মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট মাঠের অনুশীলন ছাড়া তাঁকে খুব বেশি দেখা যায় না। দেখা যাবে কি করে, খেলার সুযোগই বা কোথায়। তিনি হলেন আমিনুল ইসলাম বিপ্লব। লেগ স্পিনার। লেগ স্পিনের বিপ্লব করতেই এসেছিলেন। কিন্তু নিজেকে, প্রমাণের মঞ্চ পাননা বললেই চলে।
কারণ, বাংলাদেশে স্পিন মানেই বাঁহাতি কিংবা অফ স্পিনের ছড়াছড়ি। সেখানে লেগ স্পিনার এর উত্থান হয় কালেভদ্রে। কিংবা উত্থান হলেও স্রোতে টিকে থাকতে পারেনা তারা। কথায় বলা হয় যে, লেগ স্পিনার পালা হলো হাতি পালার সমান। একজন লেগ স্পিনারের যত্ন কি করে নিতে হয় সেটা বাংলাদেশ ঠিক জানেনা।
অথচ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্গা, আফগানিস্তান- উপমহাদেশের প্রতিটি দলেরই লেগ স্পিনার রয়েছে। টি-টোয়েন্টি আর ফ্র্যাঞ্চাইজির যুগে তাঁদের চাহিদাও প্রচুর। আর বাংলাদেশ দলে লেগ স্পিনার না থাকার আক্ষেপ দীর্ঘদিনের। এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেট কিংবা বিপিএলেও সচরাচর চোখে পড়েনা লেগ স্পিনারদের। গেল বিপিএলে বাংলাদেশে লেগ স্পিনারের অপ্রতুলতার দিকটি ভাবিয়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খেলতে আসা প্রোটিয়া গ্রেট ফাফ ডু প্লেসিসকে।
তবুও মাঝেমধ্যে কিছু তরুণ এসে লেগ স্পিন নিয়ে স্বপ্ন দেখায় বাংলাদেশকে। ঘরোয়া ক্রিকেটে সর্বোচ্চ পর্যায়ে খেলেন এমন লেগ স্পিনারদের মধ্যে আমিনুল ইসলাম বিপ্লব ছাড়াও আছেন- জুবায়ের হোসেন লিখন, রিশাদ হোসেন ও মিনহাজুল আবেদিন আফ্রিদি। এর মধ্যে বিপ্লব ও লিখনের রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা।
বাংলাদেশের হয়ে ছয় টেস্ট, তিন ওয়ানডে আর এক টি-টোয়েন্টিতে থেমে আছে লিখনের ক্যারিয়ার। ৬ টেস্টে লিখন নিয়েছেন ১৬ উইকেট। এর মধ্যে আছে একটি পাঁচ উইকেটও। ২০১৫ সালে দল থেকে বাদ পড়ার পর তার দিকে আর নজর দেয়নি বিসিবি। অন্যদিকে আমিনুল জাতীয় দলের হয়ে ১০ টি টি–টোয়েন্টি খেলেছেন লেগ স্পিনার হিসেবে। দেশের হয়ে খুব বেশি ম্যাচে খেলার সুযোগ জুটেনি তাঁর ভাগ্যে।
তরুণ লেগ স্পিনার মিনহাজুল আবেদিন আফ্রিদির বোলিংয়ে মুগ্ধ হয়েছিলেন খোদ মাশরাফি বিন মুর্তজাও। মাশরাফি মন্তব্য করেছিলেন, একটু সুযোগ ও পরিচর্যা পেলে তরুণ আফ্রিদি হতে পারে বাংলাদেশের লেগ স্পিনার খরার সমাধান।
গেল বছর বিসিবি কর্মকর্তা খালেদ মাহমুদ সুজন লেগ স্পিনার নিয়ে ভাবনা জানাতে গিয়ে জানিয়েছিলেন, আগামী বিশ্বকাপে লেগ স্পিন নিয়ে তেমন কিছু হচ্ছে না, তবে লেগ স্পিনার তৈরি করার চিন্তা আছে তাদের। তিনি আরও বলেছিলেন হুট করেই লেগ স্পিনার তৈরী করা যাবে না। তাছাড়া বাংলাদেশে খুব ভালো মানের লেগ স্পিনার ও নেই। ভালো মানের লেগ স্পিনার থাকলে সবাই খেলানোর চিন্তা করত।
লেগ স্পিনার নিয়ে পরিকল্পনার আভাস দিয়েছিলেন তিনি। লেগ স্পিনে উন্নতি করতে চেয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘আগামী জাতীয় লিগে লেগ স্পিনার যুক্ত করব এবং বাধ্যতামূলক করে দিতে হবে লেগ স্পিনার খেলাতে হবে। লেগ স্পিনারদের ম্যাচ খেলানোর ব্যবস্থা করা জরুরি।’
সেই অনুযায়ী ২০২২ এর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের খেলায় ক্রিকেট বোর্ড থেকে লেগ স্পিনারকে খেলানোর বাধ্যবাধকটা আরোপ করা হলেও, সেই নিয়ম মানা হয়নি। বরাবরের মতো লেগ স্পিনারদের অবহেলা করা হয়েছে। কারণ জানতে চাইলে উইকেটের প্রসঙ্গ টেনে বলা হয়েছে টানা খেলা হওয়ায় এসব উইকেটে রিস্ট স্পিনারের চেয়ে ফিঙ্গার স্পিনারদেরই বেশি নিরাপদ মনে করেন ঘরোয়া ক্রিকেটের কোচরা।
প্রাকটিস মাঠে লেগ স্পিনারদের যা একটু দেখা যায়, খেলার মাঠে সুযোগটা সচরাচর মেলে না। কিন্তু ম্যাচ না খেললে দক্ষতা আসবে কিভাবে? একদিকে ম্যাচে খেলার সুযোগ দেয়া হচ্ছেনা, অন্যদিকে দায়সারা ভাবে বলা হচ্ছে আমাদের কোন ভালো লেগ স্পিনার নেই। তবে এই সংকট হতে উত্তরণের উপায় কি?
বাস্তবতা হলো একজন লেগ স্পিনারকে গড়ে তোলার জন্য যা যা করা উচিৎ তাঁর কিছুই আসলে করা হয়না। ঠিক মত ম্যাচ খেলার সুযোগও তারা পাননা। বাংলাদেশের ক্রিকেটে একজন লেগ স্পিনারের আক্ষেপ মেটাতে হলে বিপ্লব, যুবায়ের, আফ্রিদিদের যত্ন নেয়া প্রয়োজন। ঘষে-মেজে তাদের সেরাটা বের করে আনা প্রয়োজন। ম্যাচ খেলার সুযোগ দেয়া প্রয়োজন। সুযোগ ছাড়া তো আর কোনো ভাবেই লেগ স্পিনারদের মান যাচাই সম্ভব নয়।