শীতল প্রতিটা রাত ঠিক কতটা সুদীর্ঘ সেটা অপেক্ষায় থাকা মানুষরা বেশ ভাল করেই জানে। এমন ৩৬টি বছর অপেক্ষা করেছে গোটা আর্জেন্টিনা দল। ১৯৮৬ সালে ডিয়েগোর ম্যারাডোনার নৈপুণ্য গোটা দেশটাকে ভাসিয়েছিল বিশ্ব জয়ের আনন্দে। এর পরের তিনটি যুগ আনন্দের মিছিল হয়নি বুয়েন্স আয়ার্স কিংবা রোসারিওতে।
সেই অপেক্ষার অবসানটা ঘটালেন ৩৫ বছর বয়সী লিওনেল মেসি। কাগজে কলমের হিসেবে এটিই ছিল তাঁর ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ। শেষ বিশ্বকাপটাই তিনি জিতে নিলেন নিজের জন্য, আর্জেন্টিনার প্রতিটা মানুষের জন্য। দারিদ্র জর্জর দেশটায় কিছু দিনের জন্য আনন্দ-উৎসবের একটা উপলক্ষ এনে দিয়েছিলেন লিওনেল মেসি।
আর্জেন্টিনার বাকি সব শহরের মত রোসারিও শহরও সেই আনন্দের শামিল। এই শহরটা তো সবচেয়ে বেশি গর্বিত। আর্জেন্টিনার এই শহরেই তো জন্মেছিলেন সর্ব কালের সেরা খেলোয়াড় লিওনেল আন্দ্রেস মেসি। এই শহরের মাটিতেই তিনি প্রথম ফুটবল নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছিলেন মেসি। এরপর সেই শহরের বাতাস ফুসফুসে ভরেই তিনি অদম্য গতিতে শেষ অবধি ছুঁয়ে দেখলেন আরাধ্য সেই শিরোপা।
তাই হয়ত রোসারিও শহরের মানুষের আনন্দের নেই কোন বাঁধ। রোসারিওতে যেন আনন্দ থামছেই না। লিওনেল মেসি স্বাভাবিকভাবেই ফিরেছেন তাঁর শৈশবের শহরে। তাঁর বাড়ির সামনে তাই মানুষের উপচে পড়া ভীর। সবাই একটি বারের জন্য দেখতে চান ক্ষুদে জাদুকরকে। তবে লিওনেল মেসি পারছেন না সবার ইচ্ছে পূরণ করতে। তাই তো তিনি ক্ষমা চেয়েছেন রোসারিওর প্রতিটা মানুষের কাছে।
নিজের অপরাগতা নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে মেসি বলেন, ‘আমরা রোসারিওর সবাইকে শুভেচ্ছা জানাই। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ আপনাদের অকৃত্রিম ভালবাসার জন্য, বিশেষ করে বিশ্বকাপ থেকে ফেরার পরে আপনাদের দেখানো ভালবাসার জন্য। কিন্তু আমাদের ক্ষমা করবেন, আমরা সবার সাথে দেখা করতে পারছি না। আমরা আমাদের পরিবারের সাথে স্বল্প কিছুদিনের জন্য সময় কাঁটাতে পারি। এই সময়ে সবাইকে সময় দেওয়া মুশকিল।’
তাঁকে একটি পলক দেখবার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান হাজার হাজার মানুষ। মেসি সেটা খুব ভাল করেই জানেন। বিশ্ব জয়ের পরও তাই মেসির মস্তিষ্ক থেকে ভক্তদের চিন্তা দূর হয়নি। বরং তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন তাঁর সমর্থকদেরকে অপেক্ষায় রেখেছেন বলে। ঠিক এখানটায় মেসি জেঁকে বসেন ভক্তদের মনের মণিকোঠায়। এভাবেই মেসি বনে যান সর্বকালের সর্বসেরা।