লাতিন-বাংলা সুপার কাপ। নাম শুনলেই যে কেউ ভেবে নিতে পারেন- দূর্দান্ত কোন এক আয়োজন। কিন্তু বিতর্ক আর সন্দেহের জালে নিন্দিত এক টুর্নামেন্টে পরিণত হতে চলেছে আয়োজনটি। দলের মান, অব্যবস্থাপনা আর উচ্চমূল্যের টিকিট- সব মিলিয়ে স্রেফ এক জগাখিচুড়িতে পরিণত হয়েছে লাতিন-বাংলা সুপার কাপ।
কথা ছিল ব্রাজিল, আর্জেন্টিনার ঘরোয়া ফুটবলের ক্লাবগুলোকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। কিন্তু আর্জেন্টিনা থেকে আগত অ্যাতলেটিকো শার্লোনকে নিয়ে খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে তো রীতিমত চক্ষু চড়কগাছ। আর্জেন্টিনার ঘরোয়া ফুটবলে মোট সাতটি স্তর রয়েছে। যেখানে খেলছে মোট ১৩৮টি ক্লাব। কিন্তু সেই ক্লাবগুলোর তালিকাতে নেই অ্যাতলেটিকো চার্লোন। যার অর্থ দাঁড়ায় অপেশাদার এক ক্লাবকে নিমন্ত্রণ জানিয়েছে আয়োজক সংস্থা। রীতিমত পাড়ার এক ক্লাবকে দেওয়া হচ্ছে বিশ্বমানের ফ্যাসিলিটি।
সেদিক থেকে, অন্তত ব্রাজিলের ক্লাবটি মানসম্মত। ব্রাজিলিয়ান ঘরোয়া ফুটবলের তৃতীয় স্তরের দল সাও বেনার্ডো। তাদের বয়সভিত্তিক দলকেই পাঠানো হয়েছে বাংলাদেশে। এমনকি তাদের সম্পর্কে ইন্টারনেটেও রয়েছে যথাযথ তথ্য। কিন্তু প্রশ্নটা হচ্ছে, এই টুর্নামেন্টে আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য কি? সন্দেহের ডালপালা বিস্তার ঘটতে শুরু করেছে নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে।

এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে এএফবি বক্সিং প্রমোশন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড কোম্পানি। তাদেরকে বেশ কিছু সর্তের ভিত্তিতে জাতীয় স্টেডিয়ামে ম্যাচ আয়োজনের সুযোগ করে দিয়েছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। এর মধ্যে ছিল টিকিট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটা অংশ প্রদান। কিন্তু আয়োজক কমিটি সেই সর্তের বরখেলাপ ইতোমধ্যেই করে ফেলেছে।
লাতিন-বাংলা সুপার কাপের সর্বনিম্ন টিকিটের দাম ধরা হয়েছিল ১ হাজার টাকা। বাংলাদেশের ফুটবল নবজাগরণের পথে রয়েছে। তবে আপামর জনতার আগ্রহ আর সামর্থ্যের মাঝের সেতুবন্ধনটা করতে পারেনি আয়োজক প্রতিষ্ঠানটি, কিংবা বলা যেতে পারে তারা চায়নি। অন্যদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনি ভেঙে দর্শক প্রবেশের ঘটনাও ঘটে গেছে টুর্নামেন্টের দুই ম্যাচে।
পাশাপাশি ম্যাচ পরবর্তী সময়ে স্টেডিয়াম ও সংলগ্ন এলাকায় পরিষ্কারের সর্তও মানেনি এএফবি। অব্যবস্থাপনার সর্বশেষ সংযোজন হিসেবে যুক্ত হয়েছে সাংবাদিককে হেনস্থা করবার ঘটনা। এসব ঘটনা আয়োজনের উদ্দেশ্যকে বেশ ঘোলাটে করে ফেলেছে। তবে কি আয়োজক প্রতিষ্ঠানটি কইয়ের তেলে কই ভাজতে চেয়েছিল, নামমাত্র এক টুর্নামেন্ট আয়োজন করে? এর পেছনে কি লুকিয়ে আছে আরও কোন সুপ্ত উদ্দেশ্য?

পাশাপাশি এখন আরও প্রশ্নের উদ্রেক ঘটছে। আয়োজক প্রতিষ্ঠান যথাযথভাবে দলগুলকে পারিশ্রমিক কিংবা সম্মানী প্রদান করতে পারবে তো? নাকি, বাংলাদেশ ফুটবলের নতুন দিনের দিশারিরা স্রেফ এক ধুম্রজালের পেয়াদা হিসেবে ব্যবহৃত হলেন? এত প্রশ্নে জর্জরিত আয়োজন থমকে গেছে মাঝপথে। ১১ ডিসেম্বর ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার দুই ক্লাবের মধ্যে ম্যাচ হওয়ার কথা থাকলেও- সে ম্যাচ আপাতত স্থগিত।
এই টুর্নামেন্টের ভবিষ্যত শেষ অবধি কি হবে- সেটা বলা মুশকিল। তবে বাংলাদেশ ফুটবল সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভবিষতে আরও সতর্ক হওয়া প্রয়োজন। চটকদার প্রস্তাবনায় সম্মতি জানানোর আগে, প্রতিষ্ঠানের সামর্থ্য ও সক্ষমতা পর্যালোচনা করে নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি স্বচ্ছতার বিষয়ে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়ার অবকাশ রাখা হবে না সমীচিন।











