মারুফ অথবা ধুমকেতু

এক সময়ের ব্যাচমেট প্রায় এক দশক ধরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বিশ্ব ক্রিকেট। অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে মেহেদী মারুফের সঙ্গী ছিলেন সাকিব আল হাসান। সাকিব দ্যুতি ছড়াচ্ছেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। মারুফ রয়ে গেছেন অভেদ্য এক পর্দার আড়ালে। তবুও মারুফ মাঝে মধ্যেই সে পর্দা ভেদ করে বেড়িয়ে আসার চেষ্টা।

এই যেমন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে তিনি এবার পেয়ে গেলেন  শতকের দেখা। গাজি গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে এনে দিয়েছেন উড়ন্ত সূচনা। প্রায় একশ স্ট্রাইকরেটে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন মারুফ। আটটি বাউন্ডারি যুক্ত হয়েছে  তাঁর নামের পাশে। সেই সাথে মেরেছেন দুই খানা বিশাল ছক্কাও।

প্রতিপক্ষ কোন বোলার তাকে থামাতে পারেনি। শেষদিকে বেশ খুড়িয়ে খুড়িয়ে রান নিয়েছেন। রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরেছেন প্যাভিলনে। তপ্ত গ্রীষ্মের রোদ উপেক্ষা করে তিনি প্রায় ১৪২ মিনিট ব্যাট করেছেন মধ্যমাঠের শক্ত মাটিতে। তাইতো পেশির হাল ছেড়ে দেওয়ারই কথা।

এদিন মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ব্রাদার্স ইউনিয়নের মুখোমুখি হয়েছিল গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স। মিরপুরের মন্দ পিচের উপর দাঁড়িয়ে গাজী গ্রুপ ৩০০ রানের গণ্ডি পেরিয়েছে। তবে ক্যারিয়ারে নিজেকে কখনো ছাপিয়ে যেতে পারেননি মেহেদী মারুফ।

অথচ ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি বেশ প্রসিদ্ধ ছিলেন মারকুটে ব্যাটার হিসেবে। ২০১৬ বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তিনি রীতিমত খবরের শিরোনাম হয়েছেন নিয়ম করে। নিজের ব্যাটার সত্ত্বার পূর্ণ বিকাশটাই সেবার করেছিলেন। তবে নিজের ক্যারিয়ারে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারেননি। প্রচণ্ড আলোর বিকরণের মাঝে তিনি যেন বিক্ষিপ্ত এক রশ্মি।

অবশ্য ঘরোয়া ক্রিকেটে তিনি নিয়মিত মুখ। কিন্তু সেখানেও রয়েছে অধারাবাহিকতার ছোঁয়া। এবারের ডিপিএলের খেরোখাতা একটু নেড়ে দেখলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। টূর্নামেন্টের শুরুর দিকে তিনি ছিলেন চরম রান খরায়। শূন্যের ধারাবাহিকতা মেনেছেন তিনি টানা তিন ইনিংসে।

তবে সব খারাপ সময়ের একটা শেষ আছে। তেমনি মারুফের ফেটে চৌচির হয়ে যাওয়া রানের মাঠে বৃষ্টির অবারিত ধারা ঝড়তে শুরু করেছে। ক্রমশ যেন সে ধারা প্রবল হয়েছে। অগ্রনী ব্যাংকের বিপক্ষে ৬৭ দিয়ে শুরু। এরপর তিনি সিটি ক্লাবের বিপক্ষে করে ৬৬ রান।

ঠিক তার পরের ম্যাচেই শতক। কিন্তু এর আগের ছয় ইনিংসে তিনি সর্বসাকুল্যে রান করেছেন ৪৮ রান। ঠিক এখানটায় মেহেদী মারুফ পিছিয়ে যান অনেকটা দূর। তাইতো তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরার সুযোগটুকু পাননি।

তাছাড়া একেবারেই নজর কাড়া কোন প্রতিভার ঝলক তিনি দেখাতে পারেননি। ঘরোয়া ক্রিকেটের পরিসংখ্যান আর পারফরমেন্সও যথেষ্ট সাদামাটা। প্রথম শ্রেণি আর লিস্ট এ ক্রিকেট মিলিয়ে তাঁর নামের পাশে রয়েছে কেবলমাত্র ১১টি সেঞ্চুরি।

প্রায় দেড় দশক ধরে তিনি ঘরোয়া ক্রিকেটের সাথে সম্পৃক্ত। একজন টপ অর্ডার ব্যাটার হিসেবে এই সময়ে প্রচুর রান করবার কথা মারুফের। তবে আগ্রসনকে সঙ্গী করতে গিয়ে পিছিয়ে পড়েছেন বাকিদের থেকে। অনিয়ন্ত্রিত আগ্রাসনে মাশুল হয়ত।

তবুও মারুফ হাল ছেড়ে দেননা। তিনি লড়াই চালিয়ে যান। হাতের নাগালে থাকা যেটুকু ক্রিকেট থাকে তা তিনি উপভোগ করেন। যতটুকু  সময় মাঠে থাকা যায় তিনি সরব থাকার চেষ্টা করেন। না ঠাই দাঁড়িয়ে থাকা স্ট্যাম্প হয়ে নয়। যান্ত্রিকতার নিয়ম মেনে রান তুলে কিংবা না তুলেই।

অন্তত এবারের এই রান ধারা অব্যাহত থাকুক মারুফের। জাতীয় দলের দরজাটা তাঁর জন্যে বন্ধই বলা চলে। পেছনের কারণ বয়স। কোন ধরণের প্রাপ্তির মরীচিকার পানে নয়। স্রেফ ক্রিকেটকে উপভোগ করে যাওয়াই যেন মারুফের এখন প্রধান লক্ষ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link