লড়াইটা শুধুই ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার নয়!

মাঠের বাইরে যখন এই অবস্থা তখন মাঠের ভেতরেও তো এর উত্তাপটা টের পাওয়ার কথা। বিশেষ করে খেলোয়াড়ে খেলোয়াড়ে লড়াইটাও কম হয়না। ফাইনাল ম্যাচের আগেহ সংবাদিকদের নানারকম কথা বলতে শোনা যায়। যেমন করে প্রিয় খেলোয়াড় আর বন্ধু লিওনেল মেসিকে নিয়ে কথা বলতে ছাড়েননি নেইমার। মাঠে তার সাথে কোন বন্ধুত্ব নয় বলেও পরিস্কার বলে দিয়েছেন। তবে দীর্ঘ ২৮ বছরের শিরোপা খরা কাটাতে মেসিও যে এক চুল ছাড় দেবেন না সেটি একরকম পরিস্কার করেই বলে দেওয়া যায়।

ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার লড়াইয়ে আলাদা উত্তাপটা প্রায়শই লক্ষ্য করা যায়। এবার আবারো কোপা আমেরিকার লড়াইয়ে অবতীর্ণ ফুটবলবিশ্বের দর্শক নন্দিত দল দুটি। নানা কারণে এবার আলাদা উত্তাপ ছড়াচ্ছে। কারো কাছে লিওনেল মেসি-নেইমার আবার কারো কাছে তিতে-স্ক্যালনির মধ্যকরা লড়াই।

তবে সবার উপরে এই দুটি দলের লড়াই। সেই ছাপিয়ে গেছে সাধারণ থেকে অসাধারন সবার মধ্যে। সে কারণেই ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট কোপার ফাইনালে তার দল ৫-০ গেড়ালে জিতবে বলে আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্টকে টিপ্পনী কেটেছেন। ফাইনাল ম্যাচটা যত এগিয়ে এসেছে জল্পনা-কল্পনা ততই বেড়ে চলেছে।

একাদশটা কেমন হয় তাঁর পাশাপাশি কৌশল আর জয়-পরাজয় নিয়ে টেবিলের লড়াইটা এখন চলছে দুনিয়াজুড়ে। সম্প্রতি দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন দেশের নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠক হয়েছিল। সেখানে হাজির ছিলেন কোপা আমেরিকার ফাইনালে থাকা দুই দেশ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার দুই রাষ্ট্রপ্রধানও। অবধারিতভাবেই সেখানে উঠে এল চিরপ্রতিদ্বন্ধী দুই দেশের লড়াইয়ের বিষয়টি।

তখন আর্জেন্টাইন রাষ্ট্রপতি অ্যালবার্তো ফের্নান্দেজের সামনেই বলসোনেরো ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে বলেন, কোপার পাইনালে ব্রাজিল এবার ৫-০ গোলে আর্জেন্টিনাকে পরাজিত করবে। এটি যেন তার কৌশল সেটি ফুটবলবোদ্ধারা ঠিকই বুঝেছেন। তবে ফুটবলজানা সবাই এরই মধ্যে বিষয়টি জেনে গেছেন।

নিজ দেশ যখন কোন মহাদেশীয় লড়াইয়ের ফাইনালে খেলবে তখন উত্তেজনা টের না পাওয়ার কোন কারণই নেই। লড়াইটা যদি ফুটবলের দুই দেশ ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার হয় তাহলে তো কথাই নেই। অথচ একইদিন ইউরো ২০২০ এর ফাইনালও অনুষ্ঠিত হবে। ইংল্যান্ড-ইতালীর লড়াই নিয়ে মানুষের এতটা আগ্রহ নেই। বাংলাদেশ তো এখন দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। উত্তাপটা বেশি টের পাওয়া যাচ্ছে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলায়।

এমনিতে ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে নিয়মিতই নিজেদের মধ্যে মারামারিতে লিপ্ত হয়ে থাকে জেলার মানুষেরা। এবার সেখানে যোগ হয়েছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ফাইনাল নিয়ে। বাংলাদেশে এই জেলার সংঘর্ষের খবর এরই মধ্যে পৌঁছে গেছে মেসি-নেইমারদের কাছেও! যা আন্তর্জাতিক মিডিয়ারও নজর কেড়েছে। ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার ফুটবল সমর্থকদের এমন পাগলামি এবং এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা স্থান পেয়েছে আন্তর্জাতিক মিডিয়ায়ও।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘটে যাওয়া ঘটনা নিয়ে খবর গুরুত্ব সহকারে প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা এএফপি। সংস্থাটিতে এই ঘটনা ও ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ফাইনাল নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েনের খবরও ফলাও করে প্রকাশের পর তা ছড়িয়ে পড়েছে পুরো বিশ্বে।

এএফপির সংবাদে আরও বলা হয়, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ এমরানুল ইসলাম তাদের জানিয়েছেন, ‘ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার মধ্যে কোন দেশ ভালো খেলে, তা নিয়ে তর্কে হাতাহাতি হয় দুটি ছেলের মধ্যে। তাদের সাথে যোগ দেন দুই দলের আরও কিছু ভক্ত।’

অথচ কোপার ফাইনাল হবে ব্রাজিলের মারাকানা স্টেডিয়ামে, সেখান থেকে ১৫ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দূরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই দেশের এই ফাইনাল নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সদা সতর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে প্রকাশ করার পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের দেশ দুটির প্রতি বালবাসাও প্রকাশ পেয়েছে।

বাংলাদেশের ব্রাজিল দূতাবাস সর্বশেষ দুটি বিশ্বকাপ থেকেই এদেশে তাদের ভক্তকূল সম্পর্কে একটা ধারনা পেয়েছে। এবারের কোপা আমেরিকা কাপ উপলক্ষ্যে আর্জেন্টিনার দূতাবাসও জেনে গেছে। কারণ দেশটির সুপারষ্টার লিওনেল মেসি যে আবার ২০১১ সালে বাংলাদেশে এসেছিল প্রীতি ম্যাচ খেলতে। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচটি নিয়েও উত্তেজনা ছিল বাংলাদেশে।

মাঠের বাইরে যখন এই অবস্থা তখন মাঠের ভেতরেও তো এর উত্তাপটা টের পাওয়ার কথা। বিশেষ করে খেলোয়াড়ে খেলোয়াড়ে লড়াইটাও কম হয়না। ফাইনাল ম্যাচের আগেহ সংবাদিকদের নানারকম কথা বলতে শোনা যায়। যেমন করে প্রিয় খেলোয়াড় আর বন্ধু লিওনেল মেসিকে নিয়ে কথা বলতে ছাড়েননি নেইমার। মাঠে তার সাথে কোন বন্ধুত্ব নয় বলেও পরিস্কার বলে দিয়েছেন। তবে দীর্ঘ ২৮ বছরের শিরোপা খরা কাটাতে মেসিও যে এক চুল ছাড় দেবেন না সেটি একরকম পরিস্কার করেই বলে দেওয়া যায়।

ফাইনালে আগে স্বাভাবিকভাবেই পরিসংখ্যান নিয়ে কথা ওঠে। এবার যেমন করে একবার ব্রাজিল আবার আর্জেন্টিনার পক্ষে কথা বলছে। এখন পর্যন্তক ১১১ বারে লড়াইয়ে আর্জেন্টিনার জয় এসেছে ৪৬ ম্যাচে, ৪০ টিতে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ব্রাজিল আর বাকি ২৫ ম্যাচ শেষ হয়েছে অমিমাংসিতভাবে। অন্যদিকে কোপা আমেরিকার আসে গত ২৬ বছরে ব্রাজিলকে হারাতে পারেনি আর্জেন্টিনা।

এবার ব্রাজিলের মাটিতে খেলা বিধায় স্বাগতিকদরে এগিয়ে রাখছেন অনেকেই। তবে দুই দলের সর্বশেষ লড়াইয়ে ১-০ গোলের জয় এসেছিল মেসির দলের। আর ২০১৯ সালের ফাইনাল জিতে কোপার বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দল আবার সেলেসাওরা। আলবি সেলেস্তাদের হারেিয় নেইমারের দল শিরোপা জিতেছিল। এছাড়া নকআউট পর্বের সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচের সবকটিতেই জয় ব্রাজিলের।

সে হিসেবে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে রাখা যাবে শুধুমাত্র হেড টু হেডের লড়াইয়ে। ব্রাজিলের ১৬৫ গোলের বিপরিতে আর্জেন্টিনা করেছে ১৬১ গোল। ৬-১ গোলের বড় জয়টি আবার আর্জেন্টিনা। ১৯৪০ সালে বুয়েনস আইরেসে কোপা জুলিও রোকাতে এই জয়টি আসে। অন্যদিকে ব্রাজিলের সর্বোচ্চ ব্যবধানে জয় ৬-২ গোলে। ১৯৪৫ সালে একই আসরে জয় পায় তারা।

দুই দলের মধ্যে সবচেয়ে কম ২-১ ব্যবধানে ম্যাচ হয়েছে ১৬টি। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৬ সালের মধ্যে টানা পাঁচ ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ব্রাজিল টানা জয় পেয়েছিল। অন্যদিকে আর্জেন্টিনা টানা চার ম্যাচ জিতেছিল ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ সালে। ১৯৭০ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত আবার টানা ১৩ ম্যাচে আর্জেন্টিনার কাছে হারেনি ব্রাজিল।

দু’দলের লড়াইয়ে টানা সবচেয়ে বেশি ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ড আবার এটি। আর্জেন্টিনা দুবার টানা ছয় ম্যাচে অপরাজিত থেকেছিল। দুই দলের মধ্যে ৮ গোল করে সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছেন পেলে। ৭ গোল করে আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ এমিলিও বালদোনেদোর। এ পর্যন্ত তিনবার কোপার ফাইনালে খেলে একবার আর্জেন্টিনা আর দুবার জিতেছিল ব্রাজিল।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...