সাই সুদর্শন, ট্র্যাজেডির নায়ক

দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারেই রানের গতি বাড়াতে না পারায় তাঁকে ‘রিটায়ার্ড আউট’ হিসেবে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়েছিল গুজরাট টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে সেরাটা বোধহয় ফাইনালের জন্যেই জমিয়ে রেখেছিলেন সাই সুদর্শন। বিশ্বসেরা সব তারকাদের পেছনে ফেলে অনবদ্য এক ইনিংস খেলে ফাইনালের সব আলো নিজের দিকে কেড়ে নিয়েছেন এই তরুণ তুর্কি। 

দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারেই রানের গতি বাড়াতে না পারায় তাঁকে ‘রিটায়ার্ড আউট’ হিসেবে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়েছিল গুজরাট টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে সেরাটা বোধহয় ফাইনালের জন্যেই জমিয়ে রেখেছিলেন সাই সুদর্শন। বিশ্বসেরা সব তারকাদের পেছনে ফেলে অনবদ্য এক ইনিংস খেলে ফাইনালের সব আলো নিজের দিকে কেড়ে নিয়েছেন এই তরুণ তুর্কি।

ক্রীড়াপ্রেমী এক পরিবার থেকেই উঠে আসা সুদর্শনের। বাবা ভরদ্বাজ জাতীয় দলের অ্যাথলেট ছিলেন। তাঁর মা ঊষা ভরদ্বাজও তামিলনাড়ুর হয়ে ভলিবল খেলেছেন অনেকদিন। ফলে ক্রিকেটার হয়ে উঠার লড়াইয়ে পরিবারকে সবসময়েই পাশে পেয়েছেন সুদর্শন।

বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই আলো ছড়ানো সুদর্শন প্রথমবারের মতো আলোড়ন তোলেন তামিলনাড়ু প্রিমিয়ার লিগে। ২০২১ মৌসুমে আট ইনিংসে ১৪৪ স্ট্রাইক রেটে করেন ৩৫৮ রান। সুদর্শনের ব্যাটিংয়ের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন হলো তিনি ইনিংস বড় করতে জানেন।

সবসময় বাউন্ডারির উপর নির্ভর না করে বরং সিংগেল-ডাবলসের মাধ্যমে রানের চাকা সচল রাখেন। ইনিংসের শুরুটা খানিকটা ধীরস্থিরভাবে করলেও পরে মারকুটে ব্যাটিংয়ে পুষিয়ে দিতে জানেন।

মজার ব্যাপার হলো আইপিএলে বল হাতে দেখা না গেলেও ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি লেগস্পিন করতে জানেন সুদর্শন। ঘরোয়া ক্রিকেটে মাঝে মাঝেই বল হাতে দেখা যায় তাঁকে। বিশেষ করে মাঝের ওভারগুলোতে কার্যকরী হয়ে উঠতে পারে তাঁর লেগস্পিন।

তাঁর প্রতিভা আন্দাজ করেই কিনা গত মৌসুমের নিলামে ২০ লাখ রুপির বিনিময়ে তাঁকে দলে ভেড়ায় গুজরাট টাইটান্স। তারকাবহুল টাইটান্সের টপ অর্ডারে নিয়মিত খেলার সুযোগ না পেলেও যখন জায়গা পেয়েছেন নিজের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন। টাইটান্স ম্যানেজমেন্টও তাঁর উপর ভরসা করেই ছেড়ে দিয়েছিল গুরুত্বপূর্ণ তিন নম্বর পজিশনটা।

এবারের মৌসুমে অবশ্য শুরুর দিকে তাঁকে একাদশে রাখা হয়নি। কিন্তু কেন উইলিয়ামসনের অপ্রত্যাশিত ইনজুরিতে কপাল খোলে যায় এই তরুণের। অপ্রত্যাশিতভাবে পাওয়া সুযোগটা কাজে লাগাতে দুবার ভাবেননি সুদর্শন। গোটা টুর্নামেন্টজুড়েই ধারাবাহিকভাবে হেসেছে তাঁর ব্যাট। এবারের মৌসুমে আট ম্যাচে ৫১ গড় এবং ১৪১ স্ট্রাইকরেটে তাঁর সংগ্রহ ৩৬২ রান।

তবে সুদর্শন জানতেন বিশ্ব দরবারে নিজেকে জানান দিতে আইপিএল ফাইনালের চাইতে ভালো মঞ্চ আর হয় না। বিশ্বসেরা সব তারকাদের ম্লান করে দিয়ে ফাইনালে চেন্নাইয়ের বোলারদের রীতিমতো পাড়ার বোলারে নামিয়ে এনেছিলেন। ইনিংসের শুরু থেকেই ছিলেন সমান সাবলীল। ভালো বলকে যেমন সম্মান করেছেন, তেমনি বাজে বলকে সীমানা ছাড়া করেছেন অবলীলায়।

সময় যত গড়িয়েছে ততই রুদ্রমূর্তি ধারণ করেছে সুদর্শনের ব্যাট। কখনো মাতিশা পাথিরানাকে লং অনের উপর দিয়ে গ্যালারীতে পাঠিয়েছেন, আবার কখনো রবীন্দ্র জাদেজাকে স্লগ সুইপ খেলেছেন। ঠান্ডা মাথায় নিজের ইনিংসকে বড় করেছেন, প্রতিটা শট খেলেছেন ব্যাটের মাঝবরাবর।

শেষপর্যন্ত আট চার এবং ছয় ছক্কায় ৪৭ বলে ৯৬ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলে আউট হন এই তরুণ। তাঁর দুর্দান্ত ইনিংসের সুবাদেই আইপিএল ফাইনাল ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় রানের রেকর্ড গড়ে গুজরাট।

সুদর্শনের ক্যারিয়ারের সবেমাত্র শুরু, সামনে পাড়ি দিতে হবে বহু পথ। তবে আগামী দিনগুলোতে নামটা যে বারবার উচ্চারিত হবে বিশ্বক্রিকেটে তাতে সন্দেহ নেই মোটেই।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...