সেই ৯৬-তে লর্ডসে উড়েছিল পাক-ভারত তারুণ্যের পতাকা

ভারত বনাম পাকিস্তান— কত মাঠ যে চিরবৈরী এ দুই দেশের মহারণের স্বাক্ষী হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। কিন্তু ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসে কখনো এ দুই দেশের লড়াই-এর দেখা মেলেনি। অন্তত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট তো সেই স্বাক্ষই দেয়।

তবে দুটি দেশের বাইশ জন বালক একবার লর্ডসের বাইশ গজে ভারত, পাকিস্তানের পতাকা উড়িয়েছিল। সে ইতিহাস আজ থেকে ২৭ বছর আগের।

১৯৯৬ সালের কথা। লম্বার্ড অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যালেঞ্জ কাপ নামে সেবার এক টুর্নামেন্টের আয়োজন করলো ইংল্যান্ড। নিউজিল্যান্ড বাদে সে সময়ের বাকি ৮ টেস্ট প্লেয়িং দেশই দল পাঠাল। সাথে আরো দুটি সহযোগী দেশ যুক্ত হলো- কানাডা আর নেদারল্যান্ডস।

তো, ১০ দলের সে টুর্নামেন্ট শুরু হলো দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে। প্রত্যেকটি দল ৪ টি করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেল। এ গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হলো ভারত। আর বি গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হলো পাকিস্তান।

দুটি দলই সেমিফাইনালে উঠলো অপরাজিত হয়ে। সেমিতেও তাদের জয়যাত্রা অব্যাহত থাকলো। ভারত হারালো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। আর অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ভারতের বিপক্ষে ফাইনালের মঞ্চে নাম লেখায় পাকিস্তান।

এরপর সেই মুহূর্ত। ২০ আগস্ট, ১৯৯৬। লর্ডসে প্রথমবারের মতো কোনো ক্রিকেট ম্যাচে মুখোমুখি হলো ভারত আর পাকিস্তান। আনমনে প্রশ্ন উঠতেই পারে, সেদিনের ম্যাচে খেলা ১৫ বছর বয়সীদের মধ্যে কি কেউ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট পরবর্তীতে পা রেখেছিল?

হ্যাঁ। সেদিন পাকিস্তানের একাদশে খেলা ৭ জনই পরবর্তীতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রেখেছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন শোয়েব মালিক আর কামরান আকমাল। এ ছাড়া টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে অভিষেকের রেকর্ড গড়া হাসান রাজা সেই ম্যাচের একাদশে ছিলেন। ভারত অনূর্ধ্ব-১৫ দলের বিপক্ষে ঐ ম্যাচের মাস দুয়েক পরেই মাত্র ১৪ বছর বয়সে লাল বলের ক্রিকেটে তাঁর অভিষেক হয়।

যদিও ভারতের ঐ দল থেকে মাত্র দু’জন পরবর্তীতে ভারতের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছিলেন। এর মধ্যে একজন ছিলেন, ঐ ম্যাচে ভারতকে নেতৃত্ব দেওয়া রীতিন্দার সিং সোধি। আর অন্যজন হলেন, মোহাম্মদ কাইফ। যার নেতৃত্বে ভারত প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জিতেছিল।

লর্ডসের সে ম্যাচে ফেরা যাক। দুই দলই ফাইনালের আগে ছিল অপরাজিত। তবে পাকিস্তানের জয়যাত্রায় থেমে যায় ফাইনালে এসে। ৪ উইকেটে ম্যাচটি জিতেছিল ভারত। ৫৫ ওভারের ম্যাচে পাকিস্তান প্রথমে ব্যাট করে সর্বসাকূল্যে তুলতে পেরেছিল ২২২ রান। ভারত তা টপকে গিয়েছিল ১৪ বল হাতে রেখেই।

ভারতের অধিনায়ক রীতিন্দার সিং সোধি ব্যাট হাতে অপরাজিত ৮২ রানের ইনিংসের পাশাপাশি বল হাতে নিয়েছিলেন ৩ টি উইকেট। মূলত তাঁর কাঁধে ভর করেই লম্বার্ড অনূর্ধ্ব ১৫ চ্যালেঞ্জ কাপের শিরোপা জিতে নেয় ভারত।

রীতিন্দার সিং সোধি এরপর ভারতের হয়ে ১৮ টি টেস্ট খেলেছেন। সেখানে তাঁর দুটি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংসও আছে। এ ছাড়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ২৫১ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস আছে তাঁর নামের পাশে। তবে পুরো ক্যারিয়ারে লর্ডসের ঐ ৮২ রানের ইনিংসটাকেই এগিয়ে রাখেন তিনি।

তবে ভারত-পাকিস্তানের লর্ডসের ইতিহাস সেখানেই থমকে যায়। এর পরে আর কখনোই হোম অব ক্রিকেটে এ দুই দলের লড়াই দেখা যায়নি। একই ভাবে, দীর্ঘ ২৭ বছর পেরিয়ে গেলেও লম্বার্ড অনূর্ধ্ব-১৫ চ্যালেঞ্জ কাপ আয়োজনের আর পুনরাবৃত্তি ঘটেনি। বয়সভিত্তিক এ টুর্নামেন্টের ইতিহাসটা ভারত-পাকিস্তান মহারণেই ইতি টেনেছিল।

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link