অলৌকিক ‘বিগ বেন’

অ্যাশেজ ও হেডিংলি বললে প্রথমেই কী মনে পড়ে? ১৯৮১ সালের অ্যাশেজ সিরিজে স্যার ইয়ান টেরেন্স বোথাম নামের এক ইংরেজের অতিমানবীয় পারফরমেন্সকে। সেবারের অ্যাশেজে  হেডিংলিতে নিজেকে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন ইয়ান বোথাম। ৩৮ বছর পর আরেকটি অ্যাশেজে হেডিংলি দেখলো আরেক ইংরেজ ব্যাটসম্যানের দাপট। কী বলবেন একে?

রূপকথা? নাকি ডেজ্যাভ্যু? রূপকথা শব্দটা কি পারবে সেই ইনিংসের যথার্থতা প্রমাণ করতে? বেঞ্জামিন অ্যান্ড্রু স্টোকসের এক ইনিংসে ভর করে ইংল্যান্ডের এক প্রত্যাবর্তন কী রূপকথা? নাকি অলৌকিক কিছু? অতিপ্রাকৃত কিছু ভর করেছিল কি বেন স্টোকসের ওপর? হয়তো তাই। হয়তো নয়।

হয়তো রূপকথাকেও ছাপিয়ে গিয়েছে এটা। শেষ উইকেটে ৭৬ রানের জুটিতে- যেখানে জ্যাক লিচের অবদান ১ রান- স্টোকস ছাপিয়ে গিয়েছেন অতিমানবের সীমানাও বোধহয়। প্রথম ইনিংসে ৬৭ রানে অল-আউট হয়ে যাওয়া ইংল্যান্ড তাড়া করেছে ৩৬০ রান। অবিশ্বাস্য, অকল্পনীয়, অতিমানবীয়; বেন স্টোকসের ১৩৫ রানের ইনিংসটির পাশে যে বিশেষণই লাগানো হোক না কেনো, সেটা নিশ্চিতভাবেই কম পড়বে।

৩৫৯ রানের কঠিন লক্ষ্য তাড়ায় জো রুট ও জো ডেনলির ব্যাটে প্রতিরোধ গড়ে দারুণ কিছুর আভাস দিয়েছিল ইংল্যান্ড। ১৫ রানের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারানোর ধাক্কা সামলে তিন উইকেটে ১৫৬ রানে তৃতীয়দিন শেষ করেছিল ইংল্যান্ড। জেতার জন্য তারপরেও আরও ২০৩ রান দরকার ছিল তাদের। রূপকথা লেখার জন্য ইংল্যান্ড তাকিয়ে ছিল ৭৫ রানে অপরাজিত থাকা রুটের দিকে।

কিন্তু, দিনের শুরুতেই ৭৭ রানে ফিরলেন অধিনায়ক জো রুট। অধিনায়কের বিদায়ের পর পঞ্চম উইকেটে জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে ৮৬ রানের জুটিতে আবার আশা জাগান স্টোকস। বেয়ারস্টোর বিদায়ের পর জশ হ্যাজলউডের ছোবলে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট পড়লেও একপ্রান্ত আগলে রেখে চোয়ালবদ্ধ লড়াই চালিয়ে যান স্টোকস। নবম উইকেট পড়ার পরে ইংল্যান্ডের ১১ তম ব্যাটসম্যান জ্যাক লিচ যখন উইকেটে আসেন, তখন তাদের অ্যাশেজের আশা প্রায় ধূসর।

স্কোর ছিল ২৮৬-৯। জয়ের জন্য দরকার আরও ৭৩। তবু হাল ছাড়েননি স্টোকস। শেষ ব্যাটসম্যান জ্যাক লিচকে নিয়ে শেষ উইকেটে ৭৬ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচ বের করে নেন তিনি। এ জুটিতে ১৭ বল খেলা লিচের অবদান মাত্র এক রান! ১১ চার ও আট ছক্কায় ২১৯ বলে ১৩৫ রানে অপরাজিত থাকা স্টোকসের ব্যাট থেকেই শেষ পর্যন্ত এলো ‘ম্যাচ উইনিং শট’।

অসম্ভবকে জয় করলেন বেন স্টোকস। একা হাতেই লিখে ফেললেন ইতিহাস। ইংল্যান্ডকে এনে দিলেন জয়। ১৩৫ রান করে ইনিংসটাকে অমরত্ব এনে দিলেন স্টোকস। ম্যাচ জয়ের পরে হেডিংলির আকাশে তখন কেবল স্টোকসের বন্দনা। প্রতাপশালী অজিরা কেবল অসহায়ের মতো বেন স্টোকসের দিকে তাকিয়ে।

স্টোকসের ১৩৫ রানের এই ইনিংস সংখ্যার হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে হয়তো ‘ছোট’ লাগতে পারে, কিন্তু ক্রিকেটের সব থেকে মর্যাদার এই লড়াইয়ে এ যেন অমরত্ব লাভ করেছে।

২০১৯ সালে অ্যাশেজের তৃতীয় টেস্ট হেডিংলি লিডস, এবার চির অমরত্ব লাভ করলো বেন স্টোকসের ১৩৫ রানের মহাকাব্যিক ইনিংসে, ঠিক যেন ওই ১৯৮১ সালের মত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link