প্রচণ্ড তুষারপাত হচ্ছে কিংবা হচ্ছে প্রচণ্ড বৃষ্টি। অথবা রৌদ্রজ্জ্বল এক দিনের গোধূলি লগ্ন। ঠিক কোন কিছুই যেন বাঁধা দিতে পারে না ফুটবলকে। খুব বেশি বাজে পরিস্থিতি না হলে ফুটবল খেলা আটকে থাকে না। ফুটবলকে যেন আটকে রাখাই কঠিন। ‘শো মাস্ট গো অন’ প্রবাদটার যথার্থতা বজায় রাখে বোধহয় ফুটবলই।
এখানে কন্ডিশন খুব বেশি খেলার ফলাফলে প্রভাব ফেলে না। পুরো বিষয়টাই নির্ভর করে প্রতিভার উপর, পরিকল্পনার উপর। আর প্রতিপক্ষের শক্তিমত্তার উপর। একজন খেলোয়াড় নিজের নৈপুণ্যে ম্যাচ জিতিয়ে নিয়ে আসতে পারেন যে কোন সময়ে। তবে ক্রিকেট খানিকটা ভিন্ন।
একটু মজার ছলে যদি বলি, তবে পূব আকাশে সূর্য ওঠা থেকে শুরু করে হাওয়ার গতিবেগ সবকিছুই যেন প্রভাবিত করে ক্রিকেটকে। কন্ডিশন অনেক বড় একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায় ক্রিকেটের মাঝে। এই যে যেমন অস্ট্রেলিয়ার কন্ডিশন পেস সহায়ক। ভিন্ন চিত্র আবার উপমহাদেশে।
এখানকার অধিকাংশ উইকেটই খানিকটা স্পিন বান্ধব। প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যতা এনে দিয়েছে এমন সব পরিবর্তন। অস্ট্রেলিয়া এসে উপমহাদেশে খাবি খায়। আবার উপমহাদেশের দলগুলো সেনা কন্ডিশনে গিয়ে প্রচণ্ড লড়াই করে। ফুটবলে কিন্তু আপনি এই মহাদেশ ভেদে বৈচিত্রময় আচরণের দেখা পাবেন না। হ্যা খেলোয়াড়দের শারীরিক সক্ষমতা স্থানভেদে ভিন্ন হয়।
তবে ফুটবলীয় দক্ষতা সে তো সার্বজনীন। ল্যাতিন আমেরিকার দলগুলো যে ইউরোপে গিয়ে ইউরোপের দলগুলোকে হারিয়ে দেয় এমন উদাহরণ রয়েছে ভুড়ি ভুড়ি। আবার উল্টো চিত্রও তো বেশ সাধারণ। ফুটবলে যেখানে দলগত শক্তিমত্তাই নির্ধারণ করে ম্যাচের ফলাফল সেখানে ক্রিকেটে কন্ডিশন একটা বিশাল বড় ভূমিকা পালন করে।
উদাহরণ হিসেবে সাকিব আল হাসানের কথাই ধরা যাক। তর্ক সাপেক্ষে এই সময়ের সেরা স্পিনারদের একজন সাকিব। কিন্তু কেবল সাকিব তাঁর বুদ্ধিমত্তার বলেই সব উইকেট সাবার করতে পারেন বিষয়টা কিন্তু তেমন নয়। পিচ এর তাঁকে সাহায্য করা প্রয়োজন। পিচ বিন্দুমাত্র সাহায্য না করলে সাকিব আসলে নিজের উইকেটের ঝুলিটা পূর্ণ করতে পারেন না। যেমনটা ঘটেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে।
আবার যদি ‘ডিউ ফ্যাক্টর’-এর কথা বলি। দিবারাত্রির ম্যাচে এই শিশির অনেক বড় এক প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। তখন দুই দলের পরিকল্পনায় প্রথমেই জায়গা পায় ‘শিশির’। দলগুলো তখন পিচকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। তখন সব দলই চায় টসে জিতে আগে বল করতে। কেননা শিশিরে ভিজে বল প্রচণ্ডরকম পিচ্ছিল হয়ে যায়। আর সে বল দিয়ে বল করা বেশ কষ্টকর।
কিন্তু ফুটবলের শিশির বোধহয় সবচেয়ে বেশি অগ্রাহ্যকর এক ফ্যাক্টর। অধিকাংশ সময়েই ফুটবল ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হয় সন্ধ্যের দিকে। প্রাকৃতিক বিভিন্ন ফ্যাক্টর ক্রিকেটকে আরও বেশি কঠিনই যেন করে দেয়। খেলোয়াড়দের নিজেদের প্রতিভার প্রতিফলন ঘটানোর পেছনেও যেন এই কন্ডিশন মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তবে কিছু খেলোয়াড় থাকেন, যারা ছাপিয়ে যেতে পারেন সকল বাঁধা।
তাঁরা যেন সব কন্ডিশনেই সেরা। তবে ক্রিকেটে এমন খেলোয়াড়দের সংখ্যা হাতে গোনা। তবে মহাদেশ ভিত্তিক এই যে দূরত্ব আর দূর্বলতা। এটা যেন কমে আসছে ক্রমশ। ফ্রাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্ট খেলার সুবাদে খেলোয়াড়দের মাঝে ভিন্ন কন্ডিশনের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়ার বিষয়টা ঘটছে অতি দ্রুত। প্রাকৃতিক ফ্যাক্টর গুলোর প্রভাব হয়ত দিনে দিনে কমে যাবে।
তখন লড়াইটা হবে ঠিক ফুটবলের মতই। প্রতিভার লড়াই প্রতিভার সাথে। পরিকল্পনার লড়াই পরিকল্পনার সাথে।