আক্রমণ বিনা জয়লাভ হয় কি মহীতে!

সময়ের চাকা ঘুরলো, তারিখ পালটে গেল; বদলে গেল ক্যালেন্ডারে পাতা। বছর না ঘুরতে আবার একই অবস্থানে দাঁড়িয়ে ইংল্যান্ড। এবারের ভেন্যু ট্রেন্ট ব্রিজ, প্রতিপক্ষ সেই নিউজিল্যান্ড। ট্রেন্ট বোল্ট থাকায় ব্ল্যাকক্যাপসদের বোলিং বিভাগ আগের চেয়ে শক্তিশালী। শেষ দিনে ইংল্যান্ডের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ২৯৯ রান, হাতে ওভার সংখ্যা মাত্র ৭২। ওভারপ্রতি চারের বেশি রান প্রয়োজন।

৬ জুন, ২০২১। লর্ডস টেস্টের শেষ দিনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের লক্ষ্যমাত্রা ২৭৩ রান। দিনের খেলা তখনও বাকি ৭৫ ওভার। ব্যাট করতে নেমে মাটি কামড়ে পড়ে থাকার চেষ্টায় মত্ত ছিলেন ইংলিশ ব্যাটাররা।

জয়ের জন্য ওভারপ্রতি প্রায় ৩.৫ রান করে প্রয়োজন। তবুও ঘরের মাঠে সেদিন জয়ের কোনো চেষ্টাই করেনি বার্নস, সিবলিরা। ৭০ ওভারে ৩ উইকেটে ১৭০ রান তুলতে ড্র মেনে নেয় দুই দল।

সময়ের চাকা ঘুরলো, তারিখ পালটে গেল; বদলে গেল ক্যালেন্ডারে পাতা। বছর না ঘুরতে আবার একই অবস্থানে দাঁড়িয়ে ইংল্যান্ড। এবারের ভেন্যু ট্রেন্ট ব্রিজ, প্রতিপক্ষ সেই নিউজিল্যান্ড। ট্রেন্ট বোল্ট থাকায় ব্ল্যাকক্যাপসদের বোলিং বিভাগ আগের চেয়ে শক্তিশালী। শেষ দিনে ইংল্যান্ডের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা এবার ২৯৯ রান, হাতে ওভার সংখ্যা মাত্র ৭২। ওভারপ্রতি চারের বেশি রান প্রয়োজন।

প্রাথমিকভাবে জয়ের চিন্তা খানিকটা মাথায় এলেও সেটা মুছে যায় অল্পতেই। ৯৩ রান তুলতেই সাজঘরে টপ অর্ডারের চার ব্যাটার। এমন পরিস্থিতিতে ড্র তো দূর ম্যাচ বাঁচানোই বড় দায়। চোখ রাঙাচ্ছিল হারের শঙ্কা।

সেখান থেকে রচিত হয় ভিন্ন এক গল্পের। বেন স্টোকস ও জনি বেয়ারস্টোর তাণ্ডবে ট্রেন্ট ব্রিজে রোমাঞ্চকর এক জয় পায় ইংল্যান্ড। ২৯৯ রানের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা স্টোকস-বেয়ারস্টোর ঘাড়ে চড়ে মাত্র ৫০ ওভারেই টপকে যায় ইংলিশরা।

একই প্রতিপক্ষ, ঘরের মাঠ, আগের চেয়ে কঠিন আর প্রায় অসাধ্য এক চ্যালেঞ্জ – কিন্তু এবার ফলাফল আগের ঠিক উলটো। কারণ জয়ের দুই নায়ক বেয়ারস্টো কিংবা বেন স্টোকস কেউই ছিলেন না লর্ডসে ড্র হওয়া সেই টেস্টে। কিন্তু এমন ব্যাটিং বিপর্যয়ের পরেও কেন পালটা আক্রমণ?

ম্যাচ বাঁচানোর চিন্তা ছাপিয়ে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে রোমাঞ্চকর এই জয়ের প্রথম সারির দুই নায়ককে নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। কিন্তু এই পালটা আক্রমণের পরিকল্পনার পেছনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম রয়ে গেছেন পর্দার আড়ালে।

ম্যাককালাম আর আক্রমণাত্মক ব্যাটিং এই দুই শুব্দ একটা আরেকটার সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। ক্রিকেট ইতিহাসের এক মারকুটে তারকা ছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। বলকে তাঁর মত পেটাতে পারা ব্যাটার ক্রিকেট ইতিহাসেই বিরল। টেস্ট, ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি – ম্যাককালামের লক্ষ্য শুধুই বলকে বাউন্ডারি ছাড়া করা।

ক্যারিয়ারের শেষ টেস্টেও নিজের আধিপত্য ধরে রাখেন তিনি। গড়েন বিশ্ব রেকর্ডও! মাত্র ৫৪ বলে সেঞ্চুরি করে টেস্ট ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরিতে যৌথভাবে নাম লেখান ম্যাককালাম। ২০১৬ সালে ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে খেলেন ১৪৫ রানের তাণ্ডব এক ইনিংস।

টেস্টটাও টি-টোয়েন্টি মেজাজে খেলা ম্যাককালাম এখন ইংল্যান্ডের কোচ। হ্যাঁ, আর আক্রমণের শুরুটা তিনি করলেন খোদ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই। কে জানতো, যে ম্যাককালামকে বদলে যাওয়া ইংল্যান্ডের কান্ডারি মানা হয়, সেই তিনিই কি না ছক কষবেন নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে।

অধিনায়কের টুপিটা মিডল অর্ডারের আগ্রাসন বেন স্টোকসের মাথায়। দলে আছেন জনি বেয়ারস্টোর মত আরেক আগ্রাসী ব্যাটার। গেল বছর লর্ডস টেস্টে এই তিনজনের কেউই যুক্ত ছিলেন না দলের সাথে।

আর এই তিন তারকার কৌশলেই এবার ট্রেন্ট ব্রিজে দাপুটে এক জয় তুলে নিল ইংলিশরা। বছর খানেকের ব্যবধানে পালটে গেল সব। নতুন অধিনায়ক আর কোচের জুটিতে আক্রমণাত্মক ব্যাটিংকে রণকৌশল হিসেবে নিল ইংলিশরা। ফলস্বরূপ, অবিশ্বাস্য এক জয়ে আগ্রাসী এক জুটির অধীনে টেস্ট ফরম্যাটে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ইংলিশরা।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...