আমাদের একজন রফিক ছিলেন

আপনি কি জানেন টেস্টে বাংলাদেশের বা-হাতি স্পিনারদের মধ্যে সেঞ্চুরি আছে কার কার? সাকিব আল হাসান একজন পুরোদস্তুর অলরাউন্ডার। তার নামের পাশে রয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার রান। ১৪টা সেঞ্চুরির ৫টা এসেছে সাদা পোশাকে। কিন্তু একজন স্পিনার হয়েও টেস্টে শতকের দেখা পেয়েছিলেন মোহাম্মদ রফিক। বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনারদের দাপট শুরু হয় তার হাত ধরেই।

একটা সময়ে বাংলাদেশকে স্পিনারদের দল হিসেবেই আখ্যায়িত করা হত। বিশেষ করে বা-হাতি টাইগার স্পিনারদের সমীহ করত গোটা বিশ্ব। যার মূল কারণ ছিলেন মোহাম্মদ রফিক। তিনিই প্রতিপক্ষের মনে সেই ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করেছিলেন। তিনিই গোটা একটা প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন বা-হাতের ঘূর্ণি জাদুকর হতে।

তার দেখানো পথ ধরে পরবর্তীতে আবদুর রাজ্জাক, সাকিব আল হাসানরা ছড়ি ঘুড়িয়েছেন ক্রিকেট বিশ্বে। এরপরও তো কত বা-হাতি স্পিনার গায়ে জড়িয়েছিলেন বাংলাদেশের জার্সি। কিন্তু কেউ আসলে মোহাম্মদ রফিকের মত ততটাও কার্যকর ছিলেন না। এক সাকিব আল হাসান ছিলেন বলে ধামাচাপা পড়েছে সবকিছু।

কিন্তু সাকিবের যে বিদায়ের ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেছে। তাইতো বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকদের মনে একটু হলেও দুশ্চিন্তা উঁকি দিচ্ছে। সময় যত গড়াবে ততই হয়ত তা আরও ঘনিভূত হয়ে, প্রকট আকার ধারণ করবে। কেননা সাকিব তো দলের ভারসাম্য বজায় রাখতেন। তিনি দলে ছিলেন বলে টিম ম্যানেজমেন্টের একাদশ সাজাতে খুব একটা বেগ পোহাতে হয়নি।

কিন্তু আসন্ন দিনগুলোতে হবে। কেননা বাংলাদেশের বর্তমান পাইপলাইনে থাকা বা-হাতি স্পিনারদের অধিকাংশই চলনসই ব্যাটিং করতে জানেন না। অথচ প্রায় দুই দশক আগে সে কাজটা দিব্যি করে এসেছেন মোহাম্মদ রফিক। তিনি সেই সময়ের পুচকে বাংলাদেশ দলকে খানিক ভরসা জোগাতেন। ব্যাট হাতে দারুণ সব ইনিংস তিনি খেলেছেন ক্যারিয়ারে।

এর মধ্যে ২০০৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেলা তার ইনিংসটি উল্লেখযোগ্য বটে। ক্যারিবিয়ানদের মাটিতে টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৯ নম্বর ব্যাটার হিসেবে ব্যাটিং করতে এসেছিলেন মোহাম্মদ রফিক। তারপর অনবদ্য এক সেঞ্চুরি হাকিয়ে প্রমাণ করেছিলেন তিনি ব্যাটিংটাও করতে পারেন। ১১১ রানে থেমেছিলেন সেদিন তিনি। বাইশ গজে টিকে ছিলেন প্রায় ৪ ঘন্টা।

দ্বিতীয় ইনিংসেও প্রায় ৭০ বল খেলেছিলেন তিনি। সেদিনটাই হয়ত বোলার রফিকের ব্যাটার হয়ে ওঠার সবচেয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছিল। যদিও এর আগে পরে আরও বেশ কিছু ভাল ইনিংস উপহার তিনি দিয়েছেন বাংলাদেশের জার্সি গায়ে। টেস্টে ৪টি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে তার। ওয়ানডেতে করেছেন ২টি।

১৯৯৮ সালে মেকশিফট ওপেনার হিসেবে একবার খেলেছিলেন তিনি। কোকা-কোলা ট্রাইঙ্গুলার সিরিজে কেনিয়ার বিপক্ষে ৭৭ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস উপহার দিয়েছিলেন মোহাম্মদ রফিক। একই রকম ঘটনার অবতাড়না ঘটিয়েছিলেন ২০০৫ সালেও। সেবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওপেনিং করতে নেমেছিলেন রফিক।

তার ৬৬ বলে ৭২ রানের ইনিংসের কল্যাণে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতেছিল ৮ উইকেট ব্যবধানে। ঠিক এতটাই আস্থাভাজন ছিলেন মোহাম্মদ রফিক। তাকে পিঞ্চ হিটিংয়ের জন্যে বাংলাদেশ দল ওপেনিং করতেও পাঠিয়েছে বহুবার। কিন্তু বর্তমান সময়ে এমন একজন বা-হাতি স্পিনার খুঁজে পাওয়া দায়।

টেস্ট ক্রিকেটে তাইজুল ইসলাম ইনিংস দীর্ঘায়িত করবার কাজটা অবশ্য করতে পারেন। কিন্তু সাদা বলের ক্রিকেটে দলের ভারসাম্য রক্ষা করবে- এমন স্পিনারের অভাব রয়েছে বটে। সেদিক থেকে বাংলাদেশ দলকে ভুগতে হবে হয়ত অদূর ভবিষ্যতে।

তবে তেমন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের উপায় হয়ত টাইগার টিম ম্যানেজমেন্ট খুঁজতে চাইবে। সে দিক থেকে খুব বেশি ঝুঁকি নিতে হবে। তবে তা অবশ্যই হতে হবে ‘ক্যালকুলিটিভ’। কিন্তু, ক্যালকুলিটিভ রিস্ক নেওয়া দূরে থাক, বাংলাদেশ তো ডান-বাম ট্যাবু থেকেই বেড়িয়ে আসতে পারে না। সেদিক বিবেচনায় আসছে দিনগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাকফুটেই থাকবে বোধহয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link