এবারের বিশ্বকাপটা মোটেই ভালো কাটেনি উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকোর। আগের টানা বিশ্বকাপে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেললেও এবারের বিশ্বকাপে কাটা পড়তে হয়েছে গ্রুপপর্ব থেকেই। শেষ ম্যাচে সৌদি আরবকে ২-০ গোলে হারানোর পরও কপাল পুড়েছে মেক্সিকানদের। হতাশাজনক এক বিশ্বকাপ মিশন শেষ করার পর এক ফুটবলারের স্ত্রীর বাজে মন্তব্যে আলোচনা ছড়াচ্ছে মেক্সিকো।
কাতার বিশ্বকাপে ভালো করার লক্ষ্যে বছরখানেক আগে কাঠখড় পুড়িয়েই সাবেক বার্সা এবং আর্জেন্টিনা কোচ টাটা মার্টিনোকে নিয়োগ দেয় মেক্সিকো। বিশ্বকাপের দলগুলোর মাঝে সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া কোচদের একজন ছিলেন তিনি। মেক্সিকান সমর্থকদের আশা ছিল টানা সাতবার দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বাদ পরার গেঁড়ো কাটিয়ে শেষ আটে খেলার।। কিন্তু সে আশায় গুড়েবালি, কোয়ার্টার ফাইনাল তো দূর গ্রুপপর্বই পেরোতে পারেননি মেক্সিকানরা। ফলে বিশ্বকাপ শেষ না হতেই বরখাস্ত হয়েছেন টাটা মার্টিনো।
এমনিতেই কাতার বিশ্বকাপ শুরুর আগে থেকেই নানা বিতর্ক ছড়াচ্ছে। নারী ও বিদেশি শ্রমিকদের সাথে আচরণ, সমকামিতার বিরুদ্ধে অবস্থান, স্টেডিয়ামে অ্যালকোহল বিক্রি বন্ধ সবমিলিয়ে কাতার বিশ্বকাপ নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই ইউরোপিয়ান দলগুলোর। এবার সেই বিতর্কে যেন ঘি ঢাললেন লিন্ডা ভিলানুয়েভা।
সম্পর্কে তিনি মেক্সিকান ফুটবলার জর্জ সানচেজের স্ত্রী। মেক্সিকোর বিশ্বকাপ মিশন শেষ হবার পরই নিজের ইনস্ট্রাগ্রাম প্রোফাইলে কাতারিদের প্রতি নিজের রাগ এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। ট্যাক্সিতে থাকা অবস্থাতেই কাতারি মানুষজনকে বাজে ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি লিখেন, ‘এই লোকগুলোর গোসল করতে কি ক্ষতি! সামান্য সুগন্ধি ব্যবহার করতে পারে কিংবা ডিওডোরেন্ট। উবারে ট্যাক্সিতে উঠার পর থেকেই তাঁদের শরীরের বাজে গন্ধ আসছে।’
তাঁর এই মন্তব্যের পর থেকেই সমালোচনা ছড়াচ্ছে বিশ্বজুড়ে। এমনিতেই দলের পাশাপাশি ব্যক্তিগতভাবেও বিশ্বকাপটা ভালো কাটেনি রাইটব্যাক জর্জ সানচেজের। অথচ ডাচ ক্লাব আয়াক্সে খেলা এই ফুটবলারের প্রতি আস্থা ছিল কোচ টাটা মার্টিনোর। এই মৌসুমের শুরুতে ফর্মে থাকা এই রাইটব্যাককে ৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে দলে ভিড়িয়েছিল ক্লাবটি। কিন্তু বিশ্বকাপে শুরু থেকেই হতাশ করেছেন তিনি।
আর্জেন্টিনার বিপক্ষে আক্রমণে অবদান রাখা তো দূর, রক্ষণে নিজের কাজটাও ঠিকভাবে করতে পারেননি। আলবিসেলেস্তেদের কাছে ২-০ গোলের হারের ফলে দ্বিতীয় রাউন্ডের পথটা কঠিন হয়ে পড়ে তাঁদের জন্য। শেষ ম্যাচে সে কারণেই একাদশে দেখা যায়নি তাঁকে, তাঁর জায়গায় মাঠে নামেন কেভিন আলভারেজ। এমন হতাশাজনক বিশ্বকাপের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী এহেন মন্তব্য নেটিজেনদের মাঝে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দিচ্ছে।
মেক্সিকো মূলত কাতারের রাজধানী দোহাতে না থেকে বরং নিবিবিলি অনুশীলন এবং মনোযোগ ধরে রাখতে শহরের বাইরে এক রিসোর্টে নিবাস গেড়েছিল। ফলে ফুটবলারদের সাথে আসা পরিবাররা মূলত উবার ব্যবহার করেই স্টেডিয়াম কিংবা অন্যান্য স্থানে যেতেন। সেখানেই কাতারিদের নিয়ে এমন বাজে মন্তব্য করেন লিন্ডা।
হতাশাজনক এক বিশ্বকাপ কাটিয়ে এমনিতেই মন ভালো নেই মেক্সিকানদের। এমন সময়ে ফুটবলারের স্ত্রীর এমন মন্তব্যে খানিকটা বিপাকে আছে মেক্সিকান ফুটবল ফেডারেশনও। বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় বইয়ে দেয়া এমন মন্তব্যের প্রেক্ষিতে উক্ত ফুটবলারের স্ত্রীর কাছে ব্যাখ্যা চায় কিনা কাতারি কতৃপক্ষ সেটাই এখন দেখার বিষয়।