Social Media

Light
Dark

আসুন ডিয়েগো, উল্লাস করি

প্রিয় ডিয়েগো,

ads

কোথায় আপনি? লোকেরা বললো, আপনি নাকি গ্যালারিতে ছিলেন না!

আমি তো আপনাকে দেখলাম। আপনার দু পাশে হ্যাভিয়ের জানেত্তি আর হুয়ান রোমান রিকেলমেকেও বসে হাসতে দেখছিলাম। এখন নিশ্চয়ই আর মান-অভিমানের টানাটানিটা নেই? এমন দিনে কী আর কেউ অভিমান ধরে রাখে!

ads

আপনার কাছেই হুয়ান সেবাস্টিয়ান ভেরন, কার্লোস তেভেজ, হ্যাভিয়ের মাচেরানো বসে ছিলেন। কত শত না পাওয়ার গল্প করছিলেন ওরা। আপনি একটা ধমক দিয়ে উঠলেন, ‘আজ তোরা চুপ কর। তোদের সবার হয়েই তো আমার ছেলেটা ট্রফি জিতলো।’

লোকে বলে, আপনি নেই। আপনি চলে যাওয়ার পর এই নিয়ে দ্বিতীয়বার আপনার ছেলেরা মেজর কোনো টুর্নামেন্ট খেলতে নামলো, তাও আবার বিশ্বকাপ। লোকেদের কথা বিশ্বাস করতে পারি না। আপনি নিশ্চয়ই গ্যালারিতে ছিলেন।

নিশ্চয়ই আপনি আকাশী-সাদা জার্সিটা ওড়াতে ওড়াতে ঘামছিলেন এবং তারস্বরে চিৎকার করছিলেন। আপনাকে দেহরক্ষীরা আটকে রাখতে পারছিলো না। আপনি ওই ঝুল বারান্দা থেকে লাফিয়ে পড়তে চাচ্ছিলেন মেসির বুকে।

আজ তো আপনি লাফাবেনই, ডিয়েগো।

আপনার বড় আদরের ছেলেটা, আপনার লিওনেল মেসির আরেকটা কলঙ্ক যে অবশেষে ভঞ্জন হলো। আপনার কুন আগুয়েরোও একটা ট্রফি জেতায় সামিল হল, আগে তো কোপা জিতেছিলই। আপনার অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া গোল করে শিরোপা জেতালো। সবচেয়ে বড় কথা, আপনি বারবার যে কথা লোকেদের বোঝাতে চেষ্টা করেছেন, সেই কথাটা আজ পূর্ণতা পেলো-লিওনেল মেসি সর্বকালের সেরা ফুটবলার।

আমি বলছি না যে, আপনার মেসি আগে সেরা ছিল না।

আপনার বড় আদরের মেসি এই মহাবিশ্বে এসেছিলেনই কেবল জিততে। বয়সভিত্তিক বিশ্বকাপ জিতেছেন, অলিম্পিক সোনা জিতেছেন। আর ক্লাবে পা রাখার পর থেকে তো কেবল জয় আর জয়। বার্সেলোনার হয়ে এক গাদা লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগসহ গুনে গুনে ৩৫ টা ট্রফি জিতেছেন। নিজে ৬ বার বিশ্বসেরা খেলোয়াড়ের খেতাব জিতেছেন। ৬ বার ইউরোপের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন। এতো সব অর্জনের পর তাকে নিয়ে প্রশ্ন থাকার কোনো কারণ ছিলো না।

তারপরও লোকে প্রশ্ন করতো। আপনি বিরক্ত হতেন। আপনি লোকেদের গায়ে হাত তুলতেন। তারপরও লোকে বলতো যে, মেসির আর্ন্তজাতিক ট্রফি নেই; তাই সে সেরা নয়। কোপা জিতে নিল, এরপর লোকেরা বলতো, কোপায় কি হবে – বিশ্বকাপ তো নেই। আপনি বলেছিলেন, মেসি ওই ট্রফি নিয়েই তোদের দেখিয়ে দেবে; আপনি সাথে থাকতে চেয়েছিলেন। আজ না হয় আপনি হাত ছোঁয়া দূরত্বে নেই; তারপরও মেসি আপনার কথা রেখেছেন। আপনার মেসি ট্রফি জিতেছেন, মেসি আর্জেন্টিনাকে বিশ্বসেরা মর্যাদা দিয়েছেন। যেটা দিয়েছিলেন আপনি – সেই ১৯৮৬ নারে।

জানেন ডিয়েগো, আপনার ওপর আমার খুব রাগ।

আপনার কারণে এই আর্জেন্টিনার অনুরাগী হয়েছি। আপনাকে হাসতে দেখে হাসতে শিখেছি। আপনাকে কাঁদতে দেখে জেনেছি, ফুটবল বড় নিষ্ঠুর। সেই আপনিই আবার আমাদের কান্নার কারণ হয়েছিলেন।

২০১০ সালে মেসি-তেভেজ-মাচেরানোদের অতি সুন্দর খেলায় আবিষ্ট হয়ে এসেছিলাম। কিন্তু কেন আপনি বিশ্বকাপটা এনে দিতে পারলেন না? কেনো পারলেন না! কারণ আপনি কী এক ভুতুড়ে কারণে সেই সময়ের সেরা ডিফেন্ডার হ্যাভিয়ের জানেত্তিকে দলে নেননি। রাগারাগি করে রিকুয়েলমেকে দলে না নিয়ে নিলেন বুড়িয়ে যাওয়া ভেরনকে। এসব মিলিয়ে আপনার ওপর বড় রাগ ছিলো, ডিয়েগো।

আজ সব রাগ ধুয়ে গেল।

এ যেনো আপনার ঈশ্বরের এক মহাপরিকল্পনা ছিলো। আপনি চলে যাওয়ার পর ট্রফি দিয়ে আপনাকে শ্রদ্ধা জানাবেন আপনার মেসি। তাই সেদিন ট্রফি জেতা হয়নি। এ সবই নির্ধারিত ছিলো।

ডিয়েগো, সাবেইয়ার সাথে দেখা হয় আপনার?

আপনি না চাইলেও সাবেইয়া নিশ্চয়ই আপনাকে খুঁজে এসে দেখা করেন। ফুটবল পাগল মানুষ, আপনাকে না দেখে থাকতে পারেন? দু’জনই এখন স্বর্গে বসে কী গল্প করেন? নিশ্চয়ই ফুটবল নিয়ে, আর্জেন্টিনা নিয়ে কথা বলেন। আজ আপনাদের বড় আনন্দের দিন। সাবেইয়াকে বলবেন, আর আফসোসটা না রাখতে। মাত্র একটা গোলের জন্য সাবেইয়া ট্রফি জিততে পারেননি। নইলে কত আগেই তো মেসির স্বপ্নপূরণ হয়ে যেতো। আজ সাবেইয়াকে বলবেন, মাথাটা ঠাণ্ডা পানিতে ভিজিয়ে নিতে।

আমি জানি, আপনি এই চিঠি পড়ে হাসছেন।

কোপা আমেরিকা ট্রফিতে তো আপনার বুক ঠাণ্ডা হওয়ার কথা ছিল না। আপনি তো মেসির হাতে আরেকটু বড় কিছু দেখতে চেয়েছিলেন ডিয়েগো। সেটা আমরাও জানি। মেসিকে মানায় একটা বিশ্বকাপ। মেসি আপনার বিশ্বাসের মান রেখেছে। মেসিও ম্যারাডোনা হতে পেরেছে, কিংবা হয়তো আপনাকেও ছাড়িয়ে গেছে।

মেসির মানসিক বাঁধাটা পার করা দরকার ছিলো। ফাইনাল কী জিনিস, সে তো মেসির চেয়ে ভালো কেউ জানেন না। কেবল দরকার ছিল জিততে শেখা। সেটা মেসি শিখে গিয়েছিলেন কোপা আমেরিকার ফাইনাল দিয়ে। এবার সেই শিক্ষার চূড়ান্ত পরীক্ষা দিয়ে জিতলেন বিশ্বকাপ।

কেনো যেন মনে হচ্ছিল, কাতারেই এর ফল দেখতে পাবো আমরা। আমাদের স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। আসুন ডিয়েগো, আমরা বুকে হাত বেঁধে উদযাপন করি। দেখেছেন, কাতারে ট্রফিটা নিয়ে ঠিক আপনার মত করেই গ্যালারির সামনে এসে উল্লাস করল আপনার মেসি। জানি,  জার্সি ওড়াতে ওড়াতে গলা ফাঁটিয়েছেন আপনিও।

আপনাকে দেখে আরেকবার কাঁদতে চাই, ডিয়েগো। আসুন, ডিয়েগো; উল্লাস করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link