালীন নস্টালজিয়ায়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এমনই দুই অধ্যায়ের নাম মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ—একজন দলের বুকে আগলে রাখা হৃদয়, আরেকজন শিরদাঁড়া।
২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি হতে যাচ্ছে তাদের শেষ আইসিসি টুর্নামেন্ট, শেষ মহাযুদ্ধ। ওয়ান লাস্ট ড্যান্স। শেষবারের মত বড় আসরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই মহারথী। যেতে নাহি দিব হায়, তবু যেতে দিতে হয় – পর্দা নামবে মুশফিক-রিয়াদ অধ্যায়ের।
বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিয়মিত জিততে শিখেছে খুব বেশিদিন হয়নি। জিততে না জানা একটা দল ছিল বাংলাদেশ। হারার আগে হেরে বসা এক দল ছিল বাংলাদেশ দল। সেই আঁধার থেকে দলকে আলোয় এনেছেন যারা, তাদের দুজনই এই মুশফিক-রিয়াদ। একজন গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল, উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে প্রতিটি মুহূর্তকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আরেকজন নির্ভার ভরসা, উইকেটে থাকলে মনে হতো — ‘আমি খেলছি, এখনও আশা আছে!
২০০৭ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে মুশফিকের সেই ম্যাচ জেতানো ইনিংস, কিশোর বয়সেই বাঘের মতো গর্জন। ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানের সাথে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের সেই অতিমানবীয় জুটি। ২০১৫ বিশ্বকাপে রিয়াদের সেই ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি, ২০১৮ এশিয়া কাপে শেষ বলে চার মেরে ফাইনালে তোলা, কিংবা নিদাহাস কাপের সেই ছক্কা!
কিন্তু, এই গল্পের শেষ অংশটা লেখা বাকি। ২০২৫ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি তাদের শেষ নায়কোচিত মঞ্চ। এই মঞ্চে হয়তো আরেকটা বিস্ময় লুকিয়ে আছে, হয়তো আরেকটি মহাকাব্য অপেক্ষা করছে। শরীর চলে না, ফিটনেস নেই, ব্যাটে রান নেই – এই হাজারো সমালোচনা মাথা পেতে নিয়ে শেষবারের মতো যখন তারা বাঘের ডোরাকাটা জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নামবেন, হয়তো সবকিছু থমকে যাবে কয়েক সেকেন্ডের জন্য।
হয়তো কেপে উঠবে গলা, হয়তো বুক ফেঁটে বের হবে কোনা দীর্ঘশ্বাস! কে জানে – এটাই হয়তো শেষবারের মতো উইকেটের পেছন থেকে মুশফিকের কোনো নির্দেশনা শোনা। এটাই হয়তো শেষবারের মতো রিয়াদের সেই ঠাণ্ডা মাথার ফিনিশিং। হয়তো এই টুর্নামেন্টেই তারা রেখে যাবেন এমন কিছু মুহূর্ত, যা কালজয়ী হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে। কে জানে হয়ত, অধরা সেই ট্রফিটা এবার হাতের মুঠোয় আসবে!
সেই স্বপ্ন সত্যি হোক কিংবা নাই হোক, এই অনন্য যুগলবন্দীর গল্প কখনো শেষ হবে না। যোদ্ধারা হারিয়ে যায় না, তারা মহানায়ক হয়ে টিকে থাকেন ইতিহাসের পাতায়, বেঁচে থাকেন অনাগত প্রজন্মের নস্টালজিয়ায়!