২০১৭ সালে ২২২ মিলিয়ন ইউরো রেকর্ড ট্রান্সফার ফি-র বিনিময়ে বার্সেলোনা ছেড়ে প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে যোগ দিয়েছিলেন নেইমার জুনিয়র। একটা সময় তিনি ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বেতনধারী ফুটবলার। এমনকি এখনো সর্বোচ্চ বেতনধারী খেলোয়াড়দের মধ্যে উপরের দিকেই আছে ব্রাজিলিয়ান তারকা।
প্রতি বছর বছর লাখ লাখ টাকা উপার্জন করা নেইমার নিজের জীবনে বিলাসিতার কোন কমতি রাখেননি। দৈনন্দিন জীবনের সব ক্ষেত্রেই টাকা পয়সা খরচ করতে আপত্তি নেই এই তারকার। আয়েশি নেইমারের বিলাসি কিছু দিক দেখে নেয়া যাক।
ব্রাজিলিয়ান তারকার বিলাসি জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ একটি ইয়ট। ‘Nadine 78’ নামের ইয়টটির মূল্যমান ৮ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া ব্যবয়হুল জলযানটির রক্ষণাবেক্ষণে প্রতি বছর ১,২০০০০ ডলার খরচ হয়। যখন নেইমার ছুটিতে থাকেন তখন তাকে প্রায় এই ইয়টে বন্ধুদের সাথে পার্টি করতে দেখা যায় পারে।
Nadine 78-এ তিনটি স্টোর, চারটি স্যুট এবং গোসল করার জন্য একটি জ্যাকুজি রয়েছে। এর পাশাপাশি ইয়টটিতে ৬৫ জনের জন্য বসার ব্যবস্থা আছে। নেইমার এটিকে নিজের জন্মস্থান ব্রাজিলের সান্তোসের একটি মেরিনায় রেখেছেন।
শুধু জলযান নয়, দামী আকাশযানও রয়েছে নেইমার জুনিয়রের সংগ্রহে। তিনি একটি Embraer Legacy 450 কিনেছেন, যার মূল্য ১৫ মিলিয়ন ডলার। এটি একসাথে প্রায় আটজন যাত্রী বহন করতে পারে। প্রায়শই ইউরোপ এবং ব্রাজিলের মধ্যে ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে এই বিমানটি ব্যবহার করেন পিএসজি তারকা।
বিশ্বের সর্বাধিক ধনী ফুটবল খেলোয়াড়দের একটি ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার রয়েছে। এবং নেইমারও এর ব্যতিক্রম নয়। তিনি চলাচলের সুবিধার জন্য Airbus H-145 কিনেছেন এবং এর জন্য তাকে প্রায় ১৪.৫ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে হয়েছিল।
তাছাড়া ব্রাজিলের Mangaratiba-তে নেইমারের একটি বাড়ি রয়েছে যার মূল্য প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন ডলার। নেইমারের অন্য সব কিছুর মতোই বাড়িটিও বেশ জাঁকজমকপূর্ণ৷ তিনি ২০১৬ সালে সম্পত্তিটি কিনেছিলেন, যা আড়াই একর জমিতে নির্মিত হয়েছিল।
এই বাড়িটিতে ছয়টি বেডরুম, একটি জিম, একটি হেলিপ্যাড, টেনিস কোর্ট সহ সুইমিং পুল এবং ৩০০০ বোতল ধারণক্ষমতার একটি ওয়াইন সেলার রয়েছে৷ ২০১৮ সালে পায়ের অস্ত্রোপচারের পর এই ব্রাজিলিয়ান ফুটবলার সুস্থ হয়ে কয়েক সপ্তাহ এখানেই কাটিয়েছেন।
আবার প্রায়শই তাকে অতিথিদের বারবিকিউ পার্টি করতে এবং পোকার খেলতে এই বাড়িতে আমন্ত্রণ জানাতে দেখা যায়। শুধু স্থায়ী আবাসন নয়, অস্থায়ী বাসস্থানের ক্ষেত্রেও নেইমার টাকা খরচ করেন দুই হাতে।
২০১৭ সালে যখন নেইমার প্যারিসে এসেছিলেন, তখন তিনি স্থায়ীভাবে থাকার জন্য অ্যাপার্টমেন্ট কেনার আগ পর্যন্ত একটি হোটেলে ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই এটি ছিল ফ্রান্সের অন্যতম আভিজাত্যপূর্ণ হোটেল। এবং এখানে থাকার জন্য নেইমারকে প্রতি মাসে প্রায় ১৬০০০ ডলার প্রদান করতে হতো।
নেইমার জুনিয়র নি:সন্দেহে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি আয় করা অ্যাথলেটদের একজন। সুতরাং এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, তার গ্যারেজে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের গাড়ি রয়েছে। পিএসজি তারকা কোথাও যেতে চাইলে বিভিন্ন মডেলের কার ব্যবহার করেন। তাছাড়া তিনি তার এসব গাড়ির ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে থাকেন।
গাড়ি সংগ্রহ ছাড়াও নান্দনিক সব হাতঘড়ি সংগ্রহ করা নেইমারের একটি পছন্দের কাজ।এবং তিনি তার সংগ্রহের জন্য একটি নতুন মডেলের ঘড়ি কিনতে হাজার হাজার ডলার খরচ করতে কোন দ্বিধা করেন না।
ফুটবল ক্যারিয়ারের পাশাপাশি নেইমার জুনিয়র তাঁর চেহারা নিয়েও বেশ সচেতন। ফুটবলার হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার পরে তিনি নিজের মুখের বেশকিছু অংশের খুঁত নিয়ে কাজ করেছেন যার একটি হলে দাঁত। সাবেক বার্সা সুপারস্টার ডেন্টাল ভিনিয়ার কিনেছেন। হেলথলাইন অনুসারে প্রতিটি দাঁতের দাম ২৫০০ ডলার পর্যন্ত দিতে হয়েছে।
আর এর অর্থ হল তিনি ৪০০০০ ডলার পর্যন্ত অর্থ প্রদান করেছেন সুন্দর হাসির জন্য। আর তাই নেইমারের হাসি বেশ ত্রুটিহীন মনে হয়।
এসব ছাড়াও নেইমার জুনিয়র প্রায় তাঁর কাছের বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়দের নিয়ে বিলাসী সব পার্টির ব্যবস্থা করেন। আবার অবসর পেলেই তাদের নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ব্যয়বহুল সব ভ্রমণে। অর্থ উপার্জন যেমন করেন, ঠিক তেমনি খরচও করেন নেইমার। কার্পণ্যতা যেন ছুঁয়ে যেতে পারেনি তাকে।