স্বীকৃতিহীন এক নীরব লড়াই

বাংলাদেশের ক্রিকেটে সম্ভবত সবচেয়ে নিভৃত চরিত্র তিনি। তিনি আসেন, বাইশ গজে হাত ঘুরান আর বাংলাদেশকে কাজের কাজটা করে দেন। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বল হাতে সবচেয়ে পরীক্ষিত, কার্যকর সেনানি। তবুও কখনো কন্ডিশনের কারণে, কখনো টিম কম্বিনেশনের কারণে যে নামটা সবার আগে কাটা পড়ে তিনি তাইজুল ইসলাম।

তাইজুল তাঁর ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই নিজের কাজটা করে দিচ্ছেন। কখনো কখনো বেশিও দিচ্ছেন। তবে তাঁকে নিয়ে কখনোই আলোচনা হয় না সেভাবে। আলোচনা না হলেও বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় চরিত্র এই স্পিনার। শুরুতে তাইজুলকে দেখে আপনার বাংলাদেশের আর দশজন সাদামাটা বাঁহাতি স্পিনারই মনে হতে পারে।

তবে এই সাদামাটা বৈশিষ্ট্যই তাঁকে পরে আলাদা করে। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে টানা বোলিং করে গিয়েছেন। স্পিনার হিসেবে তিনিই হয়ে উঠেছেন দলের অন্যতম ভরসা। অন্তত ঘরের মাঠে সাদা পোশাকের ক্রিকেটে তাঁর বিকল্প নেই। টানা এক জায়গায় বোলিং করে, টার্ন আদায় করে নিয়েই তিনি সাফল্য পেয়েছেন।

এমনকি টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও এই তাইজুল ইসলাম। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। এরপরেই আছেন তাইজুল। ৩৬ টেস্ট ম্যাচে আছে ১৫৩ উইকেট।

তবুও সাকিব-মিরাজদের কারণে অনেক সময় তাঁকে দল থেকে বাদ পড়তে হয়। অথচ কোভিডের পরেও বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল স্পিনার তাইজুল। এই সময়ে বাংলাদেশ দল মোট ১১ টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। যার মধ্যে তাইজুল খেলেছেন ৭ টেস্টে। আর এই ৭ টেস্টে তাইজুলের ঝুলিতে জমা পড়েছে ৩৯ উইকেট।

ওদিকে এই সময়ে সাকিব খেলেছে মাত্র ৩ টেস্ট। সেখানে সাকিব তুলে নিতে পেরেছেন ৫ উইকেট। আরে স্পিনার মেহেদী হাসান মিরাজ এই সময়ে টেস্ট খেলেছেন ৬ টি। মিরাজ তুলে নিয়েছেন ১৫ উইকেট। সাকিব কিংবা মিরাজ ব্যাট হাতে অবদান রাখায় খুব সহজেই একাদশ থেকে বাদ দিয়ে দেয়া যায় তাইজুলকে।

অথচ ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই টেস্ট ক্রিকেটে নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন। বিশেষ করে ঘরের মাঠে তাঁর হাত ধরেই অনেক জয় পেয়েছে বাংলাদেশ। তবে বিদেশের মাটিতে গেলেই যেন আর তাইজুলকে প্রয়োজন পরে না বাংলাদেশ দলের।

অথচ এমন একজন টেস্ট স্পেশালিট বোলার যেকোন কন্ডিশনেই প্রথম পছন্দ হবার কথা। অবশ্য তাইজুলকে না খেলানোর যথাযথ শিক্ষাও পেয়েছে বাংলাদেশ দল। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে একাদশে রাখা হয়নি এই স্পিনারকে। অথচ ম্যাচে ঠিকই তাইজুলকে মিস করেছে বাংলাদেশ।

বিশেষ করে ডারবান টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে কেশভ মহারাজের ৭ উইকেট নেয়া তাইকুলকেই মনে করে দিচ্ছিল। হয়তো ডারবানে তাইজুল বল ঘুরালে ম্যাচের ফলাফল ভিন্ন হতে পারতো। তাইজুলকে না খেলানোর আফসোস আর বড় হয়ে এসেছে পরের টেস্টে।

দ্বিতীয় টেস্টে তাইজুল খেলতে নেমে তুলে নিলেন ৯ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও ৩ উইকেট। যদিও ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় সেই টেস্টে খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি বাংলাদেশ। তবে তাইজুলের এই বোলিং বাংলাদেশকে আফসোসে পুড়িয়েছে।

সেই টেস্টেই সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ১৫০ উইকেট নেন তাইজুল। এছাড়া বাংলাদেশি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে কম সময়ে এই কীর্তি গড়েন তাইজুল। তবুও তাঁর এইসব কীর্তি নিয়ে উদযাপন কমই হয়। চট্টগ্রাম টেস্টে খেলছেন না মিরাজ। ফলে এবারো বাংলাদেশের বড় ভরসা তাইজুল। তিনি হয়তো বরাবরের মতই কাজটা করে দিবেন। তবে তাঁকে নিয়ে আলোচনাটা হয়তো এবারো হবেনা।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link