বহুকাল ধরে নিশ্চয়ই ছিল এই দিনটির অপেক্ষা। সেই ২০১৬ সালে জাতীয় দলের হয়ে ক্রিকেট মাঠে পদার্পণ। পেরিয়ে গেছে ছয়টি বছর। সপ্তম বছরে পা রাখতেই যেন দারুণ এক কীর্তিতে নিজের নামটি জড়িয়ে নিলেন লরকান টাকার। অভিষেক টেস্ট খেলতে নেমেই ছুঁয়ে দেখেছেন মাইলফলক। নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসের পাতায়।
আয়ারল্যান্ডের টেস্ট ইতিহাস খুব একটা সমৃদ্ধ না। এই তো সেদিন টেস্ট ক্রিকেটের যাত্রা শুরু করে আইরিশরা। নবাগত বলেই কি-না টেস্ট ক্রিকেটের মর্যাদার রাজ্যে খুব একটা সুযোগ মেলে না। তবুও কাঙ্ক্ষিত অল্প-স্বল্প সুযোগের কি করে সদ্ব্যবহার করতে হয় তাই যেন দেখিয়ে গেলেন লরকান টাকার। বাংলাদেশের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসটি যেন নিজের করে রাখলেন তিনি।
ধুঁকতে থাকা দলটা দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ছুঁয়ে দেখেছেন তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার। তবে একটা সময় কেবল এক বিভীষিকাময় প্রহর পার করতে হয়েছে আইরিশদের। দ্বিতীয় দিনের শেষ বেলা ১৩ রানেই নেই চার উইকেট। ইনিংস ব্যবধানে হার তখন আইরিশদের সামনে দোদুল্যমান। সেই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ দেয় অবশ্য হ্যারি টেক্টর ও পিটার মুর জুটি।
শেষ বেলায় দুইজনে দেয়াল তুলে দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন মিরপুরে। সেই দেয়াল তৃতীয় দিন সকালেও ভাঙতে পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। প্রায় ঘন্টার কাঁটা ছুঁইছুঁই, এমন সময়ে পিটার মুরের বিদায়। ঠিক এরপরই দৃশ্যপটে হাজির লরকান টাকার। তিনি জুটি বাঁধলেন টেক্টরকে। দু’জনে মিলে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন আইরিশদের ইনিংস।
কিন্তু তবুও ইনিংস ব্যবধানে হারার শঙ্কা পুরোপুরি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। একটা সময় টেক্টর হার মেনে নিলেন। টানা দুই ইনিংস অর্ধ-শতক তুলে নিয়ে টেক্টর সাজঘরে ফেরেন। তবে টেক্টরের সেই ইনিংসটি বিপর্যয় সামলে ওঠার রসদ দিয়েছে। আর সেই রসদের জোরে টাকার সচল রেখেছেন আয়ারল্যান্ডের রানের চাকা।
ধীর চিত্তে তিনি স্রেফ বাইশ গজে থিতু হয়েছেন। সময় বুঝে বাজে বল গুলো সীমানা ছাড়া করেছেন। রান তোলার আগ্রহ খুব একটা ছিল না। পরিকল্পনায় হয়ত তেমন কিছুই ছিল। তবুও নিয়ম করে রান এসেছে টাকারের ব্যাটে। শেষ অবধি তিনি থেমেছেন ১০৮ রানে। তাঁর উইকেট লুফে নেওয়ার পর আকাশ পানে চেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন এবাদত হোসেন। সে চিত্রটাই প্রমাণ করে ঠিক কতটা বিরক্তির কারণ হয়েছন তিনি টাইগার ক্রিকেটারদের জন্য।
তবে তাঁর এই ইনিংসটি ক্রিকেটীয় সৌন্দর্যের আরও একটি নিদর্শন হয়ে রইল। ক্রিকেটীয় দক্ষতার প্রদর্শনের পাশাপাশি শৃঙ্খল মেনে তিনি ব্যাট করেছেন। নিজের টেম্পারমেন্ট বজায় রেখেছেন। তবে শতকের পর ক্লান্তি খানিকটা ভর করেছিল বোধহয়। তাতে মনোযোগ হারিয়েছেন কিছু সময়ের জন্য। তাইতো অফ স্ট্যাম্পের অনেকটা বাইরের বলে তিনি ব্যাট চালিয়েছেন। ধরা পড়েছেন শরিফুলের হাতে।
তাতে অবশ্য টাকারের এই ইনিংসটি কোন অংশেই খাটো হয়ে যায় না। কেননা অভিজ্ঞতার বিচারে এই ইনিংসটি ঐতিহাসিকই বটে। ২০১৯ সালের পর থেকে আয়ারল্যান্ডের ঘরোয়া ক্রিকেট কাঠামোতে নেই কোন লাল বলের টুর্নামেন্ট। এই টাকার শেষ লাল বলের ক্রিকেট খেলেছেন ২০২১ সালে। তবে সেটা জাতীয় দলের হয়ে নয়।
আয়ারল্যান্ড ‘এ’ দলের হয়ে তিনি খেলেছিলেন শেষবার, সেটাও আবার বাংলাদেশের মাটিতে। সাদা পোশাকে ক্রিকেট খেলার খুব বেশি অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও দুর্দান্ত এক ইনিংস উপহার দিয়েছেন টাকার। এই ইনিংসটি নিশ্চয়ই অবিস্মরনীয় হয়ে রবে লরকান টাকারের জন্য। কেননা যা কিছু প্রথম তা সবই তো হৃদয়ে দাগ কেটে যায়।