বিশ্বকাপ, কাঁদায় আবার হাসায়

বিশ্বকাপ শুরুর আগেই লিওনেল মেসি ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন কাতার বিশ্বকাপই হতে যাচ্ছে তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। একারণেই বিশ্বকাপকে স্মরণীয় করে রাখতে চেষ্টার কমতি রাখছেন না ক্ষুদে জাদুকর। কেবল তিনি নিজে নন, পরিবার থেকে শুরু করে সতীর্থ, ভক্ত-সমর্থকরা আবেগের বন্যায় ভেসে যাচ্ছেন। মেসির ছোট ছেলে মাতেও যেমন সৌদি আরবের বিপক্ষে ম্যাচে আবেগ সামলাতে না পেরে গ্যালারিতে কান্না করে ফেলেন। 

এবারের বিশ্বকাপের শুরুটা বাজে হয়েছে আর্জেন্টিনার। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে ফেবারিট দলটা প্রথম ম্যাচেই হেরে গিয়েছিল সৌদি আরবের কাছে। তবে মেক্সিকোর বিপক্ষে বাঁচামরার লড়াইতে আরো একবার খাদের কিনারা থেকে টেনে তুলেছেন লিওনেল মেসি। বক্সের বাইরে থেকে দর্শনীয় এক গোলে দলকে এগিয়ে নেবার পর তাঁর বাড়ানো পাস থেকেই জয়সূচক গোলটি করেন তরুণ মিডফিল্ডার এনজো ফার্নান্দেজ। 

উত্থান-পতনের সপ্তাহে আবেগ ধরে রাখাটা তাই কষ্টকর হয়ে পড়ে আর্জেন্টাইনদের জন্য। বিশেষ করে সাড়ে তিন বছর এবং ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই হারটা খানিকটা এলোমেলো করে দিয়েছিল আলবিসেলেস্তেদের। ফলে মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচটা ছিল ভীষণ চাপের। আর্জেন্টিনার ডাগ আউটেও বোঝা গিয়েছে সেটা। দ্বিতীয়ার্ধে মেসির গোলের পর আবেগ ধরে রাখতে পারেননি মেসিরই ছোটবেলার আইডল হুয়ান রোমান রিকুয়েলমে। কান্নাভেজা চোখ মুছতে দেখা যায় আর্জেন্টিনার সহকারী কোচকে। 

আবেগ ছুঁয়ে গিয়েছে গ্যালারিতে থাকা মেসির পরিবারকেও। নিজের শেষ বিশ্বকাপে পরিবারকে সাথে নিয়েই এসেছেন, ফলে গ্যালারিতে নিয়মিত মুখ স্ত্রী আন্তোনেলা রোকুজ্জো এবং তিন সন্তান থিয়াগো, মাতেও এবং সিরো। আবেগ স্পর্শ করে যায় মেজো ছেলে মাতেওকেও, প্রথম ম্যাচ হেরে কান্নায় ভেঙে পড়ে সাত বছরের মাতেও।

মেক্সিকো ম্যাচের শেষে মেসি বলেন, ‘সৌদি ম্যাচের পর মাতেও কাঁদতে কাঁদতে স্টেডিয়াম ছেড়েছে। অন্যদিকে থিয়াগো হিসেব কষছিল কি করে পরের দুই ম্যাচ জিতলেও পরের রাউন্ডে যাওয়া যাবে। বাকি আর্জেন্টাইন দর্শকদের মত আমার পরিবারও ম্যাচ হারে কষ্ট পেয়েছে। তবে জয়ের ধারায় ফিরতে পেরে আমরা এখন খুশি।’

মেসি জানতেন মেক্সিকো ম্যাচেও দলের ত্রাতার ভূমিকাটা নিতে হবে তাঁকেই। ম্যাড়মেড়ে প্রথমার্ধের পর মেসির ২৫ গজ দূর থেকে নেয়া জোরালো শট মেক্সিকান কিপার ওচোয়াকে ফাঁকি দিয়ে আশ্রয় নেয় জালে। স্নায়ুচাপে ভুগতে থাকা আর্জেন্টাইন সমর্থকরা যেন স্বস্তির নি:শ্বাস পেয়েছিল মেসির সেই গোলে। পরবর্তীতে বদলি হিসেবে নামা এনজোর গোলে তিন পয়েন্ট পাওয়া নিশ্চিত হয় লিওনেল স্ক্যালোনির শিষ্যদের। যদিও এই জয়ের ফলে এখনও দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়া নিশ্চিত নয় মেসিদের, জিততে হবে পোল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে। নিদেনপক্ষে এড়াতে হবে হার। 

মেসি বলেন, ‘আজকের ম্যাচের ফলাফলে আমি বেশ খুশি। কারণ বিগত কয়েকদিন আমাদের জন্য ভীষণ দুশ্চিন্তার ছিল। মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচেও ফুটে উঠেছিল সেটা। সৌদি আরবের বিপক্ষে হারের পর ঘুরে দাঁড়াতে এই ম্যাচে জয়ের বিকল্প ছিল না। তিন পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে পেরে আমরা খুশি।’ 

গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে ড্র করলেও গ্রুপ রানার্সআপ হয়ে দ্বিতীয় রাউন্ডে যাবার সুযোগ থাকবে আর্জেন্টিনার। কিন্তু সেক্ষেত্রে পরের রাউন্ডেই মুখোমুখি হতে হবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সের, যাদের কাছে হেরে গতবার বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়েছিল তাঁরা। লিওনেল মেসিরা তাই চাইবেন শেষ ম্যাচটা জয় দিয়েই গ্রুপপর্ব শেষ করতে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link