মোমেন্টস টু রিমেম্বার

একেকটা বছর আসে। ক্যালেন্ডারের পাতা ওলট-পালট হয়। দেখতে দেখতে বছরটা ফুরিয়েও যায়। তবে প্রতিটা বছরই আমাদের মাঝে রয়ে যায় কিছু স্মৃতি হয়ে, কয়েকটা ছবি হয়ে। যে ছবিগুলো আমাদের মনে গেঁথে থাকে অনেক লম্বা সময়।

ক্রিকেট মাঠেও একেকটা বছর অনেক খেলায় মাঠে নামে বাংলাদেশ। অনেক সুখস্মৃতি যেমন থাকে, তেমনি দুঃখের গল্পও নেহায়েৎ কম নয়। মাঠের খেলায় জয়-পরাজয় ছাপিয়ে বড় হয়ে ওঠে কিছু মুহূর্ত। কয়েকটা ছবির ফ্রেম। ২০২২ সালে মনে গেঁথে যাওয়া বাংলাদেশ ক্রিকেটের কিছু মুহূর্তই এক করা হয়েছে এখানে।

  • সোনালী রোদে সেনানীর হাসি

ফ্রেমে বাধাই করে রাখার মত একটা মুহূর্ত বছরের শুরুতেই উপহার দিয়েছিলেন এবাদত হোসেন। শীতের সকালে একটা নতুন সূর্য হয়ে উঁকি দিয়েছিলেন এই পেসার। একটা টেস্ট ম্যাচ দিয়ে বনে গিয়েছিলেন গোটা বাংলাদেশের নায়ক। মাউন্ড মঙ্গানুই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় উইকেট নেয়া এবাদতের স্যালুটের সেই ছবিটি বাংলাদেশের ক্রিকেট মনে রাখবে অনেক কাল।

  • আফিফ-মিরাজ জুটি

একটা পাহাড়সম পথ পাড়ি দিয়ে এসেছেন দুজনে। ক্লান্ত শরীরে ফিরে আসছেন ড্রেসিং রুমের দিকে। তবুও মুখে হাসি, মিরাজের কাঁধে ভর দিয়ে এগিয়ে আসছেন আফিফ। সেই ম্যাচে আসলে গোটা বাংলাদেশের প্রত্যাশার চাপ নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও আফিফ হোসেন।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেদিন ১৭৪ রানের জুটি গড়ে বাংলাদেশকে জিতিয়েছিলেন এই দুজন। আট নাম্বারে ব্যাট করতে নেমে মিরাজ করেছিলেন ৮১ রান। আরেক প্রান্তে আফিফ হোসেনও অপরাজিত ছিলেন ৯৩ রানে।

  • ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচটার আগেই আইপিএল থেকে ডাক এসেছিল। গুঞ্জন ছিল সিরিজ শেষ না করেই আইপিএলে যোগ দিবেন তাসকিন আহমেদ। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের লাল-সবুজ জার্সিটাই বেঁছে নিয়েছিলেন তিনি।

তবে সেঞ্চুরিয়নে সেদিন এক অন্য তাসকিন। সেই তাসকিনকে থামানোর সাধ্য কারো নেই। তবে মনে গেঁথে আছে পাঁচ উইকেট পেয়েই তাসকিনের সেই দৌড়। তাসকিনের সেই পাঁচ উইকেট ম্যাচ জিতিয়েছিল বাংলাদেশকে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে প্রথমবারের মত সিরিজও জিতিয়েছিল বাংলাদেশকে।

  • দ্য সাকিব মোমেন্ট

সাকিবের বলটা অফ সাইডে ঠেলে দিয়ে একটা সিঙ্গেল নিয়ে নিতে চাইছিলেন শেন উইলিয়ামস। আর তখনই সাকিব তাঁর ম্যাজিকটা দেখালেন। দৌড়ে গিয়ে বলটা হাতে নিলেন, বাতাসেই নিজেকে ঘুরিয়ে স্ট্যাম্পে ডিরেক্ট থ্রো। সবচেয়ে ভয়ংকর হয়ে ওঠা উইলিয়ামস আউট। ম্যাচ বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রনে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেই ম্যাচে মাত্র তিন রানের জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। ম্যাচ গড়িয়েছিল শেষ বল অবধি। তবে রোমাঞ্চকর সেই ম্যাচে সাকিব একটা মুহূর্তেই ম্যাচটা বাংলাদেশের করে ফেলেছিলেন।

  • থ্যাংকস ট্যু অলমাইটি

 

ইনিংসের শেষ বলটা আলতো করে ঠেলে দিয়েই সিঙ্গেলের জন দৌড় দিলেন মিরাজ। রানটা হল, ওয়ানডে ফরম্যাটে মিরাজের প্রথম সেঞ্চুরিও হল। শূন্যে একটা ঘুসি মারলেন, তারপর হেলমেটটা খুলে দুহাত উঁচিয়ে ধরলেন। এরপরই মাথানত করলেন সৃষ্টিকর্তার সামনে। থ্যাংকস টু অলমাইটি।

বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা ইনিংস এলো মিরাজের ব্যাট থেকে। হয়তো দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে রোমাঞ্চ জাগানিয়া সেঞ্চুরিও। আট নাম্বারে নেমে মিরাজের সেই ইনিংস, মিরাজের সেই উদযাপন শুধু এই বছর না ক্রিকেট ইতিহাসেরই অন্যতম সুন্দর মুহূর্ত।

লেখক পরিচিতি

আমার ডায়েরির প্রতিটা পৃষ্ঠাই আমার বাইশ গজ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Share via
Copy link