আক্ষেপের অভিযুক্ত কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে

রান মেশিন বলতে যা বোঝায়, ২০০৭ বিশ্বকাপের আগে তাই ছিলেন তিনি। এমনকি আজও তাঁর ওই সময়ের গড় ওপেনারদের জন্য ঈর্ষণীয় ব্যাপার। তবে, সেই পরিসংখ্যান আজকের দিনে সমালোচিত হয়। অভিযুক্ত হয়, বেছে বেছে ছোট দলগুলোর বিপক্ষেই কেবল বড় ইনিংস গুলো খেলার দায়ে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট মানেই তো এক রাশ আক্ষেপের গল্প। প্রতিভা আসে আর সেই প্রতিভা বিসর্জন দেওয়া হয় – এই যেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের নিয়মিত দৃশ্য। আর সেই নিয়মিত দৃশ্যের সবচেয়ে বড় উদাহরণ যদি খোঁজা হয়, তাহলে হয়তো সবার আগেই আসবে শাহরিয়ার নাফিসের নাম। ২০০৭ সালের সেই একটা বিশ্বকাপের বাজে পারফরম্যান্সই প্রায় ফুলস্টপ বসিয়ে দিয়েছিল যার ক্যারিয়ারে।

রান মেশিন বলতে যা বোঝায়, ২০০৭ বিশ্বকাপের আগে তাই ছিলেন তিনি। এমনকি আজও তাঁর ওই সময়ের গড় ওপেনারদের জন্য ঈর্ষণীয় ব্যাপার। তবে, সেই পরিসংখ্যান আজকের দিনে সমালোচিত হয়। অভিযুক্ত হয়, বেছে বেছে ছোট দলগুলোর বিপক্ষেই কেবল বড় ইনিংস গুলো খেলার দায়ে।

এই একটা অভিযোগ গোটা ক্যারিয়ার জুড়েই শাহরিয়ার নাফিসকে বয়ে বেড়াতে হয়েছে। কিংবা খেলোয়াড়ী জীবন শেষ করেও সেই ‘গন্ধ’ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখতে পারেননি এই ওপেনার। তা সেই অভিযোগটা কি?

অভিযোগটা হল, দেশের ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা এই ব্যাটার নাকি তাঁর ক্যারিয়ারের অধিকাংশ বড় ইনিংস খেলেছেন ছোট দলগুলোর বিপক্ষে। আরও স্পষ্ট করে বললে জিম্বাবুয়ের ওপর। তা, তিনি যতই ফতুল্লা টেস্টে প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়ান বোলিং লাইন আপের বিপক্ষে নান্দনিক এক সেঞ্চুরি করুন না কেন।

আসলে, সমালোচকদেরও তেমন একটা দেশ এখানে নেই। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়কের চারটা সেঞ্চুরি আর ১৩ টি হাফ সেঞ্চুরি। এর মধ্যে তিনটি সেঞ্চুরি আর তিনটি হাফ সেঞ্চুরিই তিনি করেছেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। এছাড়া আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে তিনি ও কেনিয়ার বিপক্ষে তিনটি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি।

ফলে, সত্যিকার অর্থে শাহরিয়ার নাফিসের নিজের পক্ষে পরিসংখ্যান বলতে তেমন কিছু নেই। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ফতুল্লার ওই টেস্ট সেঞ্চুরি ছাড়াও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডেতে তিনটা হাফ সেঞ্চুরি আছে তাঁর। সেটাও সেই বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান বোলিং লাইন আপকে পিটিয়ে। সেই লাইন আপে ব্রেট লি, শেন ওয়ার্ন, গ্লেন ম্যাকগ্রা, জেসন গিলেস্পি, অ্যান্ডি বিকেল, স্টুয়ার্ট ম্যাকগিলরা ছিলেন।

তবে, ২০০৭ বিশ্বকাপের পর বাদ পড়ার যন্ত্রনাটা সইতে পারেননি নাফিস। তখন তিনি দলের সহ-অধিনায়ক। হাবিবুল বাশার সুমন ছিলেন বিদায়ী। নাফিসকে গড়েই তোলা হচ্ছিল অধিনায়ক হিসেবে। কিন্তু, বিশ্বকাপের আগেই একটা টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়কত্বও করে ফেলেছেন নাফিস।

কিন্তু, ওই বিশ্বকাপটাই সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিল। নাফিসের ভাঙা হৃদয় নিয়ে চলে গেলেন ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে (আইসিএল)। নিষিদ্ধ একটা ক্রিকেট লিগ, অন্ধকার এক জগৎ। আইসিসির সাথে জটিলতা, বিসিবির সাথে জটিলতা – সব কিছু একটা সময় থেমে গিয়েছিল। এরপর আবারও জাতীয় দলে ফিরেছিলেন নাফিস। তবে, তখন আর তাঁর ব্যাটে আগের সেই জাদু ছিল না। মাঝের বিরতিটা না আসলে ‘ইউ নেভার নো’ শাহরিয়ার নাফিসের আকাশটা হয়তো আরো বড়ই হত।

সর্বশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন ২০১৩ সালে। তখন তাঁর বয়স মাত্র ২৮ বছর। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি সব মিলিয়ে সাড়ে তিন হাজার রান করেন। সেখানে ছিল পাঁচটি সেঞ্চুরি ও ২০ টি হাফ সেঞ্চুরি। সর্বশেষ ২০২১ সালেই সব ধরণের ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়ে বিসিবিতে কর্মরত আছেন। সব ছাপিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফতুল্লা টেস্টের সেই ১৩৮ রানের ইনিংসটাই যেন হয়ে উঠেছে তাঁর ক্যারিয়ারের হাইলাইটস। ২০০৬ সালের সেই এপ্রিলের স্মৃতি ফিরলে যেন কেবলই বাড়ে আক্ষেপ।

Get real time updates directly on you device, subscribe now.

আরও পড়ুন
মন্তব্যসমূহ
Loading...