দোহার আল থুমামা স্টেডিয়ামে শেষ আটে ওঠার লড়াইয়ে দুর্দান্ত ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। পোল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা ধরে রাখা পথে আরো একধাপ এগোলো দিদিয়ের দেশম শিষ্যরা। এ ম্যাচে গোল করে ফরাসি কিংবদন্তি থিয়েরি অঁরিকে পেছনে ফেলে ফ্রান্সের ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন জিরুড।
গ্রুপ পর্বে নিজেদের শেষ ম্যাচে একাদশে ৯ টি পরিবর্তন করে তিউনিসিয়ার কাছে হারতে হয় ফ্রান্সকে। নক আউট পর্বের ম্যাচে তাই নিজের প্রথম একাদশে ফিরে গেলেন দেশম। এ ম্যাচে নামার সাথে সাথে রেকর্ডবুকে নাম তুললেন লরিস। ভাগ বসালেন ফ্রান্সের হয়ে সবচেয়ে বেশি ১৪২ ম্যাচ খেলা ১৯৯৮ বিশ্বকাপজয়ী লিলিয়ান থুরামের রেকর্ডে।
শুরু থেকেই খেলার নিয়ন্ত্রণ নেবার চেষ্টায় থাকা ফ্রান্স চার মিনিটের মাথায় ম্যাচে প্রথম সুযোগ পায়। আন্তোনিও গ্রিজমানের কর্ণারে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ডিফেন্ডার রাফায়েল ভারানের হেড গোলপোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে চলে যায়।
৩৬ বছর পর প্রথমবার বিশ্বকাপের নক আউটে ওঠা পোল্যান্ড নিজেদের রক্ষণ সামলাতেই ব্যস্ত ছিলো। তবে মাঝে মাঝে কাউন্টার অ্যাটাকে উঠছিলো তাঁরা। ২১তম মিনিটে প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে রবার্ট লেওয়ান্ডস্কির বাঁ পায়ের শট পোস্টের বাইরে দিয়ে চলে গেলে হতাশায় পোড়ে পোলিশরা। খেলার স্রোতের বিপরীতে ৩৮মিনিটের মাথায় গোল প্রায় পেয়েই যাচ্ছিল পোল্যান্ড। ডি বক্সে জেলিনস্কির শট পা দিয়ে ফেরান লরিস। ফিরতি বলে জেলিনস্কির আরেকটি প্রচেষ্টা ফিরিয়ে দেন দায়দ উপেমেকানো। এরপর ইয়াকুব কামিনিস্কির দারুণ শট গোললাইন থেকে বাঁচান ভারানে।
৪৪ মিনিটে জিরুডের গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। এমবাপ্পের পাস ডি-বক্সে পেয়ে বাঁ পায়ের শটে গোল করেন জিরুড। এই গোলে ফ্রান্সের সর্বকালের সর্বোচ্চ গোল দাতা এখন জিরুড। পেছনে ফেললেন ফরাসি গ্রেট থিয়েরি অঁরিকে। ফ্রান্সের হয়ে জিরুডের গোল এখন ৫২ টি। ১-০ গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে যায় ফ্রান্স।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই ব্যবধান বাড়াতে মরিয়া ছিলো ফ্রান্স। বেশ কয়েকটি সহজ সুযোগও তৈরি করে তাঁরা। তবে গোলের দেখা পাচ্ছিলেন না এমবাপ্পে, আন্তোনিও গ্রিজমানরা। প্রতি আক্রমণে গোলের সুযোগ তৈরি করে পোল্যান্ডও। তবে রবার্ট লেওয়ান্ডস্কির শট একাধিক বার লক্ষভ্রষ্ট হলে খেলায় ফেরা হয়নি পোল্যান্ডের।
৭৪ মিনিটে ডি বক্সের ভেতর থেকে কিলিয়ান এমবাপ্পের অসাধারণ শটে ব্যবধান দ্বিগুণ করে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। বিশ্বকাপে নিজের অষ্টম গোল করলেন এমবাপ্পে। এই গোলে কিংবদন্তি পেলেকে ছাড়িয়ে বয়স ২৪ পেরোনোর আগে বিশ্বকাপ ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোল এখন এমবাপ্পের।
ম্যাচের যোগ করা সময়ে আবারো এমবাপ্পে ম্যাজিক। চোখ ধাঁধানো ফিনিশিং এ ফ্রান্সকে ৩-০ গোলে এগিয়ে দেন এই পিএসজি তারকা। এছাড়া এবারের বিশ্বকাপে ৫ গোল করে এখন গোল্ডেন বুটে লড়াইয়ে সবার আগে এমবাপ্পে।
ম্যাচের একেবারে অন্তিম মূহুর্তে হ্যান্ডবলের জন্য ভিএআর এর সিদ্ধান্তে পাওয়া পেনাল্টি থেকে গোল করে ব্যবধান কমান রবার্ট লেওয়ান্ডস্কি। ৩-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ফ্রান্স।
নিজেদের শিরোপা ধরে রাখার পথে ভালোভাবেই কক্ষপথে আছে ফ্রান্স। সহজেই শেষ ষোলোর বাঁধা পেরিয়ে ফ্রান্স এখন অপেক্ষায় ইংল্যান্ড-সেনেগাল ম্যাচের বিজয়ীর জন্য, কোয়ার্টার ফাইনালে যাদের মুখোমুখি হবে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা।