বল ও জীবনের লাইন-লেন্থ

একটা সময় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে কার্য্যকর পেসার ছিলেন তিনি। এমনকি এখনো এই ফরম্যাটে তিনি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি পেসার। অথচ আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ম্যাচের সংখ্যাটা খুব বেশি লম্বা হলো না আল আমিন হোসেনের। বলের সাথে নিজের জীবন যাপনের লাইন-লেন্থটাও হারিয়ে ফেলেছিলেন কখনো কখনো। সেটাই বুঝি যথেষ্ট ছিল আল আমিনের হারিয়ে যাওয়ার জন্য।

জাতীয় দলে আসার আগে থেকেই তাঁর নামটা শোনা যেত। বাংলাদেশের দক্ষিণের জেলা ঝিনাইদাহ থেকে উঠে এসেছিলেন। বাংলাদেশের দক্ষণের ওই অঞ্চলটা থেকেই এর আগে এসেছে আরো এক ঝাক পেসার। মাশরাফি বিন মর্তুজা, সৈয়দ রাসেল, রুবেল হোসেনের মত পেসাররা এসেছেন দেশেই ওই প্রান্তটা থেকে। ফলে সেই পালে নতুন হাওয়া হয়ে এসেছিলেন আল আমিন হোসেন।

২০১১ সালে খুলনার হয়ে চট্টগ্রামের বিপক্ষে ১২ উইকেট তুলে নিয়েছিলেন এই পেসার। দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৩৭ রান দিয়ে তুলে নিয়েছিলেন ৬ উইকেট। সেবছরই নজরে পড়েছিলেন বাংলাদেশের পেস বোলিং গুরু সারোয়ার ইমরানের। এই কোচই আল আমিনকে মিরপুরে পেসারদের ক্যাম্পে নিয়ে এসেছিলেন।

মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের সেই ক্যাম্পে আসার পর আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাননি আল আমিন। এরপর ওই মাঠটায় শুধু দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। ২০১১-১২ মৌসুমে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম মাঠে নেমেই পেয়েছিলেন ৩৯ উইকেট। ওই সময়েই আলোচনায় চলে এসেছিলেন তিনি।

তখন আল আমিনের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুধু সময়ের ব্যাপার। তবুও জাতীয় দল সহসাই ধরা দিল না। আল আমিনও হার মানার পাত্র নন। বাংলাদেশ এ দল ও ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের সবটা দিয়ে খেলতে থাকেন। সাফল্যও আসতে বাধ্য হয়েছিল।

২০১৩ সালের শেষের দিকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয়। এরপর ২০১৪ সালের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেক। বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে খারাপ সময়টার সাক্ষী ছিলেন তিনি। তবুও প্রায়শই বাইশ গজে গতির ঝড় তুলতেন।

অভিষেকের পরই আল আমিন বলেছিলেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটাই নাকি সবচেয়ে উপভোগ করেন। যদিও সেই সময় টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশের করুণ হাল। তবুও আল আমিন নিজেকে এই ফরম্যাটে সেরাদের একজন বলে প্রমাণ করেছিলেন। পরিসংখ্যানও সেই কথাই বলে।

বাংলাদেশের হয়ে তিন ফরম্যাটেই খেলেছেন। তবে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছেন টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেই। ৩১ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলা আল আমিনের ঝুলিতে আছে ৪৩ উইকেট। এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি তিনি।

তাঁর আগে আছেন শুধু সাকিব আল হাসান, মুস্তাফিজুর রহমান ও আব্দুর রাজ্জাক। এই তিনজনের চেয়ে আবার কম বোলিং গড় ছিল আল আমিনের। প্রতিটা উইকেটের জন্য খরচ করেছেন মাত্র ১৬ রান। ইকোনমি রেটও ছিল ৭ এর কাছাকাছি।

অন্তত মুস্তাফিজ আসার আগে এই ফরম্যাটে বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল ও কার্যকর পেসার তিনি। এমনকি ৫৪ ম্যাচ খেলা মাশরাফির থেকেও এক উইকেট বেশি ছিল আল আমিনের ঝুলিতে। এই ফরম্যাটটা এতই পছন্দ করতেন যে একবার সিলেটে একটি ঘরোয়া টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এক ওভারেই তুলে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট।

ওয়ানডে ফরম্যাটেও শুরুটা মন্দ ছিল না। ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে ছিলেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। বাংলাদেশের হয়ে খেলা ১৫ ওয়ানডে ম্যাচে তাঁর ঝুলিতে আছে ২২ উইকেট। ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপের দলেও জায়গা করে নিয়েছিলেন। কিন্তু পরের দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে দেশের ফেরত পাঠানো হয়েছিল তালে।

টেস্ট ক্রিকেটে কখনোই খুব বেশি কার্যকর হতে পারেননি। মাত্র ৭ টেস্টেই থেমে আছে সাদা পোশাকের ক্যারিয়ার। এরপর আস্তে আস্তে রঙিন পোশাকের ক্রিকেট থেকেও হারিয়ে যেতে থাকেন। বাংলাদেশের এক ঝাক নতুন পেসারের মাঝে এখন আল আমিনকে খুঁজে পাওয়া ভার। আল আমিন শুধু রেখে গিয়েছেন এক ফালি আক্ষেপ।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link