সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। এখন যেকোন কিছুই দ্রুত ছড়িয়ে পরে সর্বত্র। ক্রিকেট মাঠের লড়াইটা আরেকটু জ্বালানি পায় সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে। তেমনই এক উদাহরণ হতে পারে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা এশিয়া কাপের ম্যাচের আগের দৃশ্যপট। বেশ কথা চালাচালি শেষে একটা দল জয় পেয়ে খেলছে ‘সুপার ফোর’। তবে কথার লড়াই নিশ্চয়ই বাড়িয়েছিল আগ্রহ।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটা ছিল বাঁচা-মরার। এ গ্রুপ থেকে আগেই আফগানিস্তান সুপার ফোর নিশ্চিত করে ফেলেছিল প্রথমে শ্রীলঙ্কা এবং পরে বাংলাদেশকে হারিয়ে। সেই গ্রুপের দ্বিতীয় দল হিসেবে কে যাবে পরবর্তী রাউন্ডে তা নির্ধারণেই মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহঃস্পতিবারের ম্যাচটা তো ছিল একেবারে শ্বাসরুদ্ধকর। প্রায় প্রতিটা মিনিটে রঙ বদলেছে খেলার। দারুণ ব্যাটিং প্রদর্শন করে বাংলাদেশের ব্যাটাররা। কুশল মেন্ডিস যেন ভাগ্য দেবতার সাথে সাক্ষাত করেই তবে নেমেছিলেন ব্যাট করতে। গুণে গুণে চারবার তিনি বেঁচে ফিরেছেন আউট হওয়ার দ্বারপ্রান্ত থেকে। তবে সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত থ্রো-তে শেষ অবধি টিকে থাকতে পারেননি তিনি।
যদিও ম্যাচ জয়ের ভীতটা ঠিকই গড়ে দিয়ে এসেছিলেন মেন্ডিস। বাকি কাজটা সহজ করে দেন অধিনায়ক দাসুন শানাকা। আর দাসুন শানাকাই প্রথম কথার লড়াইয়ের সুত্রপাত ঘটিয়েছিলেন। আফগানিস্তানের সাথে ম্যাচ হারার পর, তিনি বাংলাদেশকে অপেক্ষাকৃত দূর্বল দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছিলেন। সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান ছাড়া আর বাকি কোন বিশ্বমানের বোলার নেই বাংলাদেশের সে কথাও বলেছিলেন শানাকা।
শানাকা বলেছিলেন, ‘আফগানিস্তানের বিশ্বমানের বোলিং আক্রমণ রয়েছে। আমরা ফিজকে (মুস্তাফিজুর রহমান) চিনি সে ভাল বোলার। আর সাকিব বিশ্বমানের বোলার। তাঁদের ছাড়া বাংলাদেশের বোলনিং আক্রমণে তেমন বিশ্ব নন্দিত বোলার নেই। সুতরাং আফগানিস্তানের সাথে তুলনা করলে বাংলাদেশ সহজ প্রতিপক্ষ।’
শানাকার এমন বক্তব্যের পর ফেটে পড়ে পুরো সোশ্যাল মিডিয়া। তবে মূল ধারার গণ মাধ্যমেই তাঁর করা এমন বক্তব্যের জবাবটা দেন বাংলাদেশের টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদ সুজন। তিনি বলেন, ‘আমি জানি না কেন দাসুন সে মন্তব্য করল। আফগানিস্তানের দলটা বেশ ভাল। সে (দাসুন শানাকা) বল আমাদের দলে দুইজন ভাল মানের বোলার আছে। আমি তো শ্রীলঙ্কা দলে তেমন কোন বোলারকে দেখছি না। অন্তত বাংলাদেশের সাকিব ও মুস্তাফিজ রয়েছে। তাঁদের তো সেটাও নেই।’
ব্যাস আগুনে ঘি ঢালার মতই কাজ করে সুজনের এই বক্তব্য। ক্রমশ বিশ্ব মিডিয়াতে স্থান পেতে শুরু করে। খেলা মাঠে গড়ানোর আগেই উত্তাপটা ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। সে তাপটা অনুভব করেছিলেন লংকান সাবেক ক্রিকেটার ও কিংবদন্তি মাহেলা জয়াবর্ধনেও। তিনিও চুপ করে বসে থাকতে পারলেন না। টুইট করে বসেন, ‘শ্রীলঙ্কান বোলারদের মান দেখানোর এটাই সুযোগ এবং ব্যাটারদের দেখাতে হবে মাঠে তাঁরা কি।’
উত্তাপটা তখন দ্বিগুন। কথার লড়াইটা মাঠের ক্রিকেটের তেজ বাড়িয়েছে বহুগুণে। মাঠের দ্বন্দও হয়েছে সমানে সমান। শেষ ওভার অবধি ফলাফলের জন্য করতে হয়েছে অপেক্ষা। ঘাম ঝড়িয়েছে আরব আমিরাতে তপ্ত গরম। আর আরও একবার বাংলাদেশি ক্রিকেট সমর্থকদের মনে রক্তক্ষরণ ঘটিয়ে শেষ হাসিটা হেসেছে শ্রীলঙ্কা। এরপর আর মাহেলা জয়াবর্ধনের উল্লাস ঠেকায় কে!
ম্যাচ জয়ের আবারও টুইট করে নিজের উচ্ছ্বাসটা প্রকাশ করেন জয়াবর্ধনে। তবে কিঞ্চিৎ খোঁচা দিয়েই তিনি লেখেন, ‘ভাল খেলছ ছেলেরা!! চাপের মুখে ম্যাচ জিততে চমৎকার লড়াই করেছ। তোমাদের পারফরমেন্স ছিল বিশ্বমানের, এখন এটা বলার নিরাপদ সময়।’
ঠিক এভাবেই প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের উত্তাপের পারদ বাড়াতে সহয়তা করছে সোশ্যাল মিডিয়া। মাঠে খেলোয়াড়দের নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দিতেও উজ্জীবিত করছে মাঠের বাইরের কথার লড়াই।