ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে মাঠে নামবেন লিওনেল মেসি। প্রথমবার জার্মানির বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ের গোলে হেরে শিরোপার খুব কাছে থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল আর্জেন্টিনাকে। এবারের বিশ্বকাপ ফাইনাল সামনে রেখে ফিরে আসছে পুরনো সেই স্মৃতি। তাছাড়া বিশ্বকাপের ফাইনাল পরিচালনার দায়িত্বে থাকা পোলিশ রেফারি সিজিমন মারচিনিয়াকের সাথে মেসির পূর্বের স্মৃতিও সুখকর নয়।
এক ফুটবল জীবনে যত ট্রফি জেতা সম্ভব এক বিশ্বকাপ বাদে সবই জিতে নিয়েছেন মেসি। পায়ের জাদুতে গোটা বিশ্বকে মোহাবিষ্ট করে রাখা ক্ষুদে জাদুকরের পালকে কেবল বিশ্বকাপটাই নেই। আগের বছরেই কোপা আমেরিকা জিতে জাতীয় দলের হয়ে শিরোপা খরা কাটিয়েছেন। সবেধন নীলমণি তাই এখন বিশ্বকাপ। আট বছর আগের ফাইনালে মারিও গোটজের গোলে স্বপ্নভঙ্গ হলেও নিজের শেষ বিশ্বকাপে প্রবলভাবে ফিরে এসেছেন মেসি।
এবারের বিশ্বকাপে নিজের সেরা ফর্মেই আছে মেসি। নিজে গোল করা কিংবা সতীর্থদের দিয়ে গোল করানোর পাশাপাশি আর্জেন্টিনার প্রতিটি আক্রমণই শুরু হচ্ছে তাঁর পা থেকে। পাঁচ গোলের পাশাপাশি তিন অ্যাসিস্ট করে দলকে ফাইনালের তোলার পাশাপাশি নিজে আছেন গোল্ডেন বল এবং গোল্ডেন বুট জেতার দৌড়ে।
ফাইনালের প্রতিপক্ষ ফ্রান্সের বিপক্ষে আর্জেন্টিনার শেষ স্মৃতিটা অবশ্য সুখকর নয়। চার বছর আগের রাশিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে এমবাপ্পেদের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে বিদায় নিতে হয়েছিল তাঁদের। এবারের ফাইনালের আগে দুর্দান্ত ফর্মে থাকলেও মেসির চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন রেফারি মারচিনিয়াক।
ক্লাব ফুটবলে নানা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছেন পোলিশ রেফারি। তাঁর দায়িত্ব পালন করা ম্যাচগুলোতে মেসির পারফরম্যান্স মোটেই মেসিসুলভ নয়। এই দুইয়ের প্রথম দেখা হয় ২০১৬-১৭ চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। সেবার দ্বিতীয় রাউন্ড এবং কোয়ার্টার ফাইনাল দুই ম্যাচের প্রথম লেগেই মেসিকে দু:স্বপ্ন উপহার দিয়েছিলেন মারচিনিয়াক।
দ্বিতীয় রাউন্ডে পিএসজির বিপক্ষে পার্ক দে প্রিন্সেসে সে রাতটা ভুলেই যেতে চাইবে বার্সেলোনা। সেদিন প্যারিসের দলটার কাছে ৪-০ গোলে হেরে ফিরতে হয়েছিল কাতালানদের। যদিও ঘরের মাঠে রূপকথার জন্ম দিয়ে সার্জি রবার্তোর গোলে ৬-১ গোলে জিতে ফিরে আসার এক গল্প লিখেছিল বার্সেলোনা।
কিন্তু বিধিবাম! কোয়ার্টার ফাইনালে জুভেন্টাসের বিপক্ষে প্রথম লেগেও মায়চ পরিচালনার দায়িত্ব পান মারচিনিয়াক। সেদিনও নিজের খেলাটা খেলতে পারেননি মেসি, বার্সাও হেরে যায় ৩-০ গোলে। ক্যাম্প ন্যূতেও লিখা হয়নি ফিরে আসার গল্প, কোয়ার্টার থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল বার্সেলোনাকে।
মারচিনিয়াকের দায়িত্ব পালন করা দুটো ম্যাচেই মেসি ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে। ম্যাচে ব্যবধান গড়ে দেয়া তো দূর, ন্যূনতম পার্থক্যও গড়ে দিতে পারেননি। তবে এবারের বিশ্বকাপে অবশ্য হারের লজ্জায় পড়তে হয়নি মেসিকে। দ্বিতীয় রাউন্ডে আর্জেন্টিনা বনাম অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের রেফারির দায়িত্বে ছিলেন মারচিনিয়াক। সেদিন মেসি এবং জুলিয়ান আলভারেজের গোলে ২-১ গোলের জয় পায় আলবিসেলেস্তেরা।
বিশ্বকাপ ফাইনালে লুসাইল স্টেডিয়ামে আরো একবার দেখা হচ্ছে এই দুজনের। মেসি নিশ্চিতভাবেই চাইবেন পুরনো দু:সহ স্মৃতি পেছনে ফেলে নিজের শেষ বিশ্বকাপটা জিতে ক্যারিয়ারের ইতি টানতে। পাশাপাশি মারচিনিয়াকে দায়িত্ব পালন করা ম্যাচে বাজে খেলার তকমাটা ঝেড়ে ফেলার তাগিদও নিশ্চিতভাবেই থাকবে মেসির মনে।