জিম্বাবুয়ের বর্জন, ইংল্যান্ডের অর্জন

স্পিনের বিপক্ষে মাস্টার ছিলেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। আর সেই মাস্টারি তিনি করতেন রিভার্স স্যুইপ, দৃঢ়তা আর অনমনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট দিয়ে। সেটা করেই ৬৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে তিনি রান তুলেছেন ৫১.৫৪ গড়ে। উইকেট রক্ষক ব্যটাসম্যানদের জন্য এটা ‍খুবই অস্বাভাবিক একটা টেস্ট ব্যাটিং গড়। কারণ, টানা উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকার পর আবার ওপরের দিকে ব্যাটিং করা যে কত কঠিন – সেটা বলে না দিলেও চলে।

জিম্বাবুয়ের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান কে? কিংবা সেরা ব্যাটসম্যান? অথবা যদি তাঁদের সর্বকালের সেরা উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান? – তিনটা প্রশ্নের উত্তরই এক – অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। তিনি জিম্বাবুয়ে তো বটেই, নব্বই দশকের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান ছিলেন। আর অবশ্যই কোনো সন্দেহ ছাড়া বলা যায় – সর্বকালের সেরা উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানদের একজন তিনি।

যাদের সুবাদে জিম্বাবুয়ে নব্বই দশকে একটু একটু করে ত্রাশ হয়ে উঠতে পেরেছিলেন সেই সেনানী দলের অগ্রাধিনায়ক হলেন ফ্লাওয়ার। অধিনায়ক হিসেবেও ফ্লাওয়ারকে অন্তত জিম্বাবুয়ের ইতিহাসে দিব্যি ঠাঁই দেওয়া যায়। এই ফ্লাওয়ারই ১৯৯৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে অধিনায়ক হিসেবে জিতিয়েছিলেন দলকে, তাও পাকিস্তানের মাটিতে। সেটা ছিল জিম্বাবুয়ের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট জয়।

সবচেয়ে ভাল সময় ছিল নিশ্চয়ই ২০০০ সালের নভেম্বর থেকে ২০০১ সালের নভেম্বর। সেই সময় এক পঞ্জিকাবর্ষে করেন ১৪৬৬ রান। গড় ১৩৩.২৭। এর মধ্যে হারারেতে টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা একক অনবদ্য পারফরম্যান্স দেখান তিনি ব্যাট হাতে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ইনিংসে করেন ১৪২ ও ১৯৯ রান, যেখানে দলের মাত্র বাকি তিন ব্যাটসম্যান ২০-এর ওপর রান করতে পারেন।

অ্যান্ডি নিজে ওই ম্যাচে খেলেন ১৫৬ রানের ইনিংস। ভাই গ্র্যান্ট ফ্লাওয়ার করেন ২০১ রান। তবে, অ্যান্ডির প্রিয় প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। ১০ টেস্ট ইনিংসে ভারতের বিপক্ষে করেন ৮২০ রান। তিনটি সেঞ্চুরি আর চারটি হাফ সেঞ্চুরি – সেরা ইনিংস ২৩২ রানের।

ভারতের মাটিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের চার ইনিংসে তিনি করেছিলেন যথাক্রমে ১৮৩, ৭০, ৫৫ ও ২৩২ রান। কে জানে এই সামর্থ্যের সুবাদেই তিনি হয়তো দীর্ঘ ১৫ বছর ইংল্যান্ড ও ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) অধীনে সহকারী কোচ, প্রধান কোচ, এ দলের কোচ, ডিরেক্টর অব কোচেস-সহ বিভিন্ন পদে কাজ করে গিয়েছেন।

তা, ভারতের বিপক্ষে এই জ্বলে ওঠার রহস্যটা কি?  ডিএনএকে-দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এর একটা বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেন ফ্লাওয়ার। তিনি বলেন, ‘ভারতের পরিবেশটাই তো অন্যরকম। ওটা ক্রিকেটের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর ও উদ্দীপনাদায়ক জায়গা। ওখানে সিরিজ হলেই কি রকম পরিস্থিতিতে আমরা খেলবো সেটা জিম্বাবুয়ে দলের হয়ে খেলেও আমরা জানতাম। ওদের দর্শকরা সব রকম খবর রাখে। খেলোয়াড় হিসেবে ওই পরিবেশটা চ্যালেঞ্জিং। আমি ভারতীয় স্পিনারদের সামনে নিজের স্কিলকে চ্যালেঞ্জে ফেলতে পছন্দ করতাম। আমি উইকেটরক্ষক ছিলাম। ফলে, সব কিছু ভাল দেখার ক্ষমতা ছিল। আর ডেভ হটনের সাথেও এই ব্যাপারে অনেক কথা বলতাম, সবাই জানে ও স্পিন বোলিংয়ে কতটা ভাল ছিল। আর ভারতের মাটিতে দিল্লী টেস্টে প্রথম নেমেই যখন সেঞ্চুরি করে ফেললাম, তখন আত্মবিশ্বাস অনেক বেড়ে যায়। বুঝতে পারি ভারতীয় স্পিনারদের আমি খেলতে পারব। এরপর থেকে ভারতের বিপক্ষে খেলতে আমি এক্সাইটেড থাকতাম। ওই রকম স্পিনের বিপক্ষে খেলতে খেলতে দক্ষতা বাড়ানোর সুযোগ থাকতো। সেটা আমাকে আরও বেশি উজ্জীবিত করত।’

স্পিনের বিপক্ষে মাস্টার ছিলেন অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। আর সেই মাস্টারি তিনি করতেন রিভার্স স্যুইপ, দৃঢ়তা আর অনমনীয় চারিত্রিক বৈশিষ্ট দিয়ে। সেটা করেই ৬৩ টেস্টের ক্যারিয়ারে তিনি রান তুলেছেন ৫১.৫৪ গড়ে। উইকেটরক্ষক ব্যটাসম্যানদের জন্য এটা ‍খুবই অস্বাভাবিক একটা টেস্ট ব্যাটিং গড়। কারণ, টানা উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকার পর আবার ওপরের দিকে ব্যাটিং করা যে কত কঠিন – সেটা বলে না দিলেও চলে।

উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যারা কমপক্ষে এক হাজার রান করেছেন তাতে এই ফ্লাওয়ারের চেয়ে বেশি গড় কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তি এবি ডি ভিলিয়ার্সর। কিন্তু ৫৩.৭০ ব্যাটিং গড়ের ভিলিয়ার্স উইকেটরক্ষকের কাজ সামলেছেন অল্প ক’দিন। আর ফ্লাওয়ার টানা এই কাজ করেছেন। টানা বলতে ১০ বছর!

হয়তো এই যাত্রাটা আরও লম্বা হত, হয়নি। ২০০৩ বিশ্বকাপে মাঠে নামেন কালো আর্মব্যান্ড পড়ে। গণমাধ্যমে তিনি ও জিম্বাবুয়ের পেসার হেনলি ওলোঙ্গা গণমাধ্যমের কাছে এক লিখিত বিবৃতি ছিলেন যার শিরোনাম ছিল ‘গণতন্ত্রের মৃত্যু’। সেই বিশ্বকাপের পরই অবসর। পাঁচ বছর পর শুরু করলেন ইংল্যান্ডের হয়ে নিজের কোচিং ক্যারিয়ার। এরপর নিজের অধরা অনেক স্বপ্নই তিনি ইংল্যান্ডের হয়ে পূরণ করেছেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...