শরিফুল ইসলামের ওভারের দ্বিতীয় বলটায় পুল করলেন। বল গিয়ে আছড়ে পড়লো গ্যালারিতে। শটটা খেলার পরেই যেন একটা আত্মবিশ্বাস ভর করলো। রানের জন্যও দৌড়ালেন না। বলটা ব্যাটে আঘাত করার পর যে শব্দটা হয়েছিল তাতেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল এটা বিশাল এক ছক্কা। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতও রানের জন্য দৌড়ালেন না। ওপর প্রান্তে থাকা ব্যাটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও ব্যাটে ঘুষি দিয়ে শটটার প্রশংসা করতে ভুল করেননি।
তবে শরিফুল ইসলাম হয়তো তখনো জানেন না কী একটা ঝড় বইতে চলেছে। মোসাদ্দেক নামের ঝড়। ওভারের প্রথম বলটায় বাউন্ডারি খেয়েছেন। দ্বিতীয় ওভারটায় এমন একটা শটে ছয়। এরপরের বলে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত যেন আরো ক্লাসিক আরো এলিগেন্ট। সামনের পায়ের উপর ভর করে কাভারের উপর দিয়ে বিশাল এক ছক্কা। ওভারের চতুর্থ বলটায়ও প্রায় একইরকম চিত্রনাট্য। কাভার অঞ্চলে বলটা মাটিতে পড়ে এবার সীমানা ছাড়া হলো।
মোসাদ্দেকের এমন ব্যাটিং দেখে যেকোন বোলারেরই ভরকে যাবার কথা। তবে শরিফুল ইসলাম তবুও পঞ্চম বলটায় ফিরে আসতে চেয়েছিলেন। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা বলটায় একটা অ্যাঙ্গেল তৈরি করার চেষ্টা করলেন। বলও ভিতরের দিকে ঢুকলো। তবে এই মোসাদ্দেককে থামায় কার সাধ্য। তিনিও পিছনের পা দিয়ে একটু জায়গা করে নিয়ে আবার উড়িয়ে মারলেন।
এরপর আর শরিফুল কোথায় বল ফেলবেন, কী করবেন। প্রথম পাঁচ বলের পাচটাতেই বাউন্ডারি খেয়ে হতাশ শরিফুল শেষ বলটা করলেন। এবার অবশ্য বলটা সীমানা ছাড়া করতেন পারলেন না মোসাদ্দেক। ব্যাটের সাথে বলটা ঠিকমত কানেক্ট হলো না। এতেই যেন একটা আক্ষেপ ফুটে উঠলো তাঁর শরীরি ভাষায়। এই বলটায়ও বাউন্ডারি বের করতে না পারার একটা ক্ষোভ প্রকাশ করলেন ব্যাটে ঘুষি মেরেই।
একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচে যেভাবে খেলতে হয় সেভাবেই খেললেন তিনি। একটা বলও ছাড় না দেয়ার মানসিকতা। গতকালকের ম্যাচেও এমনই ব্যাটিং করেছলেন তিনি। তবে আজ যেন সবকিছুর উর্ধ্বে তিনি। ব্যাট হাতে সব বলই যেন সীমানা ছাড়া করা চাই।
শেষ পর্যন্ত মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত আজ ব্যাটিং করেছেন প্রায় ৪০০ ছুই ছুই স্ট্রাইকরেটে। ১৩ বল খেলে তাঁর ব্যাট থেকে এসেছে ৪৮ রান। ইনিংসটি সাজিয়েছেন তিনটি ৬ ও চারটি ৪ দিয়ে। তাঁর ব্যাটে চড়েই ২১৯ রানের বিশাল স্কোর করতে পেরেছে লাল দল।
মোসাদ্দেক হোসেন অবশ্য এই কাজটা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও করে দেখিয়েছিলেন। ২০১৯ বিশ্বকাপের আগে সেই ত্রিদেশীয় সিরিজটার কথা মনে পড়ে? সেই সিরিজের ফাইনালেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে এমনই এক ঝড়ো ইনিংস খেলেছিলেন তিনি। তাঁর ব্যাটে চড়েই বাংলাদেশ প্রথমবারের মত কোন বহুজাতিক টুর্নামেন্ট জিতেছিল। সেদিন ২৭ বলে ৫২ রানের অপরাজিত ইনিংস এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে।
এরপর অবশ্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে খুব বেশি ম্যাচ খেলেননি তিনি। তবে সুযোগ পেলে সেগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে তাঁর বোলিংটাও ব্যবহার করছে বাংলাদেশ দল।
ফলে এশিয়া কাপে সাকিবের দল বড় অস্ত্রই হতে পারেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ব্যাট হাতে ঝড়ো ইনিংস খেলার ক্ষমতা যে তাঁর আছে সেটা তো প্রমাণ করলেনই। এছাড়া প্রয়োজন হলে কয়েক ওভার বোলিংও তিনি করতে পারেন। সবমিলিয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বাংলাদেশের জন্য একটা প্যাকেজ হতে পারেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।