কিছুটা দমে গিয়েছিলেন বটে। বাইশে রান বন্যা বইয়ে দেওয়া স্রোতটা হঠাতই তেইশের শুরুতে এসে থেমে যায়। চারপাশে ফিসফিসানি, লিটন দাস রসাতলে গেলেন বুঝি! কিন্তু লিটন যেন আটকে থাকা সেই রানের স্রোতটাকেই জলোচ্ছ্বাস রূপে নিয়ে আবির্ভূত হলেন।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে সেই যে ৫৭ বলে ৭৩ রানের ইনিংস খেললেন, এরপর থেকেই যেন ভিন্ন এক লিটনের আগমন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে দুটি ফিফটি হাঁকালেন। এরপর টি-টোয়েন্টি সিরিজে এসে রীতিমত আইরিশ বোলারদের উপরে রীতিমত তাণ্ডব চালালেন। ২৩ বলে ৪৭ রানের ইনিংসের পর দ্বিতীয় ম্যাচে ৪১ বলে খেললেন ৮৩ রানের বিধ্বংসী এক ইনিংস।
টানা দুই ম্যাচে ২০০ এর বেশি স্ট্রাইক রেট রেখে ব্যাটিং। আর এখানেই লিটন দাস নিজেকে নিয়ে গিয়েছেন শীর্ষে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে অন্তত ৭০০ বল খেলেছেন এমন ব্যাটারদের মধ্যে পাওয়ারপ্লেতে এই মুহূর্তে সর্বোচ্চ স্ট্রাইক রেট লিটনের।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত ৬৪ টি ইনিংসে পাওয়ার প্লে-তে ব্যাটিং করেছেন লিটন। এ সময়ে তাঁর স্ট্রাইক রেট ১৪২.৫৭। যা শুধু বাংলাদেশি ব্যাটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ নয়, বিশ্বেরই সেরা! লিটনের পরে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার কুইন্টন ডি কক। পাওয়ার প্লে-তে এ ব্যাটার ৭৮ ইনিংসে ব্যাট করেছেন ১৪১.৫১ স্ট্রাইক রেটে। পাওয়ার প্লে-তে তৃতীয় সর্বোচ্চ স্ট্রাইকরেট আফগানিস্তানের ওপেনার মোহাম্মদ শেহ্জাদের। ৬৩ ইনিংসে তিনি ব্যাট করেছেন ১৪০.৪৭ স্ট্রাইক রেটে।
স্ট্রাইক রেটে লিটন এগিয়ে থাকলেও অবশ্য পাওয়ার প্লে-তে ছক্কাসংখ্যার দিক দিয়ে আবার লিটন কিছুটা পিছিয়ে। এখানে এগিয়ে আছেন ডি কক। পাওয়ার প্লে-তে তাঁর ছক্কা সংখ্যা ৫৮ টি। আর ৪০ টা ছক্কা নিয়ে এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন মোহাম্মদ শেহজাদ। আফগান এ ওপেনার পর ৩৮ টা ছক্কা নিয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন লিটন দাস।
অবশ্য পাওয়ার প্লে-তে ছক্কা মারার দিক দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও, বাংলাদেশিদের মধ্যে এই সংস্করণে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছক্কার মালিক লিটন। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ৩ ছক্কায় ছুঁয়েছেন ছক্কার ফিফটি। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সর্বোচ্চ ৬৪ ছক্কার পর ৫০ ছক্কা নিয়ে এই মুহূর্তে লিটন দাসই দলের সেরা সিক্সার। তবে ৪৯ টা ছক্কা নিয়ে এই মুহূর্তে লিটনের ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান।
আইরিশদের বিপক্ষে আগের ম্যাচে ৪১ বলে ৮৩ রানের ইনিংস খেলার দিনে আরো কয়েকটা রেকর্ড গড়েছেন লিটন দাস। দুর্দান্ত এ ইনিংস খেলার পথে লিটন ব্যক্তিগত অর্ধশতক পূরণ করেছিলেন ১৮ বলে। এর মধ্যে দিয়ে ১৬ বছর আগে, আশরাফুলের করা ২০ বলে হাফসেঞ্চুরির রেকর্ড ভেঙে দেন এ ব্যাটার। এ ছাড়া ৮৩ রানের এই ইনিংস দিয়েই আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে লিটন দাস তাঁর আগের সর্বোচ্চ ৭৩ রানের ইনিংসকে টপকে যান। যেটি তিনি খেলেছিলেন এই মাসেই, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।