সংখ্যার হিসেবে এমন ম্যাচ হারের সংখ্যা বাংলাদেশের ইতিহাসে নেহায়েতই কম নয়। মিরপুর কতবার যে হতাশায় আচ্ছন্ন হয়েছে এমন সব ম্যাচে তার ইয়ত্তা নেই। মুক্ত আকাশ পানে দু’হাত তুলে প্রার্থনায় জপা দর্শকদের জন্য মিরাজের উইনিং রানটা তাই আজকের ম্যাচটা অন্যরকম এক উচ্ছ্বাসের উৎসই হয়ে উঠেছিল।
স্কোর তখন সমতায়। মিরাজ কাভার অঞ্চলে আলতো করে ঠেলে দিয়ে তুলে নিলেন উইনিং রান। আর ম্যাচ জেতার পরেই দিলেন ভো-দৌড়। ড্রেসিং রুমও হঠাৎ করে প্রাণ ফিরে পেল। অ্যালান ডোনাল্ডের চিন্তিত মনে হাসির উদয় ঘটল। আর নির্লিপ্ত সাকিব যেন নিজের স্বরূপটাই ভুলে গেলেন। মিরাজকে আলিঙ্গন করতে তিনিও ছুটে এলেন।
ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচের শেষ দৃশ্যপটটা ঠিক এমনই ছিল। তবে ম্যাচেজুড়েই রঙ বদলেছে বারবার। ম্যাচের প্রথম অংশটা বাংলাদেশের। দ্বিতীয় ভাগের শুরুটাও বাংলাদেশের। কিন্তু এরপরই সেই চিরায়ত স্বভাব যেন জেঁকে বসল। জিততে থাকা একটি ম্যাচে হঠাতই ছন্দপতন। তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়তে শুরু করলো বাংলাদেশের মিডল অর্ডার। তবে মিরাজ তরীতে চেপে ঠিকই শেষ পর্যন্ত শত প্রতিকূলতায় ম্যাচ জয়ের তীরে ঘেঁষল লিটন দাশের বাংলাদেশ।
লিটন দাশের বাংলাদেশ মানে? ভারতের বিপক্ষে সিরিজে তিনিই তো টাইগারদের কাপ্তান। নিজের প্রথম ওডিআই কাপ্তানিতেই পেলেন জয়ের দেখা। ফিল্ডিংয়ের সময় বিরাট কোহলির দুর্দান্ত এক ক্যাচ, সাথে ব্যাটিংয়ে গুরুত্বপূর্ণ ৪১ রানের ইনিংস- নিজের দিনে ঠিকই উজ্জ্বল হয়েছিলেন তিনি। তবে এবারের অভিজ্ঞতাটা অন্যরকম। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম বাংলাদেশকে জেতালেন। এমন ম্যাচ জয়ের পরে কেমন অনুভূতির উদয় হয়েছিল লিটন দাশের মাঝে? ম্যাচশেষে সেই প্রতিক্রিয়াই তিনি ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন,
‘এটা অনবদ্য। এটা অবিশ্বাস্য। আমি ড্রেসিং রুমে খুবই নার্ভাস হয়ে বসেছিলাম। শেষ ৬/৭ ওভারে মিরাজের ব্যাটিংয়ে মুগ্ধ হয়েছি। আমি আর সাকিব ভাই যখন ব্যাটিং করছিলাম তখন জয়টা খুবই সহজ মনে হচ্ছিল। কিন্তু আমরা আউট হয়ে যাওয়ার পর এটা খুব কঠিন হয়ে যায়। আর ভারতও সেই সময়ে ভাল বোলিং করেছিল। তবে মিরাজ দুর্দান্ত ব্যাটিং করে গেছে শেষ পর্যন্ত। মিডল ওভারগুলোতে ওর ব্যাটিংয়েই আমরা মোমেন্টাম ফিরে পাই।’
৩৮ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন মিরাজ। ছোট ইনিংস, তবে কার্যকরী একটি ইনিংস। এমনকি সেটা ম্যাচজয়ী ইনিংস বললেও ভুল হয় না। চাপের মুখে মিরাজ যেমন সাবলীল ব্যাটিং করেছেন তা এক কথায় দারুণ। এমন ইনিংসের কারণে ম্যাচসেরার পুরস্কারও গিয়েছে তাঁর হাতে। ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কার নিতে গিয়ে নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মিরাজও।
তিনি বলেন, ‘দারুণ লাগছে। আমি ব্যাটিংয়ের সময় শুধু মাঠের একটি অঞ্চলকে টার্গেট করে খেলেছি। আমার স্ট্র্যাটেজি ছিল, ২০ বল মাঠে থাকলে ম্যাচ বেরিয়ে আসবে। বোলিংয়ের সময়ও আমি উইকেট টু উইকেট বল করার চেষ্টা করেছি। এটা আমার জন্য স্মরণীয় এক পারফরম্যান্স হয়ে থাকবে।’
শেষ উইকেট ৫০+ রানের জুটি গড়ে এর আগে কখনোই কোনো দল ভারতকে ওয়ানডে ম্যাচে হারাতে পারেনি। মিরাজ-মুস্তাফিজের দৃঢ়তায় সেই না হওয়া সমীকরণকেই পাল্টে দিয়ে ইতিহাস গড়লো বাংলাদেশ। এমন ম্যাচ হারের পরে তাই নিশ্চিতভাবেই হতাশ ছিলেন ভারতের অধিনায়ক রোহিত শর্মা। তবে তিনি হারের কারণ হিসেবে দুষছেন ব্যাটিংকে। ম্যাচ শেষে পর তিনি বলেন,
‘এটা খুবই ক্লোজ ম্যাচ ছিল। আমরা ভাল করছিলাম। তবে ব্যাটিংটায় আমরা ভাল করতে পারিনি। ১৮৪ রান স্কোরবোর্ডে যথেষ্ট ছিল না। কিন্তু আমরা বোলিংয়ে ভাল করছিলাম। যদিও শেষ পর্যন্ত নার্ভ ধরে রাখতে পারিনি। আমার মনে হয় আরো ২৫-৩০ রান আসা উচিত ছিল আমাদের। ২৫ ওভার পর আমরা ২৪০ আশা করছিলাম। কিন্তু আপনি যদি ক্রমাগত উইকেট হারাতে থাকেন তাহলে এটা কঠিন হয়ে যায়। আমাদের আরো শেখা উচিত।এই উইকেটে কিভাবে খেলতে হয় তা আরো বুঝা উচিত। কোনো অজুহাত নয়। চাপের মুহূর্ত আরো ভালভাবে ডিফেন্ড করা শিখতে হবে। আশা করছি, আমাদের খেলোয়াড়রা সেটি শিখবে এবং পরের ম্যাচেই তার একটা ছাপ রাখতে পারবে। এখন পরের ম্যাচের জন্য মুখিয়ে আছি। আশা করছি অনেক কিছুর পরিবর্তন আমরা মাঠে দেখাতে পারব। আমরা জানি, এই কন্ডিশনে আমাদের কী করা প্রয়োজন।’
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আবারো আগামী ৭ ডিসেম্বরে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ-ভারত। সেই ম্যাচ জিততে পারলে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিতে নিবে টাইগাররা। এর আগে, সবশেষ ২০১৫ সালে ভারতকে ওয়ানডে সিরিজ হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ৭ বছর আগের সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটাতে এবারও নিশ্চয় মুখিয়ে থাকবে সাকিব মিরাজরা।