অগ্নিসূচি রাহুল

অফ স্ট্যাম্পের বাইরের স্লোয়ার বল। সজোরে কাট করলেন লোকেশ রাহুল। বল পয়েন্ট অঞ্চল দিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটে যায় সীমানার দিকে। ছুয়েও ফেলে সীমানা। আর অন্যদিকে বাইশ গজে উল্লাসে মেতে ওঠেন রাহুল। ব্যাট এবং হেলমেট খুলে গগন পানে তুলে ধরে জানান দেন এবারের আইপিএলের দ্বিতীয় এবং সর্বোচ্চ রানের মালিক এখন লোকেশ রাহুল।

পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের বিপক্ষে একেবারে নবাগত দল লখনৌ সুপার জায়ান্টসকে নিয়ে হাজির অধিনায়ক লোকেশ রাহুল। নতুন ফ্রাঞ্চাইজি এসেই দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব তুলে দিয়েছে রাহুলের কাঁধে। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর পারফরম করা স্পৃহা কিংবা চাহিদা অনেকাংশেই বেড়ে যায়। আর বাড়তি চাহিদার জোগান যে তিনি একেবারেই দিচ্ছেন না তা কিন্তু নয়।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগের এবারের আসরের একেবারে শুরু থেকে ব্যাট হাতে নিজের কাজটা ঠিকঠাক করে নেওয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন রাহুল। অধিনায়কের দায়িত্বের চাপটা তাঁকে খুব যে ছুঁয়ে যেতে পেরেছে তা বলা মুশকিল। আবার উল্টো চিত্রও হতে পারে। অধিনায়কের দায়িত্বের একটা চাপ তাঁকে একজন দায়িত্ববান ক্রিকেটারে পরিণত করেছে। তবে এবারই প্রথম যে রাহুল দলপতির দায়িত্ব পালন করছেন তাও কিন্তু নয়। তবে এমন ছন্দে বোধহয় অনেকদিন বাদেই দেখা যাচ্ছে তাঁকে।

অথচ এবারের মৌসুম তিনি শুরু করেছিলেন শূন্যরানে সাজঘরে ফিরে। সবাই হয়ত ভেবেছিল তিনি বোধহয় এবার আর নিজেকে মেলে ধরতে পারবেন না। তবে ঠিক তাঁর পরের ম্যাচ থেকেই তিনি সবার ভুল ভাঙাতে শুরু করেন। ব্যাটটা তাঁর চলতে থাকে আপন গতিতে। একটি অর্ধশতকের দেখাও পেয়ে যান তিনি। তবে আবার সে শূন্য়ের দেখা। খানিক পথভ্রষ্ট হলেন রাহুল। তবে হোচট খেয়েই আবার নিজ পথে। অবশ্য ওপেনিং পজিশনে সব সময়ই রান করতে পারাটাও বিশাল বড় এক চ্যালেঞ্জ।

সে চ্যালেঞ্জটা এ দফা লুফে নিলেন রাহুল। মুম্বাই তাঁদের ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে সময় পার করছে। তাছাড়া বোলিং লাইনআপটাও বেশ দূর্বল। মানসিকভাবে খানিকটা ব্যাকফুটে থাকা মুম্বাইয়ের উপর চড়াও হওয়ার মত সুযোগ আর হেলায় হারিয়ে যেতে দিতে নারাজ রাহুল। সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদের বিপক্ষে করা ৬৮ রানের ইনিংসটা এবারের মৌসুমে নিজের সর্বোচ্চ রানের ইনিংস করে রাখতে চাননি রাহুল।

তাতে আর কিছু না হোক, কপাল পুড়লো মুম্বাইয়ের। কি অসাধারণ ব্যাটিং! ব্যাট-বলের কি দূর্দান্ত সংযোগ! একেবারে মাখনের উপর ছুড়ি চালানোর মত করে ব্যাটিংটা করে গেলে রাহুল। ইনিংসের শুরু থেকে শেষ রাহুল ছিলেন বাইশ গজে। আঁকড়ে ধরে পড়ে ছিলেন না তিনি। রীতিমত তাণ্ডব চালিয়েছেন। রানের জন্যে উন্মাদ হয়েছেন, তবে ধৈর্য্য ধরে ভাল বল সম্মান করেছেন। মুম্বাইয়ের বোলারদের দারুণ অস্বস্তি বাড়িয়েছেন, সে সাথে নিজেদের জয়যাত্রার পথটা সুগম করেছেন রাহুল।

ব্যর্থ পুরুষ যে হন্যে হয়ে সফলতার পেছনে ছোটে তাঁর আরও একটি উদাহরণ হয়ত হতে পারেন রাহুল। তবে এক জায়গায় তিনি ব্যতিক্রম। তিনি হন্যে হয়ে ছোটেন না। তিনি বুদ্ধিদীপ্ত এক একটি কদম ফেলেন। লোক মুখে শোনা জাচ্ছিলো টি-টোয়েন্টিতে নাকি ভারত জাতীয় দলে রাহুলের বিকল্প খোঁজা হচ্ছে। হতে পারে গুঞ্জন অথবা থাকতে পারে খানিক সত্যতা।

যদি গুঞ্জনও হয়, তবুও যেন ঝুঁকি নিতে নারাজ রাহুল। তাই তিনি এবারের আইপিএলকে বেছে নিয়েছেন নিজেকে আরও একবার প্রমাণের মঞ্চ হিসেবে। তিনি ভুল পথে নেই তা বলে দেওয়া যায় চোখ বন্ধ করে। এখন পর্যন্ত রান সংগ্রাহকদের তালিকায় তিনি রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে। এক ফিফটি ও এক হার না মানা সেঞ্চুরি যুক্ত করে ফেলেছেন নিজের নামের পাশে। সে সাথে সব গুঞ্জনকে হালকা করে দিচ্ছেন ১৪০ এর বেশি স্ট্রাইকরেটে ব্যাট করে।

মোদ্দাকথা, চ্যালেঞ্জ একটা নিয়েছেন রাহুল। হয় তিনি ছাড়িয়ে যাবেন সকলকে কিংবা ছাড়াবেন নিজেকে। তবে নিজেকে ছাড়ানো বোধহয় এই বিশ্বভ্রমাণ্ডের সবচেয়ে কঠিনতম কাজ। তবে একেবারেই যে অসম্ভব তা নয়। সময় বলে দেবে রাহুল ঠিক হাটছেন কোন পথে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link