শুনুন! শুনুন! শুনুন! রাজার বার্তাবাহক এসেছে। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মানুষ জড়ো করছে। নিশ্চয়ই কোন গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। তবে তা খুব একটা স্বস্তিদায়ক নয়। চিত্রে কল্পনা করুণ রাজা হচ্ছেন লিওনেল মেসি। আর বার্তা বাহক এই যে সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক ম্যাচ। এই ম্যাচগুলো অশনি সব সংকেত দিচ্ছে। না ভাববার বিশেষ কোন কারণ নেই। সেসবই প্রতিপক্ষের জন্যে।
বছরের শেষ প্রান্তে বসতে চলেছে বিশ্বকাপ। ‘দ্য গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। কাগজে কলমের হিসেবে এটাই লিওনেল মেসির শেষ বিশ্বকাপ। তবে তিনি নাকি ২০২৬ বিশ্বকাপও খেলতে চান। তবে বছর চারেক বাদে প্রায় ৪০ ছোঁয়া মেসি খুব বেশি কার্য্যকর থাকবেন কি না সে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাছাড়া তিনি খেলতে পারা নিয়েও থাকছে সংশয়। তাই ২০২২ কাতার বিশ্বকাপই মেসির শেষ বিশ্বকাপ সেটা ধরে নিতেই হচ্ছে।
কিন্তু মেসি যেন তোয়াক্কাই করছেন না এসব কিছু। তিনি যেন এক নতুন শুরুর অপেক্ষায়। তিনি যেন সেই কিশোর বয়সের মেসি। দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন মাঠের আনাচে কানাচে। গোল করছেন। না করছেন না গোলের উৎসব করছেন। গোল করাচ্ছেন, শিরোপা জিতছেন। এ যেন ভিন্ন এক মেসি। এই মেসি প্রচণ্ড ভয়ংকর। এই মেসি ঘূর্ণিঝড়!
এইতো ক’দিন আগে ইতালিকে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা ৩-০ গোলে। সে ম্যাচটায় আর্জেন্টিনার দুইটি গুরুত্বপূর্ণ গোলের কারিগর ছিলেন ‘কিং মেসি’। দুই সতীর্থ লাউতারো মার্টিনেজ ও পাওলো দিবালাকে দিয়ে করিয়ে নেন গোল। আর এর পরের ম্যাচে নিজেই যেন মত্ত হলেন গোলের এক আনন্দ উৎসবে।
গুণে গুণে পাঁচ খানা গোল করেছেন তিনি। ৩৫ বছরের মেসি একাই করছেন পাঁচ গোল। তবে ভাবুন ঠিক কতটা ফর্মে রয়েছেন তিনি। এই মেসি যে কোন দলকে একাই হারিয়ে দেওয়ার সক্ষমতা রাখেন। ক্লাব ফুটবল কিংবা আন্তর্জাতিক ফুটবলে এর নজির তো কম নেই। ফর্মে থাকা মেসি যেন এক বিশাল বড় ‘বুলডোজার’। নিমিষেই তিনি গুড়িয়ে দেবেন প্রতিপক্ষের সকল দেয়াল।
সকল পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে তিনি যেন অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে ওঠা কোন এক ‘টর্নেডো’। লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে তুখোড় সব পরিকল্পনার ছক। সেটা সবাই দেখেছে। মেসির তাণ্ডব লীলায় প্রতিপক্ষ দুমড়ে-মুচড়ে যায় তা ঠিক। তবে সে তাণ্ডবে আনন্দে মেতে ওঠে সমগ্র ফুটবল বিশ্ব। প্রতিপক্ষ সমর্থকদেরও তো মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকা ছাড়া আর কিছু করবার নেই।
আর এই যে সাম্প্রতিক সময়ে আর্জেন্টিনার জার্সিতে ভয়ংকর মেসি যেন কাপন ধরাচ্ছেন আসন্ন বিশ্বকাপের সব দলকে। ২০১৪ সালের আক্ষেপটা হয়ত তিনি এ দফা ঘুচিয়ে নিতেই আসবে কাতারের। মধ্যপ্রাচ্যের মাঝে বালুঝড় মেসি প্রতিপক্ষের চোখের বিষের কারণ।
নিশ্চয়ই সে চোখ বেয়ে অঝোড়ে ঝড়বে জল। যেমনটা ২০১৬ কোপা আমেরিকার ফাইনালে কেঁদেছিলেন ভিনগ্রহের প্রাণি লিওনেল মেসি। আর ২০১৪ সালে বিশ্বকাপের সামনে দিয়ে একরাশ আফসোস মাখানো নজর নিশ্চয়ই ভুলে যাওয়ার কথা নয়।
বিশ্বকাপ শিরোপাটাও নিশ্চয়ই চায় মেসির হাতে উঠে নিজেকে পূর্ণতা দিতে। এমনটা হলে এবার মেসিকে রুখতে পারাটা হয়ে যাবে অসম্ভব। মেসির ফর্ম তাই তো বলে। প্রতিপক্ষ দলগুলোকে তাই ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিতে হচ্ছে। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ হতে পারে ‘দ্য মেসি শো’।