যে পথের দিশা নেই

সময়টা ২০১২ সাল। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল কর্তৃক আয়োজিত অনূর্ধ্ব ১৯ এশিয়া কাপে কাতারের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে মাত্র দশ রানে নয় উইকেট নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন বামহাতি ফাস্ট বোলার আবু হায়দার রনি। সেই ম্যাচে কাতারের শেষ ব্যাটসম্যান ব্যাট করতে নামেননি। বাকি দশজনের নয়জনকেই আউট করেছিলেন তিনি।

সময়টা ২০১২ সাল। এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল কর্তৃক আয়োজিত অনূর্ধ্ব ১৯ এশিয়া কাপে কাতারের মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ। সেই ম্যাচে মাত্র দশ রানে নয় উইকেট নিয়ে দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন বামহাতি ফাস্ট বোলার আবু হায়দার রনি। সেই ম্যাচে কাতারের শেষ ব্যাটসম্যান ব্যাট করতে নামেননি। বাকি দশজনের নয়জনকেই আউট করেছিলেন তিনি।

তবে প্রতিপক্ষ কাতার বলেই সেই আলোড়ন বেশিদিন স্থায়ী হয় নি। তাই তাকে আবার নতুন করে নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। সেই প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে আবু হায়দার রনি বেছে নেন ২০১৫ সালের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগকে। সেটি আবার তাঁর জন্য ছিল অভিষেক মৌসুম। শুরুটা কুমার সাঙ্গাকারা কে দিয়ে; এরপর পুরো আসরে একে একে মাহমুদুল্লাহ, সৌম্য সরকার সহ ২২ উইকেট নিজের ঝুলিতে পুরে নেন রনি।

গতি, ভ্যারিয়েশন আর ইয়র্কারের দর্শক আর নির্বাচকদের মুগ্ধ করতে ভুল হয়নি তাঁর। তখন পর্যন্ত বাংলাদেশ দলে বাঁহাতি ফাস্ট বোলার এর অভাব ছিল প্রকট। তাই তাকে নিয়ে নতুন করে আশার জাল বোনে বাংলাদেশ। বিপিএলে এমন দারুণ পারফরম্যান্সের পর জাতীয় দলে ডাক পেতেও সময় লাগেনি তার। ২০১৬ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে চার ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম দলে জায়গা পান তিনি।

তবে ঘরোয়া ক্রিকেটে ক্ষুরধার রনি জাতীয় দলে এসে ভোঁতা হয়ে যান। উইকেট পেলেও অভিষেক সিরিজে রনির বোলিং ছিল বড্ড সাদামাটা আর খরুচে। তারপরও আরো কিছু ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিলেন আবু হায়দার। এখন পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে লাল-সবুজ জার্সিতে ১৩ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ৬ উইকেট পেলেও ওভার প্রতি ৯ এর বেশি রান খরচ করেছেন। দুইটা ওয়ানডেও খেলেছেন এই পেসার, পাঁচের একটু কম ইকোনমিতে তিন উইকেট শিকার করেছেন এই ফরম্যাটে।

অবশ্য জাতীয় দলের ভাবনায় আপাতত নেই নেত্রকোনার এই ক্রিকেটার। ঘরোয়া ক্রিকেটেও শুরুর মত দাপট নেই তাঁর। গড়পরতা পারফরম্যান্স দিয়েই টিকে আছেন এখন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে যে পেস-বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছে তাঁর অংশ হতেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। দারুণ ভাবে পথ চলা শুরু করা রনি এখন পথহারা পথিক।

এটা সত্য যে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পারফর্ম করার মত যথেষ্ট সক্ষমতা ছিল আবু হায়দার রনির। যথেষ্ট গতির পাশাপাশি স্লোয়ার, সুইং আর ইয়র্কারটাও ভাল পারতেন তিনি। আবার বোলিংয়ের পাশাপাশি শেষদিকে ব্যাট হাতে বিগ হিট করার সামর্থ্যও ছিল তাঁর৷ কিন্তু কেন যেন, বাংলাদেশ দলে আসার পর সামর্থ্যের প্রয়োগ মাঠে করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে তাকে বাদ দিয়েই ভাবতে হয়েছে নির্বাচকদের।

বর্তমানে জাতীয় দলে না থাকলেও ছায়া দল ‘বাংলাদেশ টাইগার্স’-এর ক্যাম্পে আছেন আবু হায়দার রনি। চেষ্টা করছেন নিজের ভুল ত্রুটি শুধরে আবারো পুরোনো ফর্মে ফিরতে। বয়সটা এখন মাত্র ২৬, এই বয়সে জাতীয় দলে ফেরার কাজটা মোটেও অবাস্তব কিংবা অসম্ভব নয়। যদিও বাংলাদেশ দলে এখন ফাস্ট বোলারের অভাব নেই। তারপরও এটা নিশ্চিত যে, নিজের সেরা ফর্মে থাকলে রনি জায়গা করে নিতে পারতেন জাতীয় দলে।

উড়ন্ত সূচনা পাওয়া ক্রিকেট ক্যারিয়ারের আক্ষেপময় পরিসমাপ্তি না চাইলে এখন একটা পথই বেছে নিতে হবে আবু হায়দার রনিকে। মূলত নিঁখুত লাইন-লেন্থে বল করতে না পারাটা এই বামহাতি পেসারের প্রধানতম দুর্বলতা। আর তাই জাতীয় দলের জার্সিতে ফিরতে চাইলে ঠিক এখানটায় কাজ করতে হবে তাকে। নিজেকে আবার ভেঙেচুরে গড়তে হবে। সেক্ষেত্রে রনির সামনে আদর্শ হতে পারেন তাসকিন আহমেদ।

সকালের সূর্য যেমন পুরো দিনের পূর্বাভাস দেয় না, তেমনি আবু হায়দার রনির শুরুটা তাঁর পুরো ক্যারিয়ারের গল্প বলেনি। তারপরও মেঘাচ্ছন্ন আকাশ থেকে একটা সময় মেঘ সরে যায়, সূর্য আবার উঁকি দেয়। রনির ক্যারিয়ারেরও সেই সময় আসবে তো? যেই সম্ভাবনার বার্তা নিয়ে এসেছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে, সেই বার্তার পরিপূর্ণতা দিতে পারবেন তো তিনি?

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...