মেসির কণ্ঠে পূর্ণতা পাওয়ার দিনের গল্প

১৮ ডিসেম্বর, ২০২২। লুসাইলে বিশ্বকাপ হাতে লিওনেল মেসি। অমরত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব কিংবা পূর্ণতা- সবটাই ঐ এক মুহূর্তে পাওয়া। একই সাথে আর্জেন্টিনার ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান ঐ দিনেই।

বিশ্বকাপ জয়ের সে মুহূর্তের প্রায় মাস দেড়েক পেরিয়ে গেলেও রেশ এখনো কাটেনি। স্বপ্নময় সে যাত্রা থেকে বের হতে পারছেন না মেসি। তবে মেসির কন্ঠে সেই সব স্মৃতি, মুহূর্তের গল্প জানা হয়নি।

অবশেষে বিশ্বকাপ জয়ের পর প্রথম সাক্ষাৎকার দিলেন এলএমটেন। আর্জেন্টাইন রেডিও ‘উরবানা প্লেই’- এর সাংবাদিক অ্যান্ডি কুজনেতসফকে দিলেন দীর্ঘ এক সাক্ষাৎকার। সে সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে বিশ্বকাপ জয়ের পর নিজের অনুভূতি, সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতাসহ ডিয়েগো ম্যারাডোনার কথা।

ফ্রান্সের বিপক্ষে টাইব্রেকারে এমিলিয়ানো মার্টিনেজ বীরত্বে আর্জেন্টিনার জয়। এরপরই বিশ্বকাপ জয়ের মুহূর্ত আসে আলবিসেলেস্তাদের জন্য। কিন্তু সেই সোনালি ট্রফি তখনও নির্দিষ্ট এক জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। লিওনেল মেসি তখনও আরাধ্য সেই ট্রফির স্পর্শ পাননি। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের একদম শেষে আর্জেন্টিনাকে ট্রফি তুলে দেওয়া হবে। কিন্তু মেসি আর লোভ সামলাতে পারলেন না।

সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার নিতেই গিয়েই বিশ্বকাপ ট্রফিতে চুমু এঁকে দিলেন। আর সেটি হয়েই গেল মেসির ক্যারিয়ারের আইকনিক এক ছবি। সেই মুহূর্ত নিয়ে মেসি সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ট্রফিটা এক পাশে রাখা ছিল। কিন্তু যা করতে ইচ্ছা হচ্ছিল, তা পারছিলাম না। ট্রফিটা যেন আমাকে ডাকছিল ‘এসো, আমাকে নিয়ে যাও। এখন তুমি আমাকে ছুঁতে পারো।’ তাই কী মনে করে ট্রফিটা চুমু খেয়ে ফেলি।’

টানা তিন ফাইনাল হারের পর টানা তিন ফাইনাল জয়। সময়ের পরিক্রমায় মেসি যেন শূন্য থেকে শিখরে নিয়ে গেলেন নিজেকে। প্রথমে কোপা দিয়ে শুরু, এরপর ফিনালিসামা। আর তারপর সেই আরাধ্য বিশ্বকাপ। মেসিও তাই সৃষ্টিকর্তাকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যাননি।

এ নিয়ে তিনি বলেন, ‘সম্ভবত ২০১৪ সালের আগে বলেছিলাম। সৃষ্টিকর্তা আমাকে বিশ্বকাপ উপহার দেবেন। কিন্তু সহজে পাচ্ছিলাম না। তবে শুরুটা হলো ব্রাজিলে। সেখানে কোপা আমেরিকা জিতলাম। তারপর সেই বিশ্বকাপ জেতার মুহূর্তটার দেখা পেলাম। আমি জানতাম তিনি আমাকে এটা উপহার দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন। এটা কিভাবে মনে হয়েছে, বুঝিয়ে বলতে পারব না। জীবনে যা যা অর্জন করেছি, সে জন্য প্রতিদিনই তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। এর চেয়ে বেশি কিছু চাইনি। যা কিছু অর্জন করেছি, সে জন্য তাঁকে ধন্যবাদ।’

১৯৮৬ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ডিয়েগো ম্যারাডোনা। কিন্তু সেই বিশ্বকাপ জয়ের পর আর্জেন্টিনার ঘরে বিশ্বকাপ শিরোপা ওঠার দৃশ্য আর দেখে যেতে পারেননি তিনি। বছর দুয়েক আগে পরলোকে পাড়ি জমান এ ফুটবল ঈশ্বর। সেটি নিয়ে কিছুটা আক্ষেপও রয়েছে মেসির।

ম্যারাডোনার কথা টেনে তিনি বলেন, ‘ডিয়েগো ম্যারাডোনার হাত থেকে বিশ্বকাপ ট্রফিটা পেলে খুশি হতাম। সারা জীবন তিনি আর্জেন্টিনাকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। কিন্তু দেখে যেতে পারলেন না। অবশ্য তাঁর সেই প্রত্যাশা অন্তত পূরণ হয়েছে। ট্রফিটা তাঁর হাত থেকে নিতে পারলে দারুণ একটা ছবি হতো।’

বিশ্বকাপ জেতার পর মেসির মতো তাঁর পরিবারের উচ্ছ্বসিত দৃশ্যও খুব জনপ্রিয় হয়েছে। কাতার বিশ্বকাপে সেই মুহূর্ত টেনে মেসি বলেন,  ‘অবিশ্বাস্য একটা মাস কেটেছে কাতারে। থিয়াগো তো পাগল হয়ে গিয়েছিল। সে কেমন উদ্‌যাপন করেছে, সবাই দেখেছে। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ম্যাচের পর সে কেঁদেছে। চিরো অবশ্য এসব একটু কম বুঝে। প্যারিসে ফেরার পর কাতারের সেই সব দিনগুলো খুব মনে পড়েছে।’

একই সাথে মেসি ফাইনালের আগের রাতের কথাও সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘পুরো বিশ্বকাপেই আমি ফুরফুরে মেজাজে ছিলাম। খেলার বিষয়ে কোনো কথা হয়নি। অ্যান্তোনোলার সাথে গল্প করেছিল। আর রাতে একটা ভাল ঘুম দিয়েছি।’

মেসি যদি এখন ১৩ বছরের বয়সী মেসি থাকতেন তাহলে তাঁকে এখন তিনি কী বলতেন? সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে বেশ মজা করেই মেসি বলেন, ‘অবিশ্বাস্য কিছু আসতে যাচ্ছে, যা তুমি ভাবতেও পারবে না। স্বপ্ন দেখা বন্ধ করো না। কারণ সামনে দারুণ কিছু আসতে যাচ্ছে তোমার জন্য। তোমার একটা সুন্দর সমাপ্তি হবে।’

লেখক পরিচিতি

বাইশ গজ ব্যাসার্ধ নিয়ে একটি বৃত্ত অঙ্কন করার চেষ্টা করি...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link