লড়াইয়ের ভেতর অন্য লড়াই

মাঠের বাইরে দু’দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মস্তিস্কের লড়াইটা হবে তিতে-স্ক্যালনির মধ্যে। কিভাবে একাদশ সাাজাবেন, কোন ফরমেশনে খেলার পাশাপাশি কিছু গোপন ট্যাকটিকসও থাকবে। এছাড়া লিওনেল মেসি ও নেইমারের পাশাপাশি রক্ষনভাগ থেকে শুরু মধ্যমাঠ ও আক্রমনভাগেরও লড়াই হবে। বাদ যাবেনা দুই দলের দুই গোলরক্ষকের লড়াইও। ফরমেশনও থাকবে এতে। লড়াইয়ের ভেতর তাই রয়েছে অন্য লড়াইও।

  • ফরমেশনে কাছাকাছি দুই দল

আর্জেন্টিনা বেশিরভাগ ম্যাচেই ৪-২-৩-১ ফরমেশনে নেমে থাকে। ব্রাজিলও একই ফরমেশন নিয়ে মাঠে নামে। আবার মাঝেমধ্যে ৪-৪-২ পদ্ধতিতেও খেলে থাকে। সে হিসেবে দুই দলের রক্ষনভাগ থেকে শুরু করে আক্রমনভাগ প্রায় একই থাকবে।

এই যেমন ২০১৯ সালে আর্জেন্টিনার কাছে হারের পর থেকে তিতের কোচিংয়ে এখনো অপরাজিত দলের নাম ব্রাজিল। এবারের কোপা আমেরিকাতে প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই একই ফরমেশনে খেলেছে তার দল। বেশিরভাগ ম্যাচে ৪-২-৩-১ আবার কখনো ৪-৪-২ ফরমেশনে খেলিয়েছেন। কোপার ফাইনালে এই দুটির যে কোন একটিতে কার্যকর দেখা যাবে।

মধ্যমাঠ থেকে আক্রমণভাগে তেমন পার্থক্য না থাকলেও রক্ষনভাগে ব্রাজিল কিছুটা এগিয়ে থাকবে। আর্জেন্টিনা যেমন করে ৪-২-৩-১ ফরমেশন বেশি করে খেলিয়ে থাকে। ব্রাজিল আক্রমণভাগে শক্ত বলে রক্ষণভাগের উপর দিয়ে ঝড়টা বেশি যাবে স্কলানির দলের উপর। মেসির উপর দিয়েই বেশি করে আক্রমন করাটা নির্ভর করছে।

  • টাচলাইনে তিতে-স্ক্যালনির লড়াই

ঐতিহ্যবাহী মারাকানায় এবারের কোপা আমেরিকার সুপার ক্লাসিকোতে মুখোমুখি হওয়ার অপেক্ষা ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। মাঠের বাইরে টাচলাইনে তিতে-স্ক্যালনির লড়াইটাও যে জমজমাট হবে বলা যায় নির্ধিধায়। সেলেসাওদের যেমন টিানা দ্বিতীয় শিরোপাতে চোঁখ অন্যদিকে আলবিসেলেস্তাদের ২৮ বছর পর শিরোপা ফিরে পাওয়ার লড়াই।

কাতার বিশ্বকাপকে সামনে রেখে এই লড়াইয়ে জয়টা আত্ববিশ্বাসে বড় রকমের জ্বালানী সরবরাহ করবে বলেই ধারণা ফুটবলবোদ্ধাদের। ২০১৬ সালে কোপার শতবর্ষ পুর্তির আসরে ব্যর্থ দুঙ্গার স্থালিভিষিক্ত হন তিতে। এরপর ৬০ ম্যাচে তাঁদের জয় ৪৫ ম্যাচে। ১১ ম্যাচ ড্রয়ের বিপরিতে পরাজয় মাত্র চারটিতে। সাফল্যের হার ৮১.১ শতাংশ। ২০১৯ সালের ১৫ নভেম্বর আর্জেন্টিরা বিপক্ষে শেষ পরাজয় ছিল তাদের।

২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের কোয়াটারে বেলজিয়ামের কাছে হারলেও পরের বছর জেতেন কোপা আমেরিকার শিরোপা। ফাইনালের আগে তিতের কথা, ’আমি জয় পেতে ভালবাসি। সেটি দলীয় কিংবা ব্যক্তিগত যে কোন প্রচেষ্টাতে হলেই ভাল। ফাইনাল ম্যাচের মতো জায়গায় জয়ের যে কোন বিকল্প নেই।’

অপরাজিত থেকে কোপার ফাইনালে ওঠা ব্রাজিলের মতোই অবস্থা আর্জেন্টিনারও। রাশিয়া বিশ্বকাপে ফ্রান্সের কাছে পরাজয়ের পর হোর্হে সাম্পাওলির জায়গায় স্ক্যালনিকে বসায় আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশন। এখন পর্যন্ত ৩৩ ম্যাচে ১৯ জয়ের পাশাপাশি ১০ ড্র আর ৪ ম্যাচে পরাজয়। ৬৭.৬৭ সাফল্যের হার নিয়ে এবার কোপার ফাইনালে মাঠে নামার অপেক্ষায় তিনি। মাত্র চার মাস আগে মিনেইরোতে হার ভাবাচ্ছে তাঁকে।

পাশাপাশি খেলাটি ব্রাজিলের মাটিতে বিধায় আর্জেন্টিনার জন্য আরেকটি দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে। এবার মেসি যেভাবে জাতীয় দলের জার্সিতে রীতিমতো উড়ছেন তাতে করে স্ক্যালনি স্বপ্ন দেখতেই পারেন। তার কথায়, ‘প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ম্যাচে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে চাই আমরা। প্রতিটা খেলোয়াড়টা এবার মিরোপা জেতার জন্য মুখিয়ে আছে। কোথায় খেলণা কিংবা কোন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলছি এসব যেন অনেকটাই তুচ্ছ আমার কাছে’। তবে তিতে বিশ্বসেরা মেসিকে পরাস্ত করার পাশাপাশি টাচলাইনে হারাতে চান স্ক্যালনিকে।’

  • আক্রমণে সমান তবে রক্ষণে পিছিয়ে আর্জেন্টিনা

ব্রাজিলের মতো জমাট রক্ষনভাগ নেই আর্জেন্টিনার। মাঝে মধ্যে সেটি আবার ভেঙ্গে পড়ে। ফাইনালে আগে একমাত্র দুর্বলতা কিংবা অপূর্ণতা তাই। লিওনেল মেসি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত রয়েছেন বিধায় আক্রমণেই ম্যাচের জয় আনতে চান। সবসময়ই গোলরক্ষকে ব্রাজিল এগিয়ে থাকলে বহুবছর পর আর্জেন্টিনা কিছুটা হলেও নির্ভার থেকে ফাইনাল খেলতে নামছে।

এই যেমন, ২০১৮ বিশ্বকাপের পর ৮ গোলরক্ষককে খেলিয়েছেন আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কলানি। এর মধ্যে অতি সম্প্রতি ভাল করা এমিলিয়ানো মার্টিনেজই বড় ভরসার নাম। ব্রাজিল কোচ তিতে ভাবনায় অ্যালিসন ও এডারসন, দুজনেরই সমান পারফরম্যান্সের কারণে। এরপর রক্ষণভাগে পরিস্কারভাবেই এগিয়ে থাকবে ব্রাজিল। ২০২২ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে বেশ কয়েক বছর ধরেই নিজেদের রক্ষণভাগকে পোক্ত করেছে ব্রাজিল।

বিশ্বকাপ বাছাইপ ও কোপা মিলিয়ে সর্বশেষ ১২ ম্যাচে মাত্র ৪ গোল হজম করেছে তারা। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা সমানসংখ্যক ম্যাচে ৮ গোল হজম করেছে। ব্রাজিল দলে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে থিয়াগো সিলভা, রাইট ব্যাকে দানিলো আর লেফট ব্যাকে রেনান লোদি রয়েছেন। আর্জেন্টিনার রক্ষণে বর্তমান ভরসা নিকোলাস ওতামেন্দি। তার সঙ্গী হিসেবে সেমিফাইনালে জার্মান পেসেলা সেন্ট্রাল ডিফেন্সে, ক্রিশ্চিয়ান রোমেরো ইনজুরিতে পড়ায় ডান পাশে নাহুয়েল মলিনা এবং বাম পাশে নিকোলাস তালিয়াফিকো থাকবেন।

মধ্যমাঠও বেশ ভাল করছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা দু’দলই। সেটি সেলেসাও কোচ তিতেও জানেন। তাই তার প্রিয় ৪-৪-২ ফরমেশনে না খেলে সেটি বদলে ৪-৩-২-১ এ খেলাতে পারেন। সেমিফাইনালে করে যেমন মধ্যমাঠে আক্রমণভাগসহ পাঁচজন রেখেছেন, ফাইনালেও সেভাবেই ছক কষা হয়ে গেছে তার। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডে পরীক্ষিত ও অভিজ্ঞ কাসেমিরো, তাকে সঙ্গ ফ্রেড। তাদের সঙ্গে এভারটন সোরাস ও পাকুয়েতাকে আক্রমণভাগ ও মধ্যমাঠে দায়িত্ব পালন করবেন।

অন্যদিকে মধ্যমাঠে লিয়ান্দ্রো পারেদেস, রদ্রিগো দি পল ও জিওভানি লো সেলসোকে নিয়ে কিছুটা নির্ভার কোচ স্ক্যালনি। আর আক্রমণভাগে দুই দলই রয়েছেন বিশ্বের সেরা দুই তারকা। আর্জেন্টিনার যেমন লিওনেল মেসি, তেমনি ব্রাজিলে নেইমার। নেইমারকে সঙ্গ দেওয়ার জন্য আগের মতো পাকুয়েতা ও এভারটনকে মিডফিল্ডের দায়িত্ব নিয়ে ওপরে উঠতে হবে। আর্জেন্টিনার মেসিকে ঘিরে থাকবেন লাউতারো মার্তিনেজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link