আফ্রো-এশিয়া কাপ: একই দলে বিরাট-বাবর-সাকিব!

বাবর-বিরাটের সাথে লিটনের ব্যাটিং দেখা অথবা জাসপ্রিত-আফ্রিদির সাথে মুস্তাফিজের কাটার দেখার সুযোগ করে দিচ্ছে এসিসি। আফ্রো-এশিয়ান কাপ হতে পারে এ সময়ের তারকাদের মিলনমেলা।

এই সময়ের ক্রিকেট সমর্থক আপনি। আজম আর বিরাট কোহলিকে এক সাথে খেলতে দেখার ইচ্ছেটা মাথায় ঘোরে নিশ্চয়ই। ঘোরে না? তাঁদের সাথে ধরুণ আমাদের লিটন দাস খেলছেন। আবার জাসপ্রিত বুমরাহ ও শাহীন আফ্রিদির সাথে খেলছে আমাদের মুস্তাফিজুর রহমান, কিংবা সাকিব আল হাসান। সবাই একই দলে। এমন একটা দল কল্পনা করেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া নিশ্চয়ই দুষ্কর।

অন্তত এশিয়ার ক্রিকেট ভক্ত হয়ে থাকলে এমন একটা ম্যাচের অপেক্ষা নিশ্চয়ই করেছনে মনে মনে। যদি বলি এশিয়া ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) এমনই এক দল এবং এদেরকে একসাথে বেশকিছু ম্যাচ খেলার পরিকল্পনা করছে তবে কেমন বোধ করবেন? হ্যাঁ, এমন একটা পরিকল্পনা করতে যাচ্ছে এসিসি। ‘অ্যাফ্রো-এশিয়া কাপ’ নামে এক টুর্নামেন্ট আয়োজনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে এসিসি।

তবে এই টুর্নামেন্ট একেবারেই নতুন নয়। এর আগে এই টুর্নামেন্টের দুইটি আসর অনুষ্ঠিত হয়েছিল। প্রথম আসরটা হয়েছিল ২০০৫ সালে। এরপরের আসর আবার ২০০৭ সালে হয়েছিল। এরপরই নানান প্রতিবন্ধকতায় বন্ধ হয়ে যায় সে টুর্নামেন্ট। তবে এসিসি চাইছে আসন্ন ২০২৩ এর পঞ্জিকায় এই টুর্নামেন্টের জন্যে একটা সময় বের করতে। তবে এখানটাও বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে।

প্রধান প্রতিবন্ধকতা ভারত-পাকিস্তান রাজনৈতিক পরিস্থিতি। এই দুই দেশের রাজনৈতিক সমস্যা ছড়িয়ে গেছে ক্রিকেট ময়দান অবধি। আগে নিয়মিত এই দুই দেশ দ্বিপাক্ষিক সিরিজে অংশ নিলেও এখন আর এমনটা দেখাই যায় না। কালভদ্রে আইসিসির টুর্নামেন্টে মুখোমুখি হয় ভারত-পাকিস্তান। তাতে অবশ্য এশিয়ার ক্রিকেট সমর্থকদের মন ভরে না।

এই দুই দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা ঠিক কতটুকুন হয় মাঠের ক্রিকেটে তা নিশ্চয় সবারই জানা। এই দুই দলের প্রতিযোগিতা দেখা ছাড়াও এই দুই দলের সেরা খেলোয়াড়দের একত্রে খেলতে দেখার একটা সুপ্ত বাসনা সব ক্রিকেট সমর্থকদের মধ্যেই থাকে। এমনটা হলে অবশ্য মন্দ হয় না।

আফ্রিকা মহাদেশের সেরা খেলোয়াড়দের নিয়ে গড়া দলের বিপক্ষে এশিয়ার বাঘা-বাঘা খেলোয়াড়রা একসাথ হয়ে লড়বে। এর চাইতে রোমাঞ্চকর আর কি ই বা হতে পারে? ২০০৫ সালে প্রথম যেবার হল সেবারই তো এর উন্মাদনা ছড়িয়ে গিয়েছিল সমগ্র ক্রিকেট মহলে। সেবার পাকিস্তানের ইনজামাম-উল হকের নেতৃত্বে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশের কিংবদন্তি খেলোয়াড়রা খেলেছিলেন।

বাংলাদেশের হয়ে মোহাম্মদ আশরাফুল ও মাশরাফি বিন মর্তুজা ছিলেন দলে। সেবার অনুষ্ঠিত হয়েছিল তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ। প্রথম ম্যাচটা জিতেছিল শন পোলকের নেতৃত্বাধীন ‘আফ্রিকা একাদশ’। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে পুরো সিরিজ জুড়েই রান সংকট ছিল। তবে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজে ১-১ এর সমতা এনে ফেলেছিল এশিয়া একাদশ।

সে ম্যাচে এশিয়া ২৬৮ রান টার্গেট দিয়ে ২৫০ রানেই আটকে দিয়েছিল আফ্রিকান খেলোয়াড়দের। সিরিজ নির্ধারণের জন্যে বাকি ছিল শেষ ম্যাচ। তবে শেষ ম্যাচটি পণ্ড হয়ে যায় বৃষ্টির বাঁধায়। ড্র-নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল দুই মহাদেশের তারকা ক্রিকেটারদের। সে আসরে সিরিজ সেরার পুরষ্কার জিতেছিলেন ভারতের জহির খান নয় উইকেট বাগিয়ে।

এর ঠিক দুই বছরের মাথায় ২০০৭ সালে আবার বসে অ্যাফ্রো-এশিয়া টুর্নামেন্টের। সে আসরে তিনটি ওয়ানডের পাশাপাশি নতুন সংযুক্ত করা হয়েছিল একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। এশিয়ার টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক ছিলেন শোয়েব মালিক। অন্যদিকে আফ্রিকানদের অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করেন কেনিয়ার তন্ময় মিশ্র। ভারতে অনুষ্ঠিত হওয়া সে আসরের টি-টোয়েন্টি ম্যাচটি জিতে নিয়েছিল এশিয়া একাদশ।

মাশরাফি দুই উইকেট নিয়েছিলেন। আর আবদুর রাজ্জাক পেয়েছিলেন একটি উইকেট। তাতে স্বল্প রানে আটকে ফেলা যায় আফ্রিকার একাদশকে। এরপর তামিম ইকবাল ঝড়ো ৩০ ও তিলাকরত্ন দিলশানের ৩৬ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলেন। যার সুবাদে অনায়াসে ছয় উইকেটের বিশাল জয় তুলে নেয় এশিয়া একাদশ।

আর ওয়ানডে সিরিজে রীতিমত পাত্তাই পায়নি আফ্রিকার একাদশ। জাস্টিন কেম্পের নেতৃত্বাধীন আফ্রিকা একাদশ ‘হোয়াইট ওয়াশ’ হয়েছিল সে আসরে। প্রতি ম্যাচেই আগে ব্যাটিং করে তিন শত রানের মাইলফলক পার করে এশিয়ার ব্যাটাররা। জবাবে ব্যাট করতে নেমে এশিয়ার বোলারদের সামনে খাবি খেয়েছিল আফ্রিকান ব্যাটাররা।

সেবার মাশরাফি খেলেছিলেন দুই ম্যাচ। উইকেট পেয়েছিলেন মোটে একটি। তাঁর সাথে শেষ ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন মোহাম্মদ রফিক। তিনি তুলে নিয়েছিলেন চারটি উইকেট। ২০০৭ আসরে ওয়ানডে সিরিজ সেরা হয়েছিলেন লংকান ক্রিকেটার মাহেলা জয়াবর্ধনে। অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি তিনি ২১৭ রান করেছিলেন তিন ম্যাচের সে সিরিজে। একটি করে সেঞ্চুরি ও হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন তিনি।

দীর্ঘ একটা বিরতির পর আবার আয়োজিত হতে চলেছে এই আসর। আফ্রিকান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের এতে সম্মতি রয়েছে। এখন ভারত ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে গ্রিন সিগনাল পাওয়ার অপেক্ষা। রাজনৈতিক দ্বন্দ ভুলে ক্রিকেটের কথা, ক্রিকেট পাগল ভক্তদের কথা মাথায় রেখে দুই বোর্ডের সম্মতি মিলবে প্রত্যাশা তো এমনই। বাইশ গজে বিরাট-বাবর জুটি লড়াই করবে, এ স্বাদ কি পূরণ হবে?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...