মার্করামের হাওয়া বদল

এইডেন মার্করামকে খানিকটা সৌভাগ্যবান বলাই যায়। ক্রিকেটের আশীর্বাদে পুষ্ট তিনি। তাঁর ব্যাটিং মুগ্ধতা ছড়ায়। ব্যাটে-বলের সংযোগটা বেশ চোখের আরাম হয়, শুতিমধুর এক ধ্বনির সৃষ্টি হয়। তাঁর ব্যাটিং শৈলী বেশ আনন্দ দেয়। বিনোদনের খোরাকও মেটায়।

নদীর জোয়ার-ভাটার সাথে আমাদের বেশ মিল। কখনো অথৈ পানিতে থৈ থৈ, আবার পানির অভাবে খরা হবে হবে ভাব। তবে জোয়ার-ভাটা যেমন ধারাবাহিক ঠিক তেমনি আমাদের জীবনের ভাল-খারাপ সময় ধারাবাহিক। উদাহরণ হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার ডান-হাতি ব্যাটার এইডেন মার্করামের কথাই বলা যেতে পারে। ফর্মহীনতার তুঙ্গে থেকে তিনি আবার ফিরেছেন রানে।

এইডেন মার্করামকে খানিকটা সৌভাগ্যবান বলাই যায়। ক্রিকেটের আশীর্বাদে পুষ্ট তিনি। তাঁর ব্যাটিং মুগ্ধতা ছড়ায়। ব্যাটে-বলের সংযোগটা বেশ চোখের আরাম হয়, শুতিমধুর এক ধ্বনির সৃষ্টি হয়। তাঁর ব্যাটিং শৈলী বেশ আনন্দ দেয়। বিনোদনের খোরাকও মেটায়।

তবে বেশ কিছুদিন ধরে জাতীয় দলের জার্সিতে বেশ মলিন প্রোটিয়া এই ওপেনার। টেস্ট, ওয়ানন্ডে কিংবা টি-টোয়েন্টি ঠিক কোন ফরম্যাটেই তিনি নিজের স্বভাবজাত খেলাটা খেলতে পারছিলেন না। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানদের মত প্রতিপক্ষদের বিপক্ষে খেলা সিরিজগুলোতে তাঁর রানের খাতায় খরা। ফর্মহীনতাই মূলত কারণ। শত চেষ্টায়ও যেন ফেরা যাচ্ছিল না রানের পথে।

তবে সে খরা বোধহয় কাটতে চলেছে। কাটতে চলেছে বললেও খানিক ভুল বলা হয়। কেটে গেছে হয়ত। রানের খরা খাতায় এখন বৃষ্টি ঝড়ছে অবিরত। উপমহাদেশে তো এখন বৃষ্টিরই মৌসুম। বৈশাখ মাস, ঝড়-বৃষ্টি হবে না তা কি করে হয়? তবে আবহাওয়া, প্রকৃতি যেমনই হোক। মাঠের ক্রিকেটে ঝড় হচ্ছে, বৃষ্টি হচ্ছে। সে ঝড়-বৃষ্টির প্রভাব মার্করামের ব্যাটিংয়েও পড়ছে।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে চলছে রান ফোয়ারা। সব ধরণের ব্যাটাররাই রান পাচ্ছেন নিয়ম করে। সে নিয়মের চাদরে নিজেকেও আবৃত করে নিয়েছেন মার্করাম। দক্ষিণ আফ্রিকার জার্সির যত আক্ষেপ তিনি ঝেড়ে ফেলে দিয়ে নতুন এক এইডেন মার্করাম হয়ে ব্যাট দিয়ে চপেটাঘাত করছেন প্রতিপক্ষের ছোঁড়া প্রতিটা বলকে। এমনটা বলার সুযোগ নেই যে আইপিএলের বোলিংয়ের মান তো আর বিশ্বমানের না।

আপনি সেকথা ঘুনাক্ষরেও বলতে পারেননা। এখানে বরঞ্চ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ দাপট দেখানো বোলাররা প্রচণ্ডরকম মার খেয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। যেমন প্যাট কামিন্সের কথাই ধরুণ। অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দলের অধিনায়ক আইপিএলে প্রায় প্রতি ম্যাচে রান খরচের অর্ধশতক করছেন। হ্যাঁ, এটা ঠিক আইপিএলে ব্যাটাররা সাধারণত একটু বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে।

তাই বলে যে মার্করামে ফর্মে ফেরাকে তুচ্ছ এক ঘটনা বলে পাশ কাটিয়ে চলে যাওয়ার উপায় নেই। তিনি ট্রেন্ট বোল্ট, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, যুজবেন্দ্র চাহাল, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণা কিংবা নাথান কোল্টার-নাইলদের মত বোলারদের একহাত দেখে নিয়ে রান করেছিলেন ৪১ বলে ৫২। আবার কলকাতা নাইট রাইডার্সের বেশ প্রসিদ্ধ বোলিং লাইনআপের বিপক্ষেও তিনি ছিলেন বিধ্বংসী।

উমেশ যাদব, প্যাট কামিন্স, সুনীল নারাইন, আন্দ্রে রাসেলদেরকে বেধম পিটুনি দিয়ে তুলে নিয়েছিলেন ৩৬ বলে ৬৮ রান। এই যে দু’টো তালিকায় থাকা প্রতিটি বোলারের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা থাকার পাশাপাশি বহুদিনের ক্রিকেটে নানান পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা রয়েছে। সুতরাং তাঁদের বিপক্ষে মারকাটারি ব্যাটিং করে রান তোলা একেবারেই সহজ কোন বিষয় নয়।

তিনি যে ফর্মে ফিরছেন তা তো আর বলে দেওয়ার বিশেষ প্রয়োজন নেই। ২০২১ এ হওয়ার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এখন অবধি যতগুলি ম্যাচ খেলেছিলেন তাঁর প্রায় সমপরিমাণ রান মার্করাম করে ফেলেছেন এইবারের আইপিএল। অথচ জাতীয় দলের হয়ে তিন ফরম্যাটেই তিনি খেলেছেন। ব্যাটটা ঠিক হাসেনি তাঁর। নিজের প্রতিভার প্রতিফলন ঠিক ঘটাতে পারছিলেন না তিনি জাতীয় দলের হয়ে।

নিজেকে প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে তাই হয়ত মার্করাম বেছে নিয়েছেন আইপিএলের পঞ্চদশতম আসর। তবে এখানটায় তাঁর দল সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের কৃতীত্ব প্রাপ্য। দলে টম মুডি এবং ব্রায়ান লারাদের মত অভিজ্ঞতায় ঠাসা দুই কোচ যেমন আছেন, তেমনি দলের নেতৃত্বের দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিউজিল্যান্ডকে এক দুরন্ত দলে পরিণত করা কেন উইলিয়ামনসন।

এদের সহযোগিতায় এবং দিকনির্দেশনায় মার্করাম ঠিক খুঁজে পাচ্ছেন নিজের হারানো আত্মবিশ্বাস। ব্যাটটাকে শোনাতে পারছেন নিজের মনের কথা। তাই বলে দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট কাঠামোকে দোষ দিতে হবে তা নয়। মাঝে মাঝে সবারই হাওয়া বদলের প্রয়োজন হয়ে ওঠে। হয়ত সে বদলেই মার্করাম এখন বিধ্বংসী হয়ে উঠেছেন।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...