ব্যাটে এবার বিপ্লব আসুক

টি-টোয়েন্টির পর ওয়ানডেতেও বিরাট কোহলির স্থলে অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন রোহিত শর্মা। অধিনায়ক হিসেবে কখনোই মনে হয়নি বিরাট খুব চাপে আছেন। দায়িত্ব পাবার পর থেকেই অধিনায়ক হিসেবে তিনি ছিলেন দুর্দান্ত। আইসিসি ইভেন্টে সফল না হলেও ঘরের মাটিতে এবং বিদেশে তিনি ছিলেন ভারতের অন্যতম সফল অধিনায়ক। অধিনায়কত্বকে চাপ মনে না করলেও বেশ কিছু সময় ধরেই বিরাটের ব্যাটিং পারফরম্যান্স অনেকটাই হতাশাজনক। অনেকের মতেই অধিনায়কত্বের চাপটা প্রভাব ফেলছে বিরাটের ব্যাটিংয়েও।

তবে এটা সত্যি একজন অধিনায়ক হিসেবে ব্যাটিংয়ে সেরাটা দেওয়া, বিপদে দলের জন্য ঢাল হয়ে দাঁড়ানো ও খেলার সম্পূর্ণ পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়া এসব সাধারণ ব্যাপার। অধিনায়ক হিসেবে এই সবগুলোই ঠিকঠাক হওয়া লাগে। নাহলে দলের সাথে সাথে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সেও প্রভাবটা লক্ষ্য করা যায়। শুরুর দিকে অধিনাকের সাথে সাথে ব্যাটিংয়েও নিজের সেরা অবস্থানেই ছিলেন বিরাট। তবে ধীরে ধীরে যেনো এই দায়িত্ব চরম বাজেভাবে প্রভাব ফেলেছে তার ব্যাটিংয়ে। প্রথমে টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব, তারপর ওয়ানডে – ব্যাটিংয়ে মনযোগী হতে বিরাটের এমন সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই যৌক্তিক।

অধিনায়কত্ব ছাড়ায় তার উপর কোনো চাপই থাকবে না। আগের মতোই সম্পূর্ণ মনযোগ দিতে পারবেন ব্যাটিংয়ে। শুধু যে অধিনায়কত্ব তার ব্যাটিংয়ে প্রভাব ফেলেছে এমনটা নয়। প্রেস কনফারেন্স, অধিনায়ক হিসেবে অতিরিক্ত যে দায়িত্ব সেসবই মূলত বিরাটকে নিজের সেরা অবস্থান থেকে কিছুটা দূরে ঠেলে দিয়েছে। আর ভারতীয় দলে অধিনায়ক কোহলির চেয়ে ব্যাটার কোহলিই সবচেয়ে বেশি দরকার।

প্রায় ২.৫ বছর ধরেই সেঞ্চুরি নেই বিরাটের ব্যাটে। ইনিংসের হিসেবে সেটা ৫৭! ২০২০ সালের পর থেকে টেস্টে বিরাটের ব্যাটিং গড় মাত্র ২৬! তার মতো ক্যালিবারের একজনের জন্য এটা বেশ হতাশাজনক পারফরম্যান্স। তবে ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে তার ব্যাটিং গড় চল্লিশের উপরেই ছিলো। সাদা বলের ক্রিকেটে তার ব্যাটিংয়ের সাথে অধিনায়কত্বের চাপ এই ব্যাপারটা খুব একটা মিলানোর সুযোগ নেই। তবে কিছুটা প্রভাব পড়েনি এমনও নয়। ২০২০ এর আগে পঞ্চাশোর্ধ গড় থাকলেও বর্তমানে সেটি গেলো দেড় বছরে নেমে এসেছে চল্লিশের ঘরে।

অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর অনেকেই নিজের হারানো ফর্ম ফিরে পেয়েছিলেন। কিংবদন্তি ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকারও অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্যাটিংয়ে কিছুটা খারাপ সময় পার করছিলেন। দুইবার তিনি অধিনায়কত্ব পান। তবে ব্যাটিংয়ে প্রভাব ফেলছে মনে করায় এই দায়িত্ব থেকে তিনি সরে দাঁড়ান। তিনিও ভেবেছিলেন দুই দায়িত্ব সহজেই পালন করতে পারবেন। তবে একটা সময় নিজের উপর চাপ মনে করায় তিনি সরে দাঁড়ান। এবং ক্যারিয়ারের বাকি সময় ব্যাট হাতে দারুনভাবেই দাপিয়ে বেড়ান।

ভারতের হয়ে অন্যতম সেরা অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি অধিনায়কত্ব ছাড়ার পর বেশ কিছু দারুন ইনিংস খেলেছিলেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও ইংল্যান্ডে সিরিজ জয়ের পরেও দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ান সাবেক অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় যাতে করে তিনি ব্যাটিংয়ে মনযোগী হতে পারেন।

বিরাটের বর্তমানে বয়স ৩৩। এখনো বেশ ফিট থাকলেও এই বয়সে কাজের চাপটা মূলত তার ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলছে। ক্যারিয়ারের শেষ মুহূর্তে এসে অতিরিক্ত চাপ তার ক্যারিয়ারে হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব ছাড়ার সময়ও বিরাট বলেছিলেন, ‘কাজের চাপ কমাতেই মূলত দায়িত্ব ছাড়ছি।’ করোনা ভাইরাসের প্রকোপে লম্বা সময় বায়োবাবলে থাকায় মানসিক চাপ, অতিরিক্ত কাজের চাপও বেশ প্রভাব ফেলেছে বিরাটের ব্যাটিংয়ে। যার কারণে গেলো দেড় বছরে তার পারফরম্যান্স গ্রাফটা অনেকটাই নিচে নেমে এসেছে।

ভারতীয় ক্রিকেট এবং ক্রিকেট ভক্তরা অধিনায়ক কোহলির চেয়ে বেশি প্রত্যাশা করে ব্যাটার কোহলি থেকে। তাদের প্রত্যাশা বিরাট আরো কিছু রেকর্ড ভেঙে নিজের নাম লেখবেন। অধিনায়ক কোহলি অবশ্যই উপভোগ্য তবে ব্যাটার কোহলি তার চেয়েও বেশি উপভোগ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link