‘আহমেদাবাদের ফাইনালটাই হবে আমার আইপিএল ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ’— বিদায় বার্তাটা আগেই দিয়ে রেখেছিলেন আম্বাতি রাইডু। তবে অন্তিম লগ্ন যে এত স্বপ্নিল আয়োজনে, অর্জনে, গর্জনে, শ্রেষ্ঠত্বে শেষ হবে, সেটা বোধহয় নিজেও ভাবেননি রাইডু। তাই তো চেন্নাইয়ের আইপিএল শিরোপা অর্জনে পরম সুখানুভূতিতে চলে গিয়েছিলেন তিনি।
ফাইনাল ম্যাচে নিজেও ব্যাট হাতে রেখেছিলেন দারুণ অবদান। ৮ বলে খেলেছিলেন সময়োপযোগী ১৯ রানের ইনিংস। ছোট ইনিংস, তবে ম্যাচ পরিস্থিতিতে ঐ ইনিংসটার গুরুত্ব ছিল অনেক। কারণ মোহিত শর্মার করা ইনিংসের ১৩তম ওভারের প্রথম ৩ বলে ২ ছক্কা আর ১ চারেই চেন্নাইয়ের দিকে ম্যাচের মোমেন্টাম ঘুরিয়ে দেন রাইডু।
এরপর অবশ্য অনেক নাটকীয়তায় শেষ হয় ম্যাচটি। পেণ্ডুলামের মতো দুলতে থাকা ম্যাচটির ভাগ্য ঠিক করে দেন চেন্নাইয়ের রবীন্দ্র জাদেজা। জাদেজার সেই উইনিং শটে উচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়েছিলেন রাইডুও। বাঁধন হারা আনন্দে সে মুহূর্ত উদযাপন করেছিলেন।
সতীর্থদের সাথে অংশ নিয়েছিলেন ম্যাচ জয়ের পর ভৌ-দৌড়েও। তবে একটা সময় পর নিজের মাঝেও হয়তো শেষের অনুভূতি ভর করছিল—এটাই তো শেষ।
বেশ খানিকটা পর কেঁদে ফেলেছিলেন। আর তাই চেন্নাইয়ের শিরোপা জয়ের উচ্ছ্বাসের মাঝেও রাইডুর অশ্রুসিক্ত চোখ মন ছুঁয়েছিল গুজরাট শিবির থেকে আহমেদাবাদের গ্যালারিও। অবশ্য ততক্ষণে রাইডু পৌঁছে গিয়েছেন ব্যক্তি অর্জনের চূড়ায়।
চেন্নাই পঞ্চম বারের মতো শিরোপা জিতেছে। কিন্তু, রাইডুর ব্যক্তিগত আইপিএল শিরোপার সংখ্যা তো তার চেয়েও একটা বেশি, ছয়টা; মুম্বাই ইন্ডিয়ানসের হয়ে তিনটা, চেন্নাইয়ের হয়ে তিনটা। এমন অর্জনে, শিরোপা জয়ের শ্রেষ্ঠত্বে আম্বাতি রাইডুই তো এই মুহূর্তে সবচেয়ে সুখীদের একজন।
হবেনই বা না কেন! আইপিএল ক্যারিয়ারে ৬ টা শিরোপা জিতেছেন। রাইডুর মতো একমাত্র রোহিত শর্মারই এই কীর্তি আছে। এ ছাড়া এমন বিরল কীর্তি খেলোয়াড় তো দূরে থাক, ১৬ বছরের আইপিএল ইতিহাসে কোনো ক্লাবেরও নেই। খেলোয়াড়ী জীবনের এমন সমৃদ্ধময় অর্জনে আম্বাতি রাইডুও তাই দারুণ খুশি। আবেগাপ্লুত হয়ে ফাইনাল জয়ের পরই জানিয়েছেন নিজস্ব প্রতিক্রিয়া।
তিনি বলেন, ‘এটা অনেকটা রূপকথার মতো। শেষটা এর চেয়ে দুর্দান্ত হতো পারতো না। এটা অবিশ্বাস্য। আমি ভাগ্যবান এমন অর্জনের অংশ হতে পেরে। এখন আমি বাকি জীবনটা নির্মল আনন্দে, হাসিখুশিতে কাটিয়ে দিতে পারব। আমার ৩০ বছরের যাত্রা শেষ হলো আজ। এটা যে এভাবে শেষ হয়েছে, তার জন্য আমি খুশি। এই যাত্রায় আমার পরিবারের প্রতি আমি সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ, বিশেষ করে আমার বাবাকে স্মরণ করতে চাই। তাঁর জন্যই আজ আমি এখানে।’
২০৩ ম্যাচের আইপিএল ক্যারিয়ারে ১৮৭ ইনিংসে ৪৩৪৮ রান রেখে বিদায় বললেন আম্বাতি রাইডু। যেখানে ২২ টি ফিফটির পাশাপাশি তিনি একটি সেঞ্চুরিও হাঁকিয়েছিলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটের পাশাপাশি ভারতীয় জার্সিতেও নিজেকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়েছেন।
একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫০ ইনিংসে ৪৭.০৬ গড়ে তিনি করেছেন ১৬৯৪ রান। যার মধ্যে ১০ ফিফটির পাশাপাশি ৩ টি শত রানেরও ইনিংস ছিল তাঁর।
তবে, ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে দারুণ ছন্দে থাকলেও এ ব্যাটারকে বাদেই সেবারের বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করে ভারত। আর তাতেই ক্ষোভে, অভিমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে দেন রাইডু।