শেষ রজনীর নীরব ব্যাথা

মোহাম্মদ আশরাফুল, নামের সাথে মিলিয়ে যাকে একটা সময় বলা হত বাংলাদেশের ‘আশার ফুল’। যদিও, সেই আশা নিরাশা বনে গেছে অনেক আগেই। ক্যারিয়ারে তিনি বাংলাদেশকে সুখস্মৃতি যতটা না দিয়েছেন দু:খ দিয়েছেন তার চেয়েও অনেক বেশি। একটা সময় বাংলাদেশ দলের স্মরণীয় সব জয়ে যার নামটা অবধারিত ভাবেই লেখা হয়ে থাকত – সেই আশরাফুলের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে গেছে ফিক্সিং নামের কালি মেখে।

ক্রিকেট বিশ্বে তাই আশরাফুলের নামটা এখন অতীত। তবে, ফিক্সিং জনিত নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে খেলছেন তিনি। জাতীয় দলের জার্সিতে একটা ম্যাচ অন্তত খেলতে চেয়েছেন বহুবার, বহু সাক্ষাৎকারে বার বার জানিয়েছেন আকুতি।

কিন্তু, ব্যাটে-বলে হয়নি। কখনওই আর বাংলাদেশ দলের জন্য বিবেচিত হননি তিনি। তাই তো, এক রাশ আক্ষেপ নিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকেও বিদায়ের ডাক দিয়ে ফেলেছেন তিনি। এই বছরই সব রকমের ক্রিকেটকে বিদায় বলে দেবেন তিনি। হাতে আর অল্প কিছুদিন সময়।

সেই অর্থে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগটা তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ লিস্ট ‘এ’ টুর্নামেন্ট। না, বিদায়ী এই টুর্নামেন্টে তাঁকে ঘিরে তেমন কোনোই আয়োজন ছিল না। তারকাবহুল মোহামেডান দলে আছেন তিনি। সেখানে সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মেহেদী হাসান মিরাজ, রনি তালুকদার কিংবা ইমরুল কায়েসদের মত তারকার ছড়াছড়ি। প্রথম ১০ টা ম্যাচে তাই একাদশেই জায়গা হয়নি ৩৯ বছর বয়সী মোহাম্মদ আশরাফুলের।

একদশ তম ম্যাচে প্রথম সুযোগ মেলে। সেখানে শুরুতে আশরাফুল স্বভাবজাত মারকুটে ব্যাটিংটাই করেন। ইতিবাচক শুরুটা অবশ্য টেনে নিয়ে যেতে পারেননি বেশি দূর। আরিফুল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার আগে করেন ২৭ রান। ৩৬ টি ডেলিভারিতে খেলা এই ইনিংসে ছিল চারটি চার।

আশরাফুলের এই ইনিংস যেন তাঁর অনেক না পাওয়ার ক্যারিয়ারেরই প্রতিচ্ছবি। আশরাফুল আসলে কত বড় কিংবদন্তি হতে পারতেন? একটা উদাহরণ দেওয়া যাক। ইসএসপিএন-এর এক পোস্টারে একবার ক্রীড়াবিশ্বের পাঁচ ‘আইকন’ জায়গা পান। দুই পাশে চার মহারথী – টাইগার উডস, শচীন টেন্ডুলকার, ডেভিড বেকহ্যাম ও মাইকেল শুমাখারের ছবি; মাঝে জ্বলজ্বল করছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের মুখটা!

হ্যাঁ, আশরাফুল ছিলেন এতটাই সম্ভাবনময়। অথচ, ক্যারিয়ারের শেষ বেলায় ঘরোয়া ক্রিকেটেও প্রথম দশ ম্যাচ তাঁকে থাকতে হয় একাদশের বাইরে। একেই হয়তো নিয়তি বলে, কিংবা বলে ভাগ্য। চাইলে কর্মও বলতে পারেন। আসলে মানুষ যা করে – ফলাফলটাও তো তেমনই আসে সবসময়।

 

লেখক পরিচিতি

সম্পাদক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link