বিগত কয়েক বছর ধরে আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগে লিওনেল মেসির পর অন্যতম সফল মুখ লাউতারো মার্টিনেজ। গত বছরের কোপা জয়ের পিছনের লাউতারোর ভূমিকা ছিল অনেক। তবে বিশ্বকাপে এসে যেন খেই হারিয়ে ফেললেন। বিশ্বকাপের অর্ধেক পথ পাড়ি দেওয়া হয়ে গেলেও এখনো আলো ছড়াতে পারেননি তিনি। এখন পর্যন্ত রয়েছেন গোলশূন্য। কী এমন কারণে এই ফর্মহীনতা কিংবা স্বপ্রতিভ না থাকা?
নতুন খবর বলছে, এই বিশ্বকাপ যাত্রায় লাউতারো মার্টিনেজ গোড়ালির একটা চোট বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ নিয়ে ইতালির এক গণমাধ্যমের সামনে তিনি নিজেই মুখ খুলেছেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘খুবই দু:খজনক ব্যাপার হচ্ছে, আমার গোড়ালিতে একটা চোট রয়েছে। আমি প্রতি ম্যাচেই ব্যথানাশক ইনজেকশন দিয়ে খেলছি। আর্জেন্টিনার কোচ, সতীর্থরা সবসময়ই আমার পাশে ছিল, এখনও আছে।’
সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার বাঁধার নাম ক্রোয়েশিয়া। এই ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষেই গত বিশ্বকাপে ৩-০ গোলে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। তবে সময় বদলেছে। সেই আর্জেন্টিনার দলটার তুলনায় এ দলটা অনেক বেশি ভারসাম্যপূর্ণ। কিন্তু ক্রোয়েশিয়া তো আর পিছিয়ে যায়নি। আগের বারের ফাইনালিস্ট দলটা এবার ঠিকই সেরা চারে জায়গা করে নিয়েছে।
তাই লড়াইটা কঠিন হবে বলে মন্তব্য করে মার্টিনেজ বলেন, ‘ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটা কোনোভাবেই সহজ হবে না। তাদের দারুণ সব অভিজ্ঞতাপূর্ণ খেলোয়াড় রয়েছে। তারা গতবারের ফাইনালিস্ট ছিল। তাই আমাদের পরিকল্পনা সাজাতে হবে অন্যভাবে। নিজেদের সেরাটা বের করে আনতে হবে।’
লাতিন আমেরিকার আরেক জায়ান্ট, এ বিশ্বকাপে অন্যতম দাবিদার ব্রাজিল এই ক্রোয়েশিয়ার কাছে হেরেই বিদায় নিয়েছে। সেই কথার সূত্রে মার্টিনেজ বলেন, ‘ব্রাজিলের বিদায় অবশ্যই বিশ্বকাপের জন্য অঘটন। তবে আমরা খুশি যে, আমরা কোয়ালিফাই করতে পেরেছি। এখন শুধু সামনের কথা ভেবে এগোতে হবে।’
আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ১ টায় ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা আর ক্রোয়েশিয়া। ক্রোয়েশিয়ার মার্সেলো ব্রোজোভিচ লাউতারো মার্টিনেজের সাথেই ইন্টার মিলানে খেলেন। তাই সেমির লড়াইয়ে এবার মুখোমুখি লড়াইয়ে থাকতে হচ্ছে এ দুই ক্লাব সতীর্থকে।
আর্জেন্টিনার হয়ে ২০১৮ তে অভিষেক হয়েছিল লাউতারো মার্টিনেজ। সেই থেকে আস্থার প্রতিদান দিয়ে আসছেন তিনি। এরই মধ্যে ৪৫ ম্যাচে করেছেন ২১ গোল। তবে এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপে গোল পাননি তিনি। সেমিফাইনালে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে নিশ্চিতভাবেই সেই ফারাটা তিনি এবার কাটাতে চাইবেন। এখনকার পরিস্থিতিতে আর্জেন্টিনার হয়ে যে-ই গোল করবেন সে-ই ইতিহাস গড়ার এক মঞ্চে ঢুকে পড়বেন। ফর্মহীনতা কাটিয়ে উঠতে তাই এর চেয়ে বড় মঞ্চ বোধহয় লাউতারো আর পাবে না।
যদিও জুলিয়ান আলভারেজের দুর্দান্ত ফর্মের কারণে প্রথম একাদশে সুযোগ মিলছে না মার্টিনেজের। তবে প্রত্যেকটা ম্যাচেই তিনি বদলি হয়ে অন্তত মাঠে নেমেছেন। তাই সুযোগ সীমিত থাকলেও সেটি এখন তাঁকে লুফে নিতে হবে। আর বিশ্বকাপের ইতিহাসে কত খেলোয়াড় যে এই বদলি নেমেই ইতিহাস গড়েছেন তার তো ইয়ত্তা নেই।
তাই লাউতারো মার্টিনেজের সামনে এখনো নিজের নামটাকে আরো বড় করার হাতছানি রয়েছে। কে জানে, বিশ্বকাপের প্রথম দিকে ব্রাত্য হয়ে থাকা মার্টিনেজের এ বিশ্বকাপের শেষের চিত্র হয়তো সফলতার মোড়কে অন্যভাবে লেখা হয়ে গেছে। ব্রাত্য থেকে জাত্য হওয়ার উদাহরণ তো আর কম নেই।